ছবিতে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) একজন কর্মকর্তাকে দেখা যাচ্ছে একটা লাল বল হাতে। বুঝতে কষ্ট হবার কথা নয় যে, বলটি কোনো একটা টেস্ট ম্যাচে ব্যবহৃত হয়েছিলো। ছবিটিতে আপাতদৃষ্টে তেমন বিশেষ কিছু পরিলক্ষিত হচ্ছে না। কিন্তু লেখা শেষে এই ধারণাটা পাল্টে যায় কিনা, দেখা যাক।
অ্যাডাম গিলক্রিস্ট যে আধুনিক যুগের ক্রিকেটে উইকেটরক্ষকের ভূমিকা আমূল বদলে ফেলেছেন, সেটা মোটামুটি সবারই মেনে নেবার কথা। সাদা বলের ক্রিকেটে তো বটেই, দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটেও খেলেছেন আক্রমণাত্মক ক্রিকেট- টেস্ট ক্রিকেটে ৮১.৯৬ স্ট্রাইক রেট তারই সাক্ষ্য দেয়। তাই ক্রিকেটের সবচাইতে পুরাতন এই ফরম্যাটে ১০০ ছক্কার মাইলফলক প্রথম স্পর্শ করা ব্যক্তির নাম যে অ্যাডাম গিলক্রিস্ট- এতে অবাক হবার কোনো কারণ নেই।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০০৭ সালের ১৭ নভেম্বর, গিলক্রিস্ট টানা দুই বলে ক্যারিয়ারের ৯৯তম ও ১০০তম ছয় হাঁকান মিডউইকেটের উপর দিয়ে। বোলার ছিলেন মুত্তিয়া মুরালিধরন। ক্যারিয়ার প্রথম ছক্কাটা মেরেছিলেন ‘দুসরা’র আবিষ্কারক সাকলায়েন মুশতাককে, শততম ছয় মারলেন তর্কসাপেক্ষে সর্বকালের সেরা স্পিনারকে। একেই বোধহয় বলে ষোলকলা পূরণ।
গিলক্রিস্ট শততম ছক্কাটা হাঁকিয়েছিলেন তার ৯২তম টেস্টে। পরের চার টেস্টে আর কোনো বলকে সীমানা দড়ির উপর দিয়ে ওড়াতে পারেননি, ফলে ৯৬ টেস্টের ক্যারিয়ার শেষ হয় কাঁটায় কাঁটায় ১০০ ছয়ে।
এবার আসি ছবির বলটার গল্পে। ৯৯তম ছক্কাটা ঠিকঠাকভাবে ব্যাটে লাগাতে পারেননি, তারপরও সীমানা পার হয়েছিলো। কিন্তু শততম ছক্কাটা ছিলো একদম গিলক্রিস্টসুলভ। মুরালির ওভার দ্য উইকেট থেকে করা বলটা মাঝব্যাটে লেগে সোজা গিয়ে পড়লো হোবার্টের বেলেরিভ ওভালের বাইরে।
অ্যাডাম গিলক্রিস্ট সাধারণত স্মারক সংরক্ষণ করেন না, কিন্তু সেই বলটি সংগ্রহে রাখার খুব ইচ্ছে ছিলো তাঁর। মিডিয়াতে বলেছিলেন, ‘জীবনে এমন কিছু করার সুযোগ খুব কমই আসে যা অন্য কেউ কখনো করতে পারেনি। তাই বলটা পেলে খুব ভালো লাগবে।’
গিলক্রিস্ট ও ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া সাধারণ মানুষকে অনুরোধ করেন যেন বলটার ব্যাপারে জানলে তাদের অবহিত করা হয়।
দু’সপ্তাহ পর জন নামের একজন হাসপাতালের কর্মচারী ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান যে, বলটা তার কাছে আছে এবং তিনি এটা ফেরত দিতে চান।
বলটা জন পেয়েছিলেন বেলেরিভ ওভালের বাইরে চার্চ স্ট্রিটের রাস্তায়। তার অনেকদিনের ইচ্ছা ক্রিকেট স্মারক সংগ্রহ করার, কিন্তু কিনতে গিয়ে সে অবধি যা পেয়েছিলেন সবই নকল। তাই এটাই ছিলো আসল স্মারক নিজের কাছে রাখার সুযোগ। সপ্তাহখানেক নিজের কাছে রাখার পর কী ভেবে একটা মোজার বাক্সে ভরে বলটা তার এক আত্মীয়ের বাসার উঠোনে গর্ত করে পুঁতে রাখলেন।
প্রথমদিকে খুব খুশি হলেও পরে যেন মন থেকে শান্তি অনুভব করতে পারছিলেন না জন। ভাবলেন, ‘আমি কেন একা এটা উপভোগ করবো? সমগ্র বিশ্বের সবারই তো ইতিহাসের সাক্ষী হবার অধিকার আছে।’
জন ঠিক করলেন, বলটা ফিরিয়ে দেবেন। এর মধ্যে স্বয়ং গিলক্রিস্টও বলটা চেয়েছেন। বলটা মাটিতে পু্ঁতে ফেলার সপ্তাহখানেক পর জন সেটিকে তুলে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার অফিসে যান নিজের মেয়েকে নিয়ে। নিঃশর্তভাবে তাদের কাছে বলটা তুলে দেন।
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া সিদ্ধান্ত নেয় যে, জনের প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ এই বলের গল্পটা বলটির সাথেই টীকা (Note) আকারে তারা প্রদর্শন করবে।
সাধারণ এই চর্মগোলকটাকে এবার অসাধারণ বলা যাচ্ছে কি?