ঘরোয়া ক্রিকেটে মারকুটে ব্যাটসম্যান হিসেবে সুনাম আছে উইকেটকিপার ব্যাটার জিতেশ শর্মার। আইপিএলে আলো ছড়ানোর পর এবারে ভারত জাতীয় দলের ভবিষ্যৎ ফিনিশার ভাবা হচ্ছে এই তারকাকে।
অথচ ছোটবেলাতে ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহই ছিল না জিতেশের, বরং বন্ধুদের সাথে ফুটবলে মেতে উঠতেই ভালো লাগতো তাঁর। কিন্তু দশম শ্রেণিতে উঠার পর জানতে পারলেন রাজ্যের হয়ে ক্রিকেট খেলতে পারলেও পরীক্ষায় বোনাস মার্ক মিলবে।
সেবারেই প্রথমবারের মতো ক্রিকেট মাঠে দেখা মেলে জিতেশের। উইকেটকিপার বনে যাওয়াটাও খানিকটা দৈবচক্রেই। তাঁর স্কুল দলে কোনো কিপার ছিল না, তাই দলে সহজে সুযোগ পেতেই গ্লাভস হাতে দাঁড়িয়েছিলেন উইকেটের পেছনে। এরপরের গল্পটা কেবলই সামনে এগোনোর।
ক্রমেই বয়সভিত্তিক দলের গন্ডি পেরিয়ে জায়গা করে নেন রাজ্যের সিনিয়র স্কোয়াডে। ক্যারিয়ারের একদম শুরুর দিনগুলো থেকেই মারকুটে ব্যাটসম্যান হিসেবে সুখ্যাতি ছিল তাঁর।
ইনিংসের শেষদিকে নেমে বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে বদলে দিতেন ম্যাচের ফলাফল। ২০১৫-১৬ মৌসুমে তো সৈয়দ মুস্তাক আলী ট্রফির সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক বনে গিয়েছিলেন এই তারকা। সেবারে ১৪৩ স্ট্রাইকরেটে করেছিলেন ৩৪৩ রান।
সেই মৌসুমের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সুবাদে ২০১৭ আইপিএলে তাঁকে দলে ভেড়ায় মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। যদিও কুইন্টন ডি কক, পার্থিব প্যাটেলদের মতো অভিজ্ঞ তারকাদের ভিড়ে কোনো ম্যাচে মাঠে নামার সুযোগ হয়নি তাঁর।
তবে সবাই ধরে নিয়েছিলেন আইপিএলের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ক্রমেই আরো ধারালো হয়ে উঠবেন জিতেশ। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে ক্যারিয়ারের গ্রাফ নিম্নগামী হতে শুরু করে এই তারকার।
ব্যাটে রান পাচ্ছিলেন না, কিপিংয়েও হাস্যকর সব ভুল করতে লাগলেন। এতটাই বাজে পরিস্থিতির মাঝে দিয়ে যাচ্ছিলেন যে জায়গা হারান রাজ্য দল বিদর্ভের একাদশ থেকেও। তবে জিতেশ নিজের উপর আস্থা হারাননি, বরং কাজ করতে শুরু করেন নিজের ব্যাটিং নিয়ে।
তিনি জানতেন ধৈর্য্য আর একাগ্রতার সাথে পরিশ্রমটা চালিয়ে গেলে পুরনো রূপে ফিরতে সময় লাগবে না। জিতেশ এরপর ফিরেছেন, ফিরেছেন আগের চেয়ে ভয়ংকর রূপে।
২০২২ আইপিএল নিলামে ২০ লাখ রুপির বিনিময়ে তাঁকে দলে ভেড়ায় পাঞ্জাব কিংস। নিজের অভিষেক আইপিএল মৌসুমেই ব্যাট হাতে আলো ছড়ান এই তারকা। সেবারে ১২ ম্যাচে ১৬৩ স্ট্রাইকরেটে ২৩৪ রান করেন এই তারকা।
আইপিএলে আলো ছড়ানোর সুবাদে এই বছরের শুরুতেই ডাক পান জাতীয় দলে। সাঞ্জু স্যামসনের ইনজুরির সুবাদে শ্রীলংকার বিপক্ষে সিরিজে তাঁকে ডাকা হয় জাতীয় দলের স্কোয়াডে। যদিও কোনো ম্যাচে খেলার সুযোগ পাননি।
গত মৌসুমের ফর্মটা এবারের আইপিএলেও ধরে রেখেছেন জিতেশ। ফিনিশার হিসেবে তাই কোনো বিদেশি তারকা নয়, পাঞ্জাব ম্যানেজমেন্ট ভরসা রেখেছে জিতেশের উপরই। এই তারকাও সেই আস্থার প্রতিদান দিচ্ছেন দারুণভাবেই। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচেই খেলেছেন ২৭ বলে অপরাজিত ৪৯ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস।
পাঁচ চার এবং দুই ছক্কায় সাজানো তাঁর এই ইনিংসের কোনো জবাব ছিল না মুম্বাই বোলারদের কাছে। লিয়াম লিভিংস্টোনের সাথে ৫৩ বলে ১১৯ রানের জুটি গড়ে দলকে এনে দেন লড়াকু এক পুঁজি।
ঋষাভ পান্তের ইনজুরির পর থেকে হন্যে হয়ে উইকেটকিপার ব্যাটসম্যানের খুঁজে আছে ভারত। বিশ্বকাপকে সামনে রেখে সেই পজিশনে জিতেশ শর্মা হতে পারেন ভারতের নতুন তারকা।
অথচ, জীবনের শুরুতে মোটেও ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নই ছিল না জিতেশের। স্কুলের ক্রিকেট দলে নাম লিখিয়েছিলেন চার শতাংশ মার্কস বেশি পাওয়ার আশায়। বাকিটা ইতিহাস!