ভারত আর বাংলাদেশের ক্রিকেটের উল্টোমুখী গ্রাফ!
ঘটনাটা মনে পড়তে থাকে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) বিভিন্ন দলের বিভিন্ন কার্যকলাপের মাধ্যমে। যেমন ধরেন আইপিএলে এখন যারা কোচ, তারা মোটামোটি সবাই দুর্দান্ত সফল অধিনায়ক প্লাস যে কোন সর্বকালের সেরা একাদশে জায়গা পাওয়ার মতো ক্রিকেটার।
- ব্রেন্ডন ম্যাককালাম
- অনীল কুম্বলে
- রিকি পন্টিং
- স্টিফেন ফ্লেমিং
- মাহেলা জয়াবর্ধনে
- কুমার সাঙ্গাকারা আছেন একটা রোলে।
সাঙ্গাকারার পয়েন্ট দিয়েই শুরু করি। রাজস্থান রয়্যালসের কোচ পদটা আসলে ফাঁকা। টিম ম্যানেজমেন্ট সাঙ্গাকে নিয়ে কাজ চালিয়ে নিচ্ছে। তরুণ এক আইপিএল প্রুভেন ক্রিকেটারকে অধিনায়কত্ব দিয়েছে। সাঞ্জু আর সাঙ্গার কমিউনিকেশন দেখবেন। দুর্দান্ত একটা বন্ডিং যতটা টেলিভিশনে দেখা যায়।
সাঞ্জুই হয়তো ভারতের এই জাতীয় দলে ঢুকতে, মানে নিয়মিত খেলার দিকটায় কঠিন হয়ে যাবে। যেহেতু পান্ত সেটেলড।
এরপর ঋষাভ পান্তের দিল্লী ক্যাপিটালস, সেইম। রিকি পন্টিং প্রথম দিন এসেই বলে দিয়েছেন, দিল্লী দলে শুধু কমিটেডরা খেলবেন। ট্যাকটিকস বা বাদবাকি পরের বিষয়।
ভারত এশিয়া কাপে এবার চমক দিতে পারে হারশাল, সাঞ্জু, গিল, শ্রেয়াসদের পাঠিয়ে। দেখা যাবে ওই দলই চ্যাম্পিয়ন হবে সাড়ে তিনশো রান করবে, প্রতিপক্ষকে ২০০ এর ভেতর অলআউট করবে। যদি না পাকিস্তান অসাধারণ কিছু করে ফেলে।
এরা এখন বিশ্বসেরাদের অধীনে সর্বোচ্চ ম্যাচ স্কিল, ম্যাচ সিচুয়েশন রিডিং, ম্যাচ কাটাছেড়া করছেন প্রতিনিয়ত। হারুক, সাঞ্জু এক ম্যাচ হারসে। ঋষাভ পান্ত হারবে। কোহলিও হারবে। কিন্তু যেই শিক্ষা পাচ্ছে সেটা দুর্দান্ত।
আমার ধারণা বাংলাদেশ যদি ৯৬’র শ্রীলঙ্কা বা ৮৩’র ভারতের মতো রুপকথার মতো কিছু না করে, তাহলে বাংলাদেশের সেরা ব্যাচ, সেরা একাদশ, সেরা কম্বিনেশন ক্রিকেট খেলে ফেলেছে।
পেস অ্যাটাক দিয়ে শুরু করি, মাশরাফি লিডে, তাসকিন মিডল ওভারে, মুস্তাফিজ ডেথ ওভারে। কী কম্বো! স্পিনে আরাফাত সানি-সাকিব! রিয়াদের ৩-৪ ওভার।
ব্যাটিংয়ে তামিম-সৌম্য। ব্যাকআপে লিটন দাস। সাব্বির দুর্দান্ত ফর্মে। রিয়াদ নিয়মিত রান পাচ্ছে। ব্যাকআপে মোসাদ্দেক সৈকত। মুশফিকের ইনিংসগুলো ম্যাচ ঘুরাচ্ছে। আর আনপ্রেডিক্টেবল সাকিব তো আছেই। আজ ১৬ বলে ৪৪ তো কাল ম্যাচ ঘুরানো ফিফটি পরশু ৩৫ রান বাকি থাকতে আউট হয়ে যাওয়া।
