শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সাম্প্রতিক টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশ ১-০ ব্যবধানে পরাজিত হলেও, এই সিরিজে লিটন দাস তাঁর ঝলক দেখিয়েছেন। পুরো সিরিজজুড়েই ব্যাটার হিসেবে তিনি ছিলেন আলোচনার শীর্ষে। শুধু টেস্ট নয়, এই সময়ে সম্ভবত সব ফরম্যাট মিলিয়েই তিনি বাংলাদেশের সেরা তারকা।
দ্বিতীয় টেস্টে দল যখন ৫ উইকেটে মাত্র ২৪ রান নিয়ে থমকে যাচ্ছিল তখন অসাধারণ ১৪১ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। পরপর তিনটি ৫০-এর বেশি স্কোর সহ – দাস ছিলেন বাংলাদেশ দলের সেরা ব্যাটার। নীরবে-নি:শব্দে, তিনি বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম দারুণ খেলোয়াড় হয়ে উঠেছেন। আর এই ব্যাপারটি পরিসংখ্যান এবং রেকর্ড বই দিয়ে প্রমাণ করা যায়ক।
শ্রীলঙ্কা সিরিজের পর, লিটন দাস আইসিসি টেস্ট ব্যাটিং র্যাঙ্কিংয়ে ক্যারিয়ার-সেরা ৭২৪ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে বর্তমান বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে ১২ তম স্থানে রয়েছেন। এটি আসলে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটারের সর্বোচ্চ রেটিং পয়েন্ট।
সেই ২০০০ সালে টেস্ট ক্রিকেট খেলার মর্যাদা লাভ করা দশম সদস্য বাংলাদেশকে টেস্টে এখনও নবীনই বলা যায়। তবুও এই সংক্ষিপ্ত ইতিহাসে তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম এবং সাকিব আল হাসান-সহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যাটারকে পেয়েছে, কিন্তু তাদের মধ্যে লিটন দাসের অবস্থান এখন সবার উপরে।
লিটনের সাম্প্রতিক উন্নতির বিষয়টি খুব দেখার মত। ৩৩ ম্যাচে ৩৬.৫৬ গড় নিয়ে তাঁর সামগ্রিক টেস্ট রেকর্ড যথেষ্ট শক্তিশালী। তার ক্যারিয়ারকে দুই ভাগে ভাগ করলে বিষয়টি আরও চিত্তাকর্ষক হয়ে ওঠে। ক্যারিয়ারের প্রথম ১৭ টেস্টের পর, দাসের রানের গড় ছিল মাত্র ২৪। সেখানে চারটি অর্ধশতক থাকলেও তিনি কোন সেঞ্চুরির দেখা পাননি। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো এর পরের ১৬ ম্যাচে দাসের গড় ৫১.৬৪ এবং তিনটি অসাধারণ সেঞ্চুরির পাশাপাশি নয়টি অর্ধশতক করেছেন।
গত আড়াই বছর ধরে টেস্টে ২৭ বছর বয়সী এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান দারুণ ফর্মে রয়েছেন। তার ফর্ম এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ২০২১-২৩ এর সময়কালে তিনি ৭৮২ রান নিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছেন। তাঁর আগে আছেন শুধুমাত্র জো রুট রয়েছেন যিনি লিটন দাসের চেয়ে আরও পাঁচটি ম্যাচ বেশি খেলেছেন।
দাস তার ক্যারিয়ারের ৩৩ টি টেস্টের মধ্যে ২৬টিতে বাংলাদেশের উইকেটরক্ষক ছিলেন। যেই ম্যাচগুলিতে তিনি গড়ে ৪০.১৪ রান নিয়ে দুটি সেঞ্চুরি এবং ১২ টি অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন। এই রেকর্ডের সাথে ভারতের ঋষাভ পন্তের মিল রয়েছে, যার ৩০ টি ম্যাচের ব্যাটিং গড় ৪০.৮৫।
লিটন দাসের রেকর্ড ভিনদেশের তুলনায় ঘরের মাঠেই বরং বেশি শক্তিশালী। দেশের মাটিতে ৪৩.৪২ গড়ের বিপরীতে দেশের বাইরে ৩০.৪১। তবে এটিও সাম্প্রতিক সময়ে উন্নত হচ্ছে কারণ তিনি কারণ তিনি এই বছর বিদেশের মাটিতে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একটি দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করেছেন।
তবে, লিটন দাসের উন্নতি শুধুমাত্র লাল বলের খেলা টেস্টেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। ২০২০ সালের শুরু থেকে ওয়ানডে ফরম্যাটে তার গড় ৪৭.৫২। এই তিনি এই ফরম্যাটে করা তাঁর চারটি ফিফটিকেই সেঞ্চুরি অবধি টেনে নিয়ে গেছেন। এর আগ পর্যন্ত তাঁর গড় ছিল ২৪.৭৭।
২০২৩ সালের বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা এর মধ্যেই অর্জন করা সম্পন্ন বাংলাদেশ দল ক্রিকেটে দিনদিন উন্নতি করছে ওয়ানডে। তাছাড়া গত শীতে নিউজিল্যান্ডের সাথে ড্র হওয়া ঐতিহাসিক সিরিজের মত সময়ও এসেছে। এর সাথে যোগ হয়েছে ব্যাটার হিসেবে লিটন দাসের উত্থান। হয়তো সামনে এমন সুন্দর সব সময় আরো আসবে!
– উইজডেন অবলম্বনে