আফগান সাফল্যের নেপথ্য রহস্য

এবারের গল্পটা আলাদা, আফগানরা হয়ে উঠেছে টুর্নামেন্টের 'ডার্ক হর্স'।

২০১৯ বিশ্বকাপ, নয়টা ম্যাচ খেলেও জয়ের স্বাদ পায়নি আফগানিস্তান। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার মত দলের বিপক্ষে শেষপর্যন্ত লড়াই করেও হতাশ হতে হয়েছিল। কিন্তু এবারের গল্পটা আলাদা, আফগানরা হয়ে উঠেছে টুর্নামেন্টের ‘ডার্ক হর্স’। ইংল্যান্ড, পাকিস্তানের মত হট ফেভারিট দলকে হারানোর পর সর্বশেষ শ্রীলঙ্কাকেও পরাজয়ের স্বাদ দিয়েছে তাঁরা।

দলটি এখন যেকোনো প্রতিপক্ষের জন্য ত্রাস হয়ে উঠেছে; এমনকি সেমিফাইনালের দৌড়েও নিজেদের বাঁচিয়ে রেখেছে। কেন আর কিভাবে এই দুর্দান্ত পরিবর্তন এসেছে রশিদ, নবীদের মাঝে সেটা জানার চেষ্টা করা যাক।

  • সমৃদ্ধ টপ অর্ডার

ক্রিকেট মানচিত্রে পরিচিত হওয়ার পর থেকেই ব্যাটিংয়ে পিছিয়ে ছিল আফগানিস্তান। কিন্তু এই বিশ্বকাপে দুর্বলতা কাটিয়ে উঠেছে, দুই ওপেনার রান করেছেন ধারাবাহিকভাবে। রহমানউল্লাহ গুরবাজ এখন পর্যন্ত করেছেন ২২৪ রান, ইব্রাহিম জাদরানের সংগ্রহ ২১২ – যা কি না বাবর আজম, স্টিভ স্মিথ, জো রুটের মত তারকাদের চেয়েও বেশি।

এই দুজনের আগ্রাসনের পাশাপাশি টপ অর্ডারে রয়েছেন ওয়ানডে মেজাজের ব্যাটার রহমত শাহ। ওপেনাররা উড়ন্ত এনে দিলে সেই মোমেন্টাম হাতছাড়া করেন না তিনি; আবার শুরুতে উইকেট হারালে দলের হালও ধরতে জানেন। সবমিলিয়ে টপ অর্ডারের সময়োপযোগী ইতিবাচক ব্যাটিংয়ের বদৌলতে ভিন্ন অভিজ্ঞতা পাচ্ছে আফগানরা।

  • কোচিং প্যানেল

ড্রেসিংরুমে আগে থেকেই ছিলেন জোনাথন ট্রট, বিশ্বকাপ উপলক্ষে যোগ দিয়েছিলেন অজয় জাদেজা। দু’জনেরই রয়েছে ঈর্ষণীয় টেকনিক্যান জ্ঞান, তাই তো গেমপ্ল্যান তৈরি কিংবা নির্দিষ্ট ব্যাটার বা বোলারকে নিয়ে পরিকল্পনা আঁটতে জুড়ি নেই তাঁদের। তাঁদের কারণেই ক্রিকেটাররা এখন মানসিকভাবে আগের চেয়ে ভাল অবস্থায় রয়েছে।

২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত অনেকবারই এশিয়ান দলগুলোকে হারানোর দ্বারপ্রান্তে এসেও ব্যর্থ হয়েছিল আফগানিস্তান। কিন্তু এখন আর আতঙ্কিত হতে দেখা যায় না তাঁদের; দৃঢ়তার সাথে যার যার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন সবাই।

  • ক্যাপ্টেন কুল শহিদী

মোহাম্মদ নবী, রশিদ খান, গুলবাদিন নাইব – গত কয়েক বছরে নেতৃত্বের দায়িত্ব অনেক ঘুরে অবশেষে এসে পড়েছিল হাসমতউল্লাহ শহীদির হাতে। সেই থেকেই নতুন করে শুরু করেছে দলটি; একতাবদ্ধ হয়ে পারফর্ম করতে শুরু করেছিল। এই টুর্নামেন্টেও ব্যাট হাতে অবদান রাখার পাশাপাশি অধিনায়কত্বের মুন্সিয়ানাও দেখাচ্ছেন তিনি।

শহিদীর গেম সেন্স, গেম অ্যাওয়ারনেস প্রশংসনীয়। এই যেমন, ভারতের বিপক্ষে হঠাৎ করেই আগ্রাসী শট খেলেছিলেন; সবাই অবাক হয়েছিল। কিন্তু একটু পরেই কারণটা বোঝা যায়, ফিল্ডিং সাজাতে গিয়ে গড়মিল করে ‘নো বল’ হজম করেছে ভারত। এছাড়া পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন উইকেট শিকার করা নুর আহমেদকে বসিয়ে শ্রীলঙ্কা ম্যাচে ফারুকীকে খেলানোর সিদ্ধান্তও কাজে দিয়েছে।

আফগানিস্তান এখন টেবিলের পাঁচ নম্বরে উঠে এসেছে। শেষ তিন ম্যাচের তিনটি জিতলে তো বটেই, দুইটি জিতলেও নেট রান রেটের হিসেবে সেরা চারে উঠে আসতে পারে দলটি।

দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ থাকায় সেটা অবশ্যই কঠিন হবে। কিন্তু, ইংল্যান্ডকে হারানো এই দলটা আরো একবার চমকে দিবে না সেটার নিশ্চয়তা কি?

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...