প্রোটিয়া ক্রিকেটে অশনি সংকেত!
দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রীড়ামন্ত্রীর দাবি হল, নতুন এই কাঠামোতে কাউন্সিলের সভাপতিরা বিশ্বাস রাখতে পারছেন না। বরং বিষয়টার তাঁরা ভুল ব্যাখা করছেন। এই কারণে সংখ্যগরিষ্টতা আসছে না। মন্ত্রনালয়ের ক্ষোভের জায়গা এটাই। তাই দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটে সরকার সরাসরি হস্তক্ষেপ করবে বলে বোঝা যাচ্ছে।
প্রোটিয়া ক্রিকেটের সুদিন হারিয়েছে। মাঠ কিংবা মাঠের বাইরে – সব জায়গাতেই একই রকম দৃশ্যপট। গেলো বছর এপিলে হঠাৎ করেই দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে খবর আসে – দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট প্রশাসনে তাঁদের সরকার হস্তক্ষেপ করেছে, তাই যেকোনো সময় নিষিদ্ধ হতে পারে ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকা (সিএসএ)। এবার আবারো একই রকম পরিস্থিতির অবতাড়না হয়েছে।
জানা যায় যে, দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রীড়া সংস্থা এবং অলিম্পিক কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী ক্রিকেট বোর্ডের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন একটি পরিচালনা কমিটি ঠিক করতে বলা হয়েছিল। তবে সদস্য কাউন্সিলের পরামর্শ থাকার পরেও তখনকার কমিটি ভাঙতে রাজি হয়নি ক্রিকেট দক্ষিণ আফ্রিকা। যে কারণে পুরো বিষয়টিকে দেশের ক্রীড়ামন্ত্রী নাথি থেতওয়ার কাছে হস্তান্তর করে দেয় অলিম্পিক কমিটি।
এরপর পূর্ববর্তী কাউন্সিলের ১৬ সদস্য দুই দফায় পদত্যাগ করেন। এক সভায় তারা সিদ্ধান্ত নেন দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটের জন্য এটাই মঙ্গলজনক হবে।
মূলত, দূর্নীতির অভিযোগে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি করতে সরকার হস্তক্ষেপ করেছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থার (আইসিসি) নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি দেশের ক্রিকেট বোর্ড স্বাধীন থাকতে হবে, সেখানে সরকার হস্তক্ষেপ করা যাবে না। আর যদি সরকার হস্তক্ষেপ করে তাহলে আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী সেই দলকে ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করা হবে।
এরপর গত ১৮ এপ্রিল (রবিবার) দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রীড়া মন্ত্রী নাথি নেতওয়ার বলেন যে, ক্রিকেট বোর্ড দূর্নীতিমুক্ত করতে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ করতেই হবে এছাড়া কোনো উপায়ই নেই। এতে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে বলে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
কাউন্সিলে প্রভিন্সিয়াল ইউনিয়নের ১৪ জন সভাপতি আছেন। তাঁদেরকে আসছে শনিবার এক বিশেষ সাধারণ সভায় ডাকা হয়েছে। সেখানে নতুন এক মেমোরেন্ডাম আনুষ্ঠানিক ভাবে অনুমোদন করা হবে। তবে, সেখানে স্বতন্ত্র পরিচালকদের ও একজন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যানের উপস্থিত থাকতে হবে, অনুমোদন নির্ভর করছে তাঁদের ভোটাভুটির ওপর।
অবশ্য গেল সপ্তাহেই সমঝোতা হয়ে যাওয়ার একটা আলামত পাওয়া গেছে। কারণ, কাউন্সিল ও গত অক্টোবরে নিয়োগ পাওয়া অন্তবর্তীকালীন বোর্ডের মধ্যে এই ব্যাপারে আলাপ হয়েছে। আর গোপন ব্যালটে, ছয়জন আঞ্চলিক সভাপতি নতুন নিয়মের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। পাঁচজন বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন, আর তিনজন ভোট দেওয়া থেকে নিজেদের বিরত রেখেছেন। তবে, এই নিয়ম পাশ হওয়ার জন্য কমপক্ষে ৭৫ শতাংশ সংখ্যাগরিষ্টতা দরকার।
দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রীড়ামন্ত্রীর দাবি হল, নতুন এই কাঠামোতে কাউন্সিলের সভাপতিরা বিশ্বাস রাখতে পারছেন না। বরং বিষয়টার তাঁরা ভুল ব্যাখা করছেন। এই কারণে সংখ্যগরিষ্টতা আসছে না। মন্ত্রনালয়ের ক্ষোভের জায়গা এটাই। তাই দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটে সরকার সরাসরি হস্তক্ষেপ করবে বলে বোঝা যাচ্ছে।
কিন্তু এতে হুমকির মুখেই পড়বে দেশটির ক্রিকেটে সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিএসএ। ক্রিকেটের সব ধরণের দায়ভার যাদের ওপর সেই আইসিসির কড়া নিয়ম অনুযায়ী সব ক্রিকেট বোর্ডই থাকবে স্বতন্ত্র, মানে তাঁদের ওপর সরকার বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের হস্তক্ষেপ থাকবে না।
এতে সম্ভাবনা রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট নির্বাসনে যাওয়ার। এর আগে সরকার হস্তক্ষেপ করায় প্রায় ২২ বছর দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট নির্বাসনে ছিলো। আবারো সে পথেই হাঁটছে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার। তবে, বিষয়টা এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রনের বাইরে যায়নি। অস্তিত্ব রক্ষায় এখনই অবশ্য সতর্ক হতে হবে।