মজার বুড়োটা আর নেই…

ফতফতে শার্ট, মাথায় সাদা হ্যাট, কুঁচকানো ভুরু দুটো দেখা যায় সরু রোদচশমার ওপর। বাড়ির পাশ দিয়ে সেই কাঠি আইসক্রিম নিয়ে হাঁক দিয়ে যায় ছেলেবেলা, গ্রীষ্মের দুপুরে ঘর অন্ধকার করে নতুন টিভিতে দেখা ক্রিকেট ম্যাচ, স্বয়ং শচীন টেন্ডুলকার আউট! এমন কত মন খারাপের সাক্ষী তুমি সান্তা বুড়ো!

মনে পড়ে তখন এত ডিআরএসের দৌড়াত্ম নেই, এত প্রযুক্তি, এত হক আই, আল্ট্রাসাউন্ড এজিং চেক কিছুই নেই এত প্রবলভাবে, রান আউটের জন্য একটা থার্ড আম্পায়ার্স কল, ব্যাস!

বোলারের আপিল আর ব্যাটসম্যানের অসহায় চোখের মাঝে দাঁড়িয়ে ছিলেন ডেভিড শেফার্ড। ব্রিটিশ আম্পায়ারের ফরসা গাল দুটো লাল হয়ে যেত রোদে, তবু সেই ঘাড়টা বাঁকিয়ে আড়াআড়ি ডানহাতের তর্জনী তুলে জানিয়ে দিতেন ব্যাটসম্যানের ললাট লিখন, মাঝে মাঝে মনে হত ওই দুটো চোখে কী ম্যাজিক রয়েছে?

কী মন্ত্রবলে এত আত্মবিশ্বাস পেয়েছিলেন তিনি? ২০০২ সালে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) তাঁকে নিউট্রাল আম্পায়ার এলিট প্যানেলের সদস্যপদ দিল, ডেভিড শেফার্ড হলেন বিশ্ব ক্রিকেটের সেই আম্পায়ার যিনি আইসিসি স্বীকৃত পৃথিবীর প্রতিটি ক্রিকেট খেলিয়ে দেশের ম্যাচে দাঁড়িয়েছিলেন নিজের ট্রেডমার্ক স্টাইলে। ক্রিকেট কাউন্সলের বিচারে সবচেয়ে নিখুঁত আম্পায়ারের তকমাও গিয়েছিল শেফার্ডের হাতে।

আরো পড়ুন

ক্রিকেটের বাইশ গজে শেফার্ডের ডিসিশন হয়ত চোখ বুজে মেনে নিতেন ক্রিজ ছেড়ে যাওয়া ব্যাটসম্যানও, হয়ত একটা মাথানাড়া বোলারের সমস্ত দ্বন্দ্ব কাটিয়ে দিতে পারত!

ক্রিকেট বয়ে চলেছে নদীর মত, কত রথী-মহারথী খেলোয়াড়েরা আসছেন, চলে যাচ্ছেন বাইশ গজ ছেড়ে, কত আলোর জৌলুস তাঁদের ওপর শুধু এই মানুষটা খুব নি:শব্দে চলে গিয়েছিলেন পৃথিবী থেকে। ভয়ানক ফুঁসফুসের ক্যান্সার জীবনের শেষক’টা দিন একটু একটু করে শেষ করে দিয়েছিল আজন্ম হাসিখুশি-মজায় থাকা মানুষটিকে। ২০০৫ সালে শেষ নিজের সাদা হ্যাটটা সবুজ মাঠে রেখে ক্রিকেট থেকে অনেক দূরে হারিয়ে গেলেন ক্রিকেটের সান্টাক্লজ ডেভিড শেফার্ড।

মনে পড়ে মাঠে সৌরভ গাঙ্গুলি কিংবা অজি দলপতি রিকি পন্টিংয়ের সাথে খুনসুটি, ১১১ রান হলে সেই এক পায়ে দাঁড়ানো, সেই স্ট্রেট ড্রাইভের সামনে মজা করে লাফ দিয়ে হেসে ফেলা, বাচ্চাদের সঙ্গে গ্যালারিতে গিয়ে খুনসুটি – সব মিলিয়ে আমাদের ছেলেবেলার সান্তাবুড়ো এই ডেভিড শেফার্ড।

আজ এত প্রযুক্তি, এত নিয়মের বেড়াজাল, এত ক্রিকেটীয় বিজ্ঞানের যুগে এই নিম্ন মানের আম্পায়ারিং দেখে মনে হয় ডিকি বার্ড কিংবা ডেভিড শেফার্ডরা সেদিন হয়ত ক্রিকেটকে খুব হৃদয় দিয়ে ভালবাসতেন, ক্রিকেটের ভাগ্যবিধাতা সান্তা বুড়ো আমাদের একফালি শৈশব সাথে নিয়েই যেন হারিয়ে গেলেন না ফেরার দেশে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link