তিন ডাক, এক প্রশ্ন ও অফুরন্ত অপমান

চট্টগ্রাম টেস্টের দারুণ ব্যাটিং ডিসপ্লের পর একেবারে উলটো চিত্র ঢাকা টেস্টের প্রথম দিন। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উইকেটে ব্যাটসম্যানদের কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে তা তো জানাই ছিল। তবে প্রথম দিন সকালে উইকেট যতটা না কঠিন পরীক্ষা নিয়েছে তারচেয়ে খানিক বেশিই অসহায়ত্ব দেখিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। প্রথম সেশনেই বাংলাদেশ হারিয়েছে পাঁচ উইকেট।

আসলে শুরুর চিত্রটা ছিল আরো করুণ। ইনিংসের প্রথম সাত ওভারের মধ্যেই বাংলাদেশ হারায় এই পাঁচ উইকেট। এর মধ্যে তিনজন ব্যাটসম্যানই আবার ফিরে গিয়েছেন রানের খাতা খোলার আগেই। মাহমুদুল হাসান জয়ের ডাক দিয়ে দিনের শুরু হয়। এরপর দুই সিনিয়র ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসানও হেঁটেছেন একই পথে। ওদিকে সাকিব নিজের ক্যারিয়ারে তেরো বছর পর হলেন গোল্ডেন ডাকের শিকার।

সব মিলিয়ে প্রথম সেশনেই বাংলাদেশের পরিকল্পনার ঘাটতি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরাও ব্যর্থ হয়েছেন ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিতে। টেস্ট শুরু আগে মিরপুরের উইকেট বড় ভয়টা ছিল স্পিনারদের নিয়ে। তবে ইনিংসের ২৪ রানেই বাংলাদেশ যে পাঁচ উইকেট হারিয়েছে তাঁর সবগুলোই নিয়েছেন পেসাররা। শ্রীলঙ্কার দুই পেসার নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেন এই পাঁচ উইকেট।

তবে মিরপুর টেস্টের প্রথম সেশন আরেকবার চোখে আঙুল তুলে দেখিয়ে দিল বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপের ঘাটতি গুলো। দুই ওপেনারের ব্যর্থতার দিনেও পরেও ব্যাটসম্যানরা নূন্যতম দায়িত্ব নিতে পারেননি। আজও অব্যাহত ছিল নাজমুল হোসেন শান্ত ও অধিনায়ক মুমিনুল হকের সৌরভের অফ ফর্ম।

ব্যাটিং লাইন আপের সবচেয়ে গরুত্বপূর্ণ পজিশন তিন নম্বর। অন্তত টেস্ট ক্রিকেটে এই পজিশনে দলের সেরা ব্যাটসম্যানই খেলেন। অথচ বাংলাদেশ এই পজিশনটা ছেড়ে দিয়েছে তরুণ নাজমুল হোসেন শান্তর কাঁধে। আর ক্যারিয়ারের শুরুতেই সেই চাপ কোনভাবেই সামলে উঠতে পারছেন না শান্ত। এতে সম্ভাবনাময় এই ব্যাটসম্যানের ক্যারিয়ারও হুমকির মুখে পড়ছে। এছাড়া বাংলাদেশও ম্যাচের শুরুতেই দ্রুত উইকেট হারিয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে।

তবে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপে এখন আরো বড় সমস্যা টেস্ট অধিনায়ক নিজেই। কোন ভাবেই অফ ফর্মের চক্র থেকে বের হতে পারছেন না মুমিনুল হক। টেস্টে নিজের শেষ ছয় ইনিংসেও ছুঁতে পারেননি দুই অংকের স্কোর। আজও এই ব্যাটসম্যান ফিরে গিয়েছেন মাত্র ৯ রান করেই। কোনোভাবেই যেন এই দুষ্ট চক্র থেকে বের হতে পারছেন না মুমিনুল।

মুমিনুল নিজের এই অফ ফর্ম নিয়ে চিন্তিত না হলেও বাংলাদেশ দলকে বেশ চিন্তায় পড়তেই হচ্ছে। কেননা চার নাম্বারে খেলা টেস্ট অধিনায়কের ব্যাট থেকে কয়েক সিরিজ ধরেই রান আসছে না। এছাড়া টেস্ট অধিনায়ক হবার পর থেকেই তাঁর ব্যাটিং পারফর্মেন্সের অবনতি হচ্ছে। ফলে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়াও হচ্ছেনা মুমিনুলের।

ওদিকে ব্যাটিং লাইন আপের সবচেয়ে বড় সার্কাসটা আসলে হচ্ছে লিটন দাসের। টেস্ট ক্রিকেটে এই মুহূর্তে পুরো ক্রিকেট দুনিয়ারই সেরাদের মত করে রান করছেন লিটন। গত এক বছরে তিনি বিশ্বের অন্যতম সেরা কিপার ব্যাটসম্যান। আছেন অবিশ্বাস্য ফর্মে। তবুও আজ লিটনকে বাংলাদেশ দল নামিয়েছে সাত নম্বরে।

অথচ চট্টগ্রাম টেস্টেও ছয় নম্বরে নেমে অসাধারণ এক ইনিংস খেলেছিলেন। ফলে লিটনকে আরেকটু উপরে খেলানোটা এবারও যৌক্তিকিই ছিল। অথচ আজ তাঁকে নামানো হলো আরো পরে। প্রথম সেশনে যেই উইকেটে ব্যাটসম্যানরা দাড়াতেই পারেননি, সেখানেই লিটন ব্যাটিং করছেন সাচ্ছন্দে। তাঁর ব্যাটে চড়েই এখন আবার ঘুরে দাড়াতে চাইছে বাংলাদেশ দল। সব মিলিয়ে প্রথম সেশনের এই তিন ডাক খানিকটা উপহাস মনে হলেও এটা আসলে দেখিয়ে দেয় বাংলাদেশের পরিকল্পনার অভাব ঠিক কতটা।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link