দিস টাইম ফর আফ্রিকা

বাংলাদেশের হয়ে এখন তরুণ ক্রিকেটাররা আস্তে আস্তে পারফর্ম করতে শুরু করেছেন। তরুণদের চোখে অন্তত লড়াই করার সেই নেশাটা দেখা যায়। সবমিলিয়ে এখনই সময় বিদেশের মাটিতেও নিজেদের একটি দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। আর ক্রিকেট বিশ্বকে এটা জানান দেয়ার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে ভালো জায়গা আর কীই বা হতে পারে।  

দক্ষিণ আফ্রিকা দেশটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য একটা দুর্গই বলা চলে। যেই দুর্গ বাংলাদেশ কখনোই ভেদ করতে পারেনি। ফলে দক্ষিণ আফ্রিকা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য রহস্য ঘেরা এক আঙিনাই বলা চলে। তবে এবার বোধহয় সময় এসেছে এই ফ্রন্টলাইনটা ভাঙা। এবার সময় এসেছে অন্তত ভিতরের নকশাটা খতিয়ে দেখার।

শুধু বাংলাদেশের কথা বললে অবশ্য ঠিক হবেনা। উপমহাদেশের যেকোন দলের জন্য সিনা দেশগুলো একেকটা দুর্গ। তবে এরমধ্যে সবচেয়ে দুর্ভেদ্য বোধহয় দক্ষিণ আফ্রিকাই। পেস বোলারদের জন্য এই স্বর্গরাজ্য জয় করা উপমহাদেশের যেকোন দলের জন্যই কঠিন। আর বাংলাদেশের জন্য তো এক বিরাট ধাঁধা।

যদিও অস্ট্রেলিয়া কিংবা ইংল্যান্ডের মাটিতে তুলনামূলক ভাবে সফল বাংলাদেশ। এই দুটি দেশে নানা সময়ে বিচ্ছিন ভাবে হলেও বেশ কিছু স্মরণীয় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি কঠিন দুর্গ ছিল নিউজিল্যান্ড। সেটি অবশ্য এবছর ভেদ করে এসেছে মুমিনুল বাহিনী। মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে এবাদত হোসেন, মাহমুদুল হাসান জয়রা দেখিয়েছিলেন এক নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন।

এই মাস দুয়েক আগেই অপেক্ষাকৃত তরুণ এই দলটা প্রমাণ করেছে কঠিনতম দুর্গটাও ভেদ করা যায়। মাউন্ট মঙ্গানুই এর ওই সবুজ ঘাসে, বাতাসের এই প্রবল দাপটের মাঝে দাঁড়িয়েও লড়াইটা চালিয়ে গিয়েছিল নতুন দিনের বাংলাদেশ। টেস্ট ক্রিকেটেও বাংলাদেশ চোখে চোখে রাখতে পারে সেটাই দেখিয়েছিলেন মুমিনুলরা। বিশেষ করা এবাদত, শরিফুলদের নিয়ে গড় পেস বোলিং আক্রমণই তো তছনছ করেছিল কিউদের সেই দুর্গ।

তবে এবার এই পেস আক্রমণের সামনে আসতে যাচ্ছে আরো কঠিন এক দুর্গ। যদিও দক্ষিণ আফ্রিকার ওই কন্ডিশনে বোলিং করাটা যেকোন পেস বোলারেরই স্বপ্ন হবার কথা। তবে বাংলাদেশের পেসাররা সেই সুবিধাটা কাজে লাগাতে পারেননি কখনোই। আসলে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে পুরো বাংলাদেশ দলই সবসময় তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ মোট ২৮ টি ম্যাচ খেলেছে। তবে প্রোটিয়া দুর্গে বাংলাদেশের ওয়ানডে ও টেস্ট ক্রিকেটে জয় নেই একটিও। তবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে একটি জয় বাংলাদেশ পেয়েছিল ২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। সেই বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ।

তবে এর আগে পরে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে বাংলাদেশ কখনো সেভাবে লড়াইও করতে পারেনি। আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয় পাওয়া তো অনেক দূরের কথা। তবে বাংলাদেশ দলের সামনে এবার সেই সুযোগটা আছে ভালো ভাবেই। তিন ওয়ানডে ও দুই টেস্ট ম্যাচের এই সফরে বেশ আশা নিয়েই যাচ্ছে বাংলাদেশ।

বিশেষ করে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেই জয় এবার যেন বাংলাদেশ দলকে আরো তাঁতিয়ে দিয়েছে। যেমন দক্ষিণ আফ্রিকা যাবার আগে ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম বলছিলেন, ‘চ্যালেঞ্জিং তো হবেই। নিউজিল্যান্ড সিরিজও চ্যালেঞ্জিং ছিল। কিন্তু সেখানে টেস্ট জয় আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে। ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে কিছু কঠিন ম্যাচ জিতেছি, যেহেতু কঠিন কিছু ম্যাচ জিতেছি, এসব আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করেছে। আমার বিশ্বাস যদি সেটা খেলাটা খেলতে পারি, তাহলে দক্ষিণ আফ্রিকাতেও জেতা সম্ভব।’

সব মিলিয়ে বাংলাদেশ অন্য যেকোন বারের থেকেই বেশি আত্মবিশ্বাস নিয়ে যাচ্ছে এবার। ওদিকে দলের সাথে যাওয়া হাবিবুল বাশার সুমনও বিমানবন্দরে জানিয়েছেন এবার ভালো কিছুর আশাই করছে তাঁর দল। তিনি বলেন, ‘একটু আশাবাদী তো হতেই পারি। সেই আশা নিয়েই যাচ্ছি। আমরা জানি যে, আমাদের কাজটা কঠিন হবে। ওরা ওদের সেরা দলটা নিয়েই আমাদের সঙ্গে নামছে। এবার ওরা বাংলাদেশকে গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ যে ছন্দে আছে, সেটা যদি ধরে রাখতে পারি তবে এ সফরে ভালো কিছু আমরা আশা করতে পারি।’

বাংলাদেশের হয়ে এখন তরুণ ক্রিকেটাররা আস্তে আস্তে পারফর্ম করতে শুরু করেছেন। তরুণদের চোখে অন্তত লড়াই করার সেই নেশাটা দেখা যায়। সবমিলিয়ে এখনই সময় বিদেশের মাটিতেও নিজেদের একটি দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। আর ক্রিকেট বিশ্বকে এটা জানান দেয়ার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে ভালো জায়গা আর কীই বা হতে পারে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...