‘স্বাধীন ব্যাটিং’ – এই শব্দযুগল বাংলাদেশ শিবিরে এখন খুব চলছে। তবে, সবাই যেন বেমালুম ভুলেই যাচ্ছে, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন। ব্যাটাররা যেন ভুলেই যাচ্ছেন, স্বাধীন ভাবে ব্যাট চালালেও তাঁদের আরও দায়িত্বশীল হওয়া দরকার।
অবশ্য স্বাধীনতা ও দায়িত্বশীলতার প্রশ্ন যখন আসে – তখন অধিনায়কের নামটাও চলে আসবে। কারণ, ব্যাটারদের স্বাধীনতা যেমন দেওয়া হচ্ছে – তেমনি অধিনায়ক নিজেও স্বাধীন ভাবে দলের ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন আনছেন।
আর ব্যাটিং অর্ডার নিয়েই যখন আলাপ তখন সবার আগে আসবে মেহেদী হাসান মিরাজের নাম। তিনি এই বিশ্বকাপে তিনটা ম্যাচের দু’টোতে খেলেছেন তিন নম্বরে, এক ম্যাচে পাঁচ নম্বরে। অবশ্য বিশ্বকাপের পরিকল্পনা যখন শুরু করে বাংলাদেশ, তখন নিয়মিত ভাবে তাঁকে এই পজিশনগুলোতে জায়গা-ই দেওয়া হয়নি। হঠাৎ বিশ্বকাপের আগ দিয়ে তাঁকে লোয়ার মিডল অর্ডার থেকে তুলে এনে পুরোদস্তর ব্যাটার বানিয়ে দিতে মরিয়া বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট।
হ্যাঁ, তাতে মিরাজ নিজে সাফল্য পাচ্ছেন। ওপেনিংয়ে নেমে সেঞ্চুরি করেছেন, তিন নম্বরে নেমে করেছেন হাফ সেঞ্চুরি। তবে, কোনো একটা জায়গায় থিতু হতে পারছেন না তিনি। তিনি এই মুহূর্তে সাকিবের সবচেয়ে বড় ‘গিনিপিগ’। দল সাফল্য পেলে হয়তো – এসব নিয়ে প্রশ্ন উঠতো না – কিন্তু টানা বাজে পারফরম্যান্সের কারণেই সাকিবের এই স্বেচ্ছাচারিতায় প্রশ্ন আসছে বারবার।
মিরাজের ‘ফ্লোটার’ চরিত্র আসলে পুরো ব্যাটিং লাইন আপেই প্রভাব ফেলছে। পরিপূর্ণ নাম্বার তিন বাংলাদেশ নিজেদের ইতিহাসেই পেয়েছে খুব কম। নাজমুল হোসেন শান্ত অনেক জল ঘোলার পর সেরা ফর্ম পেয়ে সেই জায়গাটা পেয়েছিলেন। কিন্তু, বিশ্বকাপ আসতেই তাঁকে নেমে যেতে হল চারে।
চার নম্বরে খেলছিলেন তাওহীদ হৃদয়। দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন। বিশ্বকাপে তাঁকে পাঠানো হচ্ছে ছয়-সাতে। অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ জয়ী এই ক্রিকেটার বিশ্বকাপে এসে রীতিমত নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ শেষ ম্যাচে রান পেয়েছেন। খেলেছেন আটে। আট নম্বরে এত পরিপূর্ণ ব্যাটার দরকার কি না – সেটাও প্রশ্নবিদ্ধ। আবার এটাও ঠিক যে – সেদিন রিয়াদ না থাকলে বাংলাদেশের বিপদ আরও বাড়ত। ওপেনাররা রান পাচ্ছেন না তেমন একটা। তানজিদ হাসান তামিম তো মানিয়েই নিতে পারছেন না আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। সেখানে তামিম ইকবালকে দেশেই রেখে এসেছেন সাকিব।
মুশফিকুর রহিমের ক্যারিয়ার কোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহের জমানায় প্রায় শেষই হতে চলেছিল। পরে ছয় নম্বরে আধুনিক ক্রিকেটের মেজাজ বুঝে রান পেয়ে তিনি জাতীয় দলে জায়গাটা ধরে রেখেছেন। এখন দলের অন্যতম ধারাবাহিকও তিনি। তবে, বিশ্বকাপে তাঁর জায়গাও বদলে পাঁচে আনা হয়েছে।
মানে কোনো নির্দিষ্ট পজিশনে যে সফল হয়েছেন, তাঁকে সেই জায়গা বাদে অন্য অনেক জায়গাতে খেলতে হচ্ছে। মানে, এই মুহূর্তে পরীক্ষা-নিরীক্ষার চূড়ান্ত অধ্যায়টাই রচনা করছেন সাকিব। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সমস্যা না, কিন্তু বিশ্বকাপের মঞ্চটা কি আদৌ এই পরীক্ষা-নিরীক্ষার কি না – সেটা ভেবে দেখা দরকার। পরীক্ষা হলে পড়তে বসলে কোনো লাভ হবে কি!