বাংলাদেশের হেড কোচ হয়ে চান্দিকা হাতুরুসিংহে ফিরেছেন আবার। মাঝে পেড়িয়ে গিয়েছে অনেকটা সময়। দেশের ক্রিকেট এগিয়ে গিয়েছে অনেক জায়গায়, আবার থমকেও আছে অনেক ক্ষেত্রেই। হাতুরুসিংহে সবসময়ই সেসবে নজর রেখেছেন।
আবার বাংলাদেশের ফেরার একটা সুপ্ত বাসনাও ছিল মনে। এবার অবশেষে ব্যাটে-বলে হয়েছে। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের জন্য বাংলাদেশের মাস্টারমাইন্ড হয়ে ফিরলেন হাতুরু।
তবে বাংলাদেশে ফেরার ব্যাপারে কী এবারই প্রথম আলোচনা হল? বিসিবি কী এই প্রথম তাকে প্রস্তাব দিয়েছে আবার বাংলাদেশে ফেরার জন্য? হাতুরু এবার কোচ হয়ে আসার পর নিজের প্রথম সংবাদ সম্মেলনে তার সরাসরি উত্তর দিলেন না।
তবে, ইঙ্গিত দিলেন টেবিলে আলোচনাটা এবারই প্রথম নয়। হয়েছে একাধিকবার, বিভিন্ন সময়ে। তবে এবার মিলেছে দুই পক্ষই। আবারো বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের দায়িত্ব কাধে নিয়েছেন চান্দিকা হাতুরুসিংহে।
হাতুরুসিংহে গতবার যখন চলে গিয়েছিলেন তখন অনেক উত্তরই অজানা ছিল। অনেকটা অপেশাদারিত্ব দেখিয়েই বিদায়টা হয়েছিল। ভুল হয়তো ছিল দুপক্ষেরই। তবে আবার যখন ফিরেছেন সেই পুরনো কথা তো উঠবেই। সেসব প্রশ্নের উত্তর তো তাকেই দিতে হত।
সিনিয়র ক্রিকেটারদের সাথে দ্বন্দ্বটাই ছিল সবার উপরের দিকে। সেই ক্রিকেটারদের চারজনই আছেন এখনো। তামিম ইকবাল ওয়ানডে দলের অধিনায়ক। সাকিব আল হাসান টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিমরাও এখনো খেলছেন একাধিক ফরম্যাটে।
ফলে এবার কী তাদের নিয়ে এগিয়ে যাওয়াটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ? চান্দিকা হাতুরুসিংহে সেসব মানছেন না। বললেন, ‘না, একেবারেই চ্যালেঞ্জ মনে করিনা। আমার সাথে ইতোমধ্যেই সিনিয়রদের কথা হয়েছে। আমার মনে হয় সবাই ফোকাস একটাই, টিম সবার আগে। এমনকি আগেরবারও ওদের সাথে কাজ করতে আমার কোন অসুবিধা হয়নি।’
গতবার বাংলাদেশ ছাড়ার আগে সাকিব আল হাসানের ক্রিকেটের প্রতি নিবেদন নিয়েও প্রশ্ন তুলে গিয়েছিলেন বিসিবির কাছে। দেশের প্রতি সাকিবের দায়িত্ববোধ নিয়ে কথা বলেছিলেন বোর্ডে। এমনটাই বলা হয়েছিল বিসিবিপক্ষ থেকে। তবে সেই সাকিবই এবার টেস্ট ও টি-টোয়েন্টির অধিনায়ক।
তবে এমন কথা একেবারেই অস্বীকার করে গেলেন হাতুরু। এই ধরনের কিছু তিনি বলেছেন এমনটা মানতেই রাজি নন। তার কাছে বরং এমন তথ্য নতুন। হয়তো পুরনো সব কথা ভুলেই এগিয়ে যেতে চান চান্দিকা। সেটা হলে দেশের ক্রিকেটের জন্যই মঙ্গল। কেননা তার কাধেই ওয়ানডে বিশ্বকাপের দায়িত্ব তুলে দেয়া হয়েছে।
২০১৫ বিশ্বকাপে তিনি বাংলাদেশকে কোয়ার্টার ফাইনালে নিয়ে গিয়েছিলেন। এরপর ২০১৭ সালেরও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ। এবারের বিশ্বকাপে কাপে কী সেসব সাফল্যকেও ছাড়িয়ে যেতে পারবে বাংলাদেশ?
হাতুরু অবশ্য এখনই অত বড় স্বপ্ন দেখতে চাননা। কেননা ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলার ঘোষণা দেয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে বলে মনে করেন না তিনি। কেননা বাংলাদেশ এখন ওয়ানডে র্যাংকিং এর সেরা চারেও নেই। ফলে বিশ্বকাপ ভারতে হলেও একেবারে সহজ হবেনা বাংলাদেশের জন্য।
হাতুরুসিংকে বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য সেরা ক্রিকেটারদের ফিটনেস ও ফর্মের দিকে নজর রাখা। তারা যেন সেরা টাচে থাকে। বাংলাদেশ এখনো কোন ফরম্যাটেরই এক নাম্বার দল না। ফলে খুব বঅড় কিছু করে ফেলব এমন বলাটা ঠিক হবেনা। তবে আমরা কাজ করব। আমাদের লক্ষ্য অবশ্যই ভালো কিছু করা। তাছাড়া আমাদের বড় সুবিধা যে খেলাটা উপমহাদেশে হচ্ছে।’
চান্দিকা হাতুরুসিংহে নিজের প্রথম পর্বে অনেক সাফল্যই বাংলাদেশকে এনে দিয়েছেন। সেজন্যই হেড কোচের চেয়ারটাতে আরেকবার নিয়ে আসা হয়েছে তাকে। তবে হাতুরু টেস্ট ক্রিকেটে সেই সময় ভরসা করতেন স্পিনারদের উপরই। ঘরের মাঠে স্পিনিং ট্র্যাক করে বড় দলগুলোর বিপক্ষে জয়ের মঞ্চ তৈরি করতেন তিনি। যার ফলে বাংলাদেশে পেসারদের উন্নতি হচ্ছিল না। তার সময়ে টেস্ট ক্রিকেটে পেসার ক্ষরাই ছিল।
তবে তিনি যাওয়ার পর টেস্টেই বাংলাদেশের পেসাররা সুযোগ পেতে শুরু করে। যার ফল হিসেবেই নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। দীর্ঘমেয়াদি সাফল্যের জন্য তো পেসারদের উন্নতিটাই বেশি জরুরি।
এবার টেস্ট ক্রিকেটে কী প্ল্যান নিয়ে এগোবেন তিনি? হাতুরু বলেন, আপনাদের মতে হোম অ্যাডভান্টেজ কী? আমরা যখন নিউজিল্যান্ডে যাব কী ধরনের উইকেট আমরা পাই? ভারত তাদের মাটিতে কী উইকেট তৈরি করে? বিদেশে আমরা যখন যাব তখন সেভাবেই খেলতে হবে। আপনার যখন মিসