কোন একটা গণ্ডগোল যে হচ্ছে তা আন্দাজ করে নেওয়াটা খুব কঠিন কোন কিছু নয়। দল যখন খারাপ করতে থাকে তখন খেলোয়াড়দের মাঝে নিজের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন জাগে। সে প্রশ্নটা জাগে টিম ম্যানেজমেন্টের উপর। কিঞ্চিৎ হলেও দোষ চাপানোর মত একটা বাজের কাজের বিস্তার ঘটে দলে অভ্যন্তরে। তেমনই এক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে হয়ত চেন্নাই সুপার কিংস।
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের গেল বারের চ্যাম্পিয়ন দল চেন্নাই সুপার কিংস। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে এবারে পঞ্চদশতম আসর শুরু করেছিল চার বারের চ্যাম্পিয়ন দল। তবে শুরুতে কেমন যেন এলোমেলো লাগতে শুরু করে পুরো দলকে। পরিকল্পনার ঘাটতি সেই সাথে খেলোয়াড়দের অফফর্ম। সব মিলিয়ে নিদারুণ এক বাজে সময় কাটায় চেন্নাই। নিশ্চয়ই সে বাজে সময়ের দায়ভার বর্তায় দলে থাকা সবার উপর।
কিন্তু না সে দায় গিয়ে পড়লো সদ্যই এই মৌসুমে দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়া রবীন্দ্র জাদেজার উপর। জাদেজা প্রথমবারের মত আইপিএলে মত এত বড় এক মঞ্চে চেন্নাই সুপার কিংসের মত সফল একটি দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব নিশ্চয়ই খানিক ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। কম চাপ তো আর থাকে না মাথার উপর। নিজের পেছনে খরচকৃত অর্থের চাপ, সমর্থকদের প্রত্যাশার চাপ সহ নিজে ভাল করার স্পৃহা এসব কিছু মিলিয়ে জাদেজা যেন ঠিক ঠাওর করতে পারছিলেন যে তাঁর কি করা উচিৎ।
সে জায়গায় তাঁকে খানিক সাহায্য করার চেষ্টাও করেছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। তবে সেই যে পরিকল্পনায় ঘাটতি বিষয়টা রয়েই গিয়েছিল। আর হঠাৎ করেই টুর্নামেন্টের মাঝপথে জাদেজাকে তাঁর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। সেখানেই কেমন যেন একটা অন্তরকোন্দলের আভাস পাওয়া যায়। তবে সেটা যেন আরও প্রকোট হয়। হঠাৎ করেই তাঁকে দল থেকে বাদ দেওয়ায়।
তবে সে জন্য অবশ্য চেন্নাই ম্যানেজমেন্ট থেকে জানানো হয়েছে ইনজুরি আক্রান্ত হয়েই দল থেকে ছিটকে গেছেন রবীন্দ্র জাদেজা। দলের ভেতরের কিছু একটা ঝামেলা চলছে সেই গুঞ্জনটা যেন আরও প্রকোপ হয় আম্বাতি রাইডুর একটা টুইটার পোষ্ট দেওয়া এবং ডিলিট করে দেওয়ার মধ্য দিয়ে। এবারে আসরটায় খানিক ফিকে ছিলেন আম্বাতি রাইডু। ১২ ম্যাচ খেলে ২৭১ রান। খুবই গড়পরতা চেন্নাই সুপার কিংসের প্রেক্ষাপটে।
তা নিয়েই হয়ত দলের মাঝে কথা চালাচালির এক পর্যায়ে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে বিদায় জানাবেন আইপিএলকে।তিনি মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স ও চেন্নাই সুপার কিংসকে ধন্যবাদ জানিয়ে নিজের অবসরের ঘোষণা দেন। তবে মিনিট খানেক বাদেই সে পোষ্ট ডিলিট করে দেন তিনি। সন্দেহ যেন আরও প্রবল হয়।
এটা বোঝার আর বাকি থাকে না যে দলের মধ্যে একটা সমস্যা হচ্ছে। খেলোয়াড় ও ম্যানেজমেন্ট কর্তাদের মাঝে মনোমালিন্যের মত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তেমনটা হওয়াও যেন স্বাভাবিক। এবারের টুর্নামেন্টটা বাজ একটা মৌসুম হিসেবেই গন্য করা যেতে পারে চেন্নাই সুপার কিংসের ইতিহাসের সামনে। কেননা এবার শুরুর দশটা ম্যাচের অধিকাংশই হেরেছিল চেন্নাই।
তাছাড়া এবারের আইপিএলে প্লে-অফ অবধিও পৌঁছাতে পারেনি দলটি। টুর্নামেন্ট শুরুর দিকে টেবিলের তলানির দিকে অবস্থান ছিল চেন্নাইয়ের। সে দৃশ্য হয়ত মেনে নিতে খুব কষ্ট হয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে ফ্রাঞ্চাইজির সাথে যুক্ত থাকা সবার। সমর্থকরাও নিশ্চয়ই এমন পারফরমেন্স প্রত্যাশা করেননি। তবে খেলোয়াড়রাও তো বেশ পেশাদার।
তাঁরা নিশ্চয়ই চাননা তাঁদের দল হারুক। তাঁদের কাছেও নিশ্চয়ই দৃষ্টিকটু লেগেছে খেলোয়াড়দের। খেলোয়াড়রাও হয়ত মানসিক অবসাদের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে ম্যানেজমেন্টের উচিৎ ছিল খেলোয়াড়দের উপর আস্থা রাখা, তাঁদের সমর্থন করে যাওয়া। চেন্নাই সুপার কিংস পুরো একটা পরিবার। এই পরিবার খারাপ-ভালর দায়ভার সবার।
সুতরাং শুধুমাত্র খেলোয়াড় কিংবা নির্দিষ্ট কোন খেলোয়াড়কে অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেওয়াটা যথার্থ নয়। নিশ্চয়ই এই কঠিন সময় পার করে চেন্নাই সুপার কিংস আবার ফিরবে নিজেদের স্বরুপে। এর আগে অন্তরকোন্দল মিটিয়ে নেবে তাঁরা সে প্রত্যাশা করাই যায়।