টিম ডেভিড, বিশ্বকাপের এক্স-ফ্যাক্টর

অবাক করা ব্যাপার হলো, ত্রিশোর্ধ্ব গড়ের পরেও তার স্ট্রাইক রেট ১৬৪.১৭! স্ট্রাইক রেটই বলে দেয় পাওয়ার হিটিংয়ে কতটা সফল তিনি। ১১৫ ইনিংসে ছক্কাই হাঁকিয়েছেন ১৬০ টা। প্রশ্ন হতেই পারে পাওয়ার হিটিং কি তার বড় ইনিংস খেলার পথে বাঁধা হয়েছে? মোটেই না। এর মাঝেই করেছেন ১১ টা ফিফটি।

ধারাবাহিকতা, স্ট্রাইক রেট, পাওয়ার হিটিং- টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে বর্তমানে এ তিনটিরই সমন্বয় ঘটানো ক্রিকেটারের সংখ্যাটা বেশ নগণ্য। নেই বললেই চলে। এর মাঝে এক ক্রিকেটারের ১৪ ম্যাচে ২৬ টা ছয়, ১৫৮ স্ট্রাইক রেট, স্ট্রাইক রেটের সাথে পাল্লা দিয়ে ৪৬ গড়। একদম ফুল প্যাকেজ যাকে বলে।

বড় এক চমক দিয়ে আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সবার আগে দল ঘোষণা করলো অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়ার দলে সেই চমকের নাম সিঙ্গাপুরের হয়ে এতদিন খেলা টিম ডেভিড। একালের টি-টোয়েন্টি ব্যাটিংয়ের ‘এক্স-ফ্যাক্টর’ তিনি।

টিম ডেভিড অনেকদিন ধরেই আলোচনায় ছিলেন। তার বিশেষত্ব হলো, স্ট্রাইক রেট ঠিক রেখে ধারাবাহিকভাবে রান করে যাওয়া। সেটা তার ক্যারিয়ারের দিকে চোখ মেললেই বোঝা যায়।  স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত ১১৫ ইনিংসে ব্যাট করেছেন। সেখানে ৩২.১৯ গড়ে রান করেছেন ২৬৪০।

তবে, অবাক করা ব্যাপার হলো, ত্রিশোর্ধ্ব গড়ের পরেও তার স্ট্রাইক রেট ১৬৪.১৭! স্ট্রাইক রেটই বলে দেয় পাওয়ার হিটিংয়ে কতটা সফল তিনি। ১১৫ ইনিংসে ছক্কাই হাঁকিয়েছেন ১৬০ টা। প্রশ্ন হতেই পারে পাওয়ার হিটিং কি তার বড় ইনিংস খেলার পথে বাঁধা হয়েছে? মোটেই না। এর মাঝেই করেছেন ১১ টা ফিফটি।

লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে তিনি আবার আরো এক ধাপ এগিয়ে। ২ সেঞ্চুরি আর ৫ হাফ সেঞ্চুরিতে ৮২.৭৭ গড়ে করেছেন ৭৪৫ রান। ৫০ ওভারের ক্রিকেট। সেখানেও স্ট্রাইক রেট ১২৩.১৪! সারমর্ম হলো, ফরম্যাট যেটাই হোক, মারকাটারি ইনিংস খেলায় তিনি এক প্রমাণিত সৈনিক। এ কালের গিলবার্ট জেসপ বললেও অবশ্য ভুল বলা হয় না।

টিম ডেভিড মূলত আলোচনায় আসেন ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট দিয়ে। আইপিএল থেকে শুরু করে বিগব্যাশ, পিএসএলে সমান তালে পারফর্ম করে গিয়েছেন তিনি। গতবারের আইপিএলে মুম্বাইয়ের হয়ে ৯ ম্যাচ ৩১.১৭ গড়ে ডেভিড ১৮৭ রান করেছিলেন। ১৬ ছক্কার সাথে স্ট্রাইক রেটটা ছিল ঈর্ষণীয়। ২১০.১১!

টিম ডেভিড সেই ফর্মটা ধরে রেখেছিলেন পিএসএলেও। ৩৯.৭১ গড়ে করেন ২৭৮ রান। স্ট্রাইকরেট ১৯৪.৪০।

অস্ট্রেলিয়া কেন তাকে হঠাৎই দলে ভেড়ালো সেই স্বপক্ষে আরেকটি পরিসংখ্যানও যুক্ত হতে পারে। ২০২১ থেকে এখন পর্যন্ত সব ধরনের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট মিলিয়ে সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেট টিম ডেভিডের(১৬৪.৫৬)। তাই অস্ট্রেলিয়ার মিডল অর্ডারে রানের গতি বাড়াতে টিম ডেভিড যে দারুণ সংযোজন হয়েছে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচক জর্জ বেইলি টিম ডেভিডকে স্কোয়াডে নেওয়ার ব্যাপারে বলেন, ‘ডেভিড ন্যাচারাল এক ট্যালেন্ট। আমাদের ব্যাটিং গভীরতা দরকার ছিল। ওর সংযোজন আমাদের দলকে আরো শক্তিশালী করবে বলে আশা করি। আশা করছি, ও এতবছর যে পজিশনে খেলেছে সেই পজিশনেই ওকে আমরা খেলাতে পারব।’

অজি অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চও টিম ডেভিডের সংযুক্তিতে বেশ উচ্ছ্বসিত। টিম ডেভিডের পাওয়ার হিটিং ছাড়াও তার অফ স্পিন অস্ট্রেলিয়া দলকে বিশ্বকাপে সহযোগিতা করবে বলে আশাবাদী ফিঞ্চ। অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি ক্রিকেটার রিকি পন্টিং নিজেও টিম ডেভিডকে দলে চেয়েছিলেন। সেই চাওয়া মিলে যাওয়াতে পন্টিং নিজেও বেশ খুশি হয়েছেন।

দ্য আইসিসি রিভিউ তে তিনি বলেন, ‘বেশ ক’বছর ধরে ও দুর্দান্ত ফর্মে আছে। আশা করছি ফিনিশিং রোলে ও দারুণ কিছু করে দেখাবে। টিম থ্রি ডাইমেনশনাল ক্রিকেটার। এমন ক্রিকেটার ওয়ার্ল্ডকাপে বেশি দরকার। স্টোয়িনিস, ম্যাক্সি, ওয়েডের সাথে ডেভিডের অন্তর্ভুক্তি অস্ট্রেলিয়া দলকে আরো শক্তিশালী করবে।’

নিজের ফর্মের সাথে টিম ডেভিড পাশে পাচ্ছেন নির্বাচক, অধিনায়ক থেকে শুরু করে গ্রেটদেরও শুভকামনা। সেই শুভকামনায় মাঠের ক্রিকেটে নিজেকে মেলে ধরতে পারবেন তো টিম ডেভিড?

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...