দেখেন তামিম ইকবালের এই ব্যাটিংয়ের সমালোচনা করি, করবোও। কিন্তু সৌম্য যদি নিজের ২০১৫ এর ফ্লোতে ব্যাট করতেন, তাহলে তামিমকে এতো ধীর মনে হতো না। ৭০-৮০ এই ঘরানার স্ট্রাইক রেটে রোহিতও খেলে প্রথম ২০ ওভার। কিন্তু ওর রিকভারি দুর্দান্ত।
লিটন যদি ব্যাকআপ হিসেবে রোটেশনে হেলদি কম্পিটিশন ক্রিয়েট করতেন! বাংলাদেশের হয়তো ওয়ান ডাউন নিয়েও ভাবতে হতো না।
মোসাদ্দেক যদি রিয়াদের ট্রু উত্তরসুরি হিসেবে দাঁড়াতেন, পিঠে ব্যথা নিয়ে খেলতে হতো না রিয়াদকে। সাব্বির যদি লোয়ার অর্ডারে নির্ভরতা দিতেন, মুশি-সাকিব থাকতেন মিডল ওভারে আরো নির্ভার।
এই ব্যাচটা তেমন কিছু জিতলো না। বরং দেখেন, মুস্তাফিজ ধার হারিয়েছে, সৌম্য ‘never got back to 2015 days’, লিটন হয়ে গেছেন ধুমকেতু বা আরেক আশরাফুল, সৈকত ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আর উঠে দাঁড়াতে পারেননি ক্রিকেটের মাঠে, সাব্বিরের কাছে ক্রিকেটের চেয়ে বড় হয়ে উঠলো তারকাখ্যাতি ও আনুষঙ্গিক মৌজ!
বাংলাদেশের একটা সাধারণ চাকরিজীবি যা যা ডিজায়ার করে, ফ্ল্যাট, গাড়ি, সম্মান! ওই পর্যন্তই। কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার পর সাতক্ষীরায় মানুষের ঢল থেকে শুরু করে আমি জাতীয় দলের ক্রিকেটার এই পরিচয় বড় হয়ে ওঠা!
আমার মনে যতই হাসাহাসি করি না করি! একমাত্র পঞ্চপাণ্ডবই ক্যারিয়ার-তারকাখ্যাতির মধ্যে ফাইনলাইনটা ক্রিয়েট করতে পেরেছে। যে কারণে এই পাঁচজন ক্রিকেট থেকে সরেনি কখনো। ক্রিকেটই ধ্যানজ্ঞান। সে সফল হোক আর না হোক।
দিনশেষে বিশ্বকাপ জয় বড় কথা না, কারণ দক্ষিণ আফ্রিকা প্রায় তিনটা বিশ্বকাপে বোলারদের তালিকায় সেরা তিন, ব্যাটসম্যানদের তালিকায় সেরা তিন দখল করে খেলে এসেও বিশ্বকাপটা জিততে পারেনি।
আমরা এখন তাকিয়ে শুধু দেখবো, আমাদের আসবে আফিফ-শান্ত। আবার সেই লুপ। আবার সেই চক্রাকার একটা প্যাটার্ন। আর ওদের বেঞ্চে বসবে সাঞ্জু স্যামসন।
আমরা প্রায়শই হতাশ হই! যদি একটা কোহলি থাকতো! একটা বাবর! আসলে আমাদের দিপক হুডাও নেই, শ্রেয়াস আইয়ারও নেই। আসার কোনো লক্ষণও নেই!