প্রশ্নবিদ্ধ পথে হাঁটছেন বিসিবি নির্বাচকরা

সেই দল থেকে বাদ পড়েছেন রনি তালুকদার ও ইয়াসির আলী চৌধুরি রাব্বি। তাদের জায়গায় দলে ঢুকেছেন গেল ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে দূর্দান্ত পারফরম করা আফিফ হোসেন ধ্রুব ও মোহাম্মদ নাঈম।

খেলোয়াড় আসবে, খেলোয়াড় যাবে। সেটাই স্বাভাবিক, সেটাই তো নিয়ম। তবে পরখ করার পদ্ধতি প্রশ্নবিদ্ধ। ঠিক কি করতে চাইছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের নির্বাচকরা, সেটা বোঝা যেন রীতিমত বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের রহস্য ভেদ করবার মতই। আজ দলের সাথে একজন আছেন, তো কালকে তার বদলি ঢুকে যাবেন অন্য কেউ। কিন্তু সবাই কি নিজেদের প্রমাণের সুযোগটা পাচ্ছে?

একটু খোলাসা করেই বলা যাক। আফগানিস্তানের সাথে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ ঈদের পর। চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিতব্য সেই সিরিজের জন্যে দল ঘোষণা করেছে টাইগার নির্বাচকরা। সেই দল থেকে বাদ পড়েছেন রনি তালুকদার ও ইয়াসির আলী চৌধুরি রাব্বি। তাদের জায়গায় দলে ঢুকেছেন গেল ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে দূর্দান্ত পারফরম করা আফিফ হোসেন ধ্রুব ও মোহাম্মদ নাঈম।

সহজ সমীকরণে ভাল পারফরমেন্সের পুরষ্কার হিসেবেই জাতীয় দলে আবারও ফিরেছেন নাঈম ও আফিফ। সেটা নিয়ে প্রশ্ন তোলা অবান্তর। কিন্তু ঠিক কিসের প্রেক্ষিতে রনি ও ইয়াসির বাদ পড়লেন সেটাই যেন রহস্যে ঘেরা। সর্বশেষ আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে চেমসফোর্ডে হওয়া ওয়ানডে সিরিজে এই দুইজনই ছিলেন স্কোয়াডে।

রনি তবু একটা ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে ইয়াসির আলী সময় কাটিয়েছেন ডাগআউটে বসে। আপাতদৃষ্টিতে রনি তালুকদারের ৩২ বছর বয়সে হওয়া ওয়ানডে অভিষেক হওয়ার সম্ভাবনাই ছিল না সেই সিরিজে। কেননা সাকিব আল হাসানের ইনজুরিই তাকে সুযোগটি করে দিয়েছিল।

অন্যদিকে ইয়াসির আলী চৌধুরী শেষ ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে। সেখানে দুই ম্যাচে খেলার সুযোগ তিনি পেয়েছিলেন। তবে আশার প্রতিফলন ঘটাতে পারেননি। যদিও ইয়াসিরের খেলা এক ম্যাচে কোন ফলাফলই আসেনি। এরপরের চারটি ওয়ানডে ম্যাচে দলের সাথে থেকেও তিনি ছিলেন না একাদশে।

হুট করেই আবার ঘরের মাঠে আফগানদের বিপক্ষে সিরিজে এই দুইজনই বাদ পড়ে গেলেন। ঠিক এখানটায় যেন সাংঘর্ষিক হয়ে যায় নির্বাচকদের সিদ্ধান্ত। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নুর দিকেই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হয় অধিকাংশ সময়ে। কেননা নির্বাচক প্যানেলের তিনিই তো মুখ্য।

নাজমুল হোসেন শান্ত ও লিটন কুমার দাসের মত খেলোয়াড়দের উপর আস্থা রেখে তাদেরকে লাগাতার সুযোগ দিয়ে গেছেন নির্বাচকরা। সেই আস্থার সুফল তো অবশেষে পেতে শুরু করেছে সবাই। সেই আস্থা যেন রাখতে পারছেন না নির্বাচকরা আর কারো উপরই। তবে কারো না কারো উপর তো ভরসা করতেই হবে তাদেরকে।

তাছাড়া বিশ্বকাপের বছরে যেন দিশেহারা অবস্থা। কাকে রেখে কাকে নিয়ে যাওয়া হবে বিশ্বকাপে, সে চিন্তায় যেন ঘুম হারাম নির্বাচকদের। এমন সময়ে তাই কোন এক সিদ্ধান্তেই যেন সন্তুষ্ট হতে পারছেন না নির্বাচকরা। অন্তত তাদের গতিবিধি তেমনটাই ইঙ্গিত দিচ্ছে।

যদিও খেলোয়াড় নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা সাবেক খেলোয়াড় আবদুর রাজ্জাক বলছেন ভিন্ন কথা। জাতীয় দলের জন্যে বিবেচনায় থাকা খেলোয়াড়দের সিস্টেমের মধ্যে রাখতেই এমন অদলবদল করে খেলোয়াড়দের রাখা হচ্ছে জাতীয় দলের সাথে। যাতে করে তারা নিজেদেরকে বিচ্ছিন্ন না মনে করেন জাতীয় দল থেকে।

এই প্রক্রিয়াও যে একেবারে অযোগ্য, তা বলবার সুযোগ নেই। তরুণ খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি বেশ ফলপ্রসূ। জাতীয় দলের পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে অন্তত সহয়তা করবে নবাগতদের। কিন্তু ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের স্বাদ পেয়ে যাওয়া খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে বিপরীত ফলাফলও বয়ে নিয়ে আসতে পারে।

তাছাড়া বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপের আর খুব বেশি সময় বাকি নেই। এরমধ্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবার সময় অন্তত হাতে আছে। তবে পরীক্ষা দেওয়ার সেই সুযোগটা তো করে দেওয়া প্রয়োজন। এছাড়াও টিম কম্বিনেশনটাও ঠিক করে ফেলা দরকার। সেদিকগুলো নিয়েও নিশ্চয়ই ভাবছেন নির্বাচকরা।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...