আয়, আরেকটিবার আয় রে সখা

অপেক্ষাটা দীর্ঘ পনেরো বছরের। তারপর মিলেছে বিশ্বকাপের মূলপর্বে আরাধ্য সেই ঐতিহাসিক জয়। যেই জয় নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের। সেই জয়ের বোনাস হিসেবে আবার জুটেছে গ্রুপ পর্বের শীর্ষস্থান!

তাই হাহাকার ছাড়িয়ে টাইগার ভক্তরা আশায় বুক বাঁধছেন। স্বপ্ন দেখছেন এবারের বিশ্বকাপে দল ভাল কিছু উপহার দিবে তাঁদের। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ শিবিরেও এখন দায়িত্বটা বেড়ে গেল বহুগুণ। সবে মাত্র আশার প্রদীপ জ্বেলে তা নিভিয়ে দিলে তো চলবে না।

২৭ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকা। দলীয় শক্তিমত্তার ভিত্তিতে পূর্বানুমান অবশ্য টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটটায় সব সময় খাটে না।

তাই বলা যায় বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ আফ্রিকা দুই দলেরই জয়ের সমান সম্ভাবনা রয়েছে। একদিকে প্রোটিয়ারা চাইবে আগের ম্যাচের দুর্ভাগ্য পুষিয়ে এই ম্যাচে অবশ্যই জিতে সেমিফাইনালের দৌড়ে টিকে থাকতে। অন্যদিকে উজ্জীবিত বাংলাদেশ চাইবে তাঁদের ‘বিগিনার্স লাক’-কে এই ম্যাচেও ধরে রেখে টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে।

এই বাঁচা মরার লড়াইয়ে গ্রুপ-দুইতে থাকা পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা দল এবং পয়েন্ট টেবিলের তিন নম্বর দলের মধ্যে তাই হতে যাচ্ছে একটি হাড্ডাহাড্ডি লড়াই।

ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বলেন, ‘এটা দুই দলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য তাদের প্রথম খেলা থেকে দুই পয়েন্ট আশা করেছিল। তাই এটি একটি করো বা মরো ম্যাচ। অবশ্য তাঁরা কিছুটা চাপের মধ্যে থাকবে। আমাদের বেল্টের নিচে একটা জয় আছে এবং এখন আমরা এমন একটি মাঠে খেলব যেটায় সাধারণত স্পিনাররা সুবিধা পায়। আইসিসি সাধারণত বিশ্বকাপে এমন উইকেট তৈরি করার চেষ্টা করে যাতে সবাই সাহায্য পায়।’

ম্যাচ নিয়ে ভাবনায় বাংলাদেশ দলের দলনেতা আরও বলেন, ‘তাদের দলে বেশ কয়েকজন বিশ্বমানের খেলোয়াড় আছে। কিন্তু আমরাও আমাদের সামর্থ্যের সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। অন্য ফরম্যাটে হলেও তাদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি আমাদের কিছু ভাল স্মৃতি আছে। এটা অবশ্যই আমাদের মানসিকভাবে সাহায্য করবে। আমরা জয়ী হতে চাই। আপনারা খেলা উপভোগ করুন। সিডনিতে প্রচুর বাংলাদেশি জনসংখ্যা থাকায় আমরা বিপুল সমর্থনে আশাবাদী।’

সাকিব আল হাসান এই বছরের শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের ওয়ানডে সিরিজ জয়ের স্মৃতি টাইগারদের আত্মবিশ্বাস যোগাবে তাই ইঙ্গিত করেছেন।

অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার লুঙ্গি এনগিডির মতে, দুই দলই ম্যাচটিতে সমান চাপে থাকবে। তিনি আরও জানান যে দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের সিমারদের নিয়ে বাংলাদেশকে আক্রমণ করবে।

এই পেসার বলেন, ‘বাংলাদেশের দাবি হল আমরা জেতার জন্য ক্ষুধার্ত থাকব, এটা অবশ্যই সত্য। স্পষ্টতই, আমরা প্রথম ম্যাচে জয় পছন্দ করতাম এবং আমরা এখন জানি যে টুর্নামেন্টে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের কি বাঁধা রয়েছে। তবে আমি বলব চাপ এটা সবার উপর আছে যদি আপনি বিশ্বকাপ জিততে চান।’

লুঙ্গি এনগিডি আরও বলেন, ‘আমরা যে গেমগুলি দেখেছি, আমরা দেখেছি যে এখানে গতি সবচেয়ে সফল হয়েছে। তাই আমরা আমাদের শক্তি বাড়াচ্ছি। আমরা আমাদের সবটুকু শক্তি দিয়ে বাংলাদেশ দলকে আক্রমণ করতে চাই। এবং সেই শক্তি হল গতি।’

কিন্তু বাংলাদেশী অধিনায়ক আশা জাগানিয়া গান শোনাচ্ছেন। সাকিব আশাবাদী যে বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকার পেস আক্রমণকে নামিয়ে ফেলতে পারে। বিশেষ করে ওপেনার সৌম্য সরকার এবং নাজমুল হোসেন শান্ত দারুণ কিছু করে দেখাতে পারবেন।

পাশাপাশি বাংলাদেশি ফাস্ট বোলার বিশেষ করে তাসকিন আহমেদের একচোট প্রশংসা করতে ভোলেননি অধিনায়ক। এই প্রসঙ্গে সাকিব বলেন, ‘মাশরাফির বিদায়ের পর তাসকিন এখন পেস নেতা। গত দুই বছরে বাংলাদেশের হয়ে তিনি অসাধারণ করেছেন।’

শুভকামনা বাংলাদেশ দলের জন্য। আমরা ভক্তরা দারুণ কিছুর প্রত্যাশায় থাকব। বাইশ গজে এগারো জন সৈন্যই পারে এদেশের কোটি মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে। আমাদের এই টুর্নামেন্টের ফেবারিট হওয়া লাগবে না। আমরা হাঁটি হাঁটি পা পা করেই একটা করে ম্যাচ জিতবো, সেই জয়ের আনন্দে মাতোয়ারা হবে পুরো দেশ। নিদারুণ ক্রিকেটীয় জোয়ারে গা ভাসিয়ে দিবো নিজের দেশের নাম জপে জপে। আয় আরেকটিবার আয় রে সখা, জয়ের দেখা পাই। ব্যস, এইটুকুই চাওয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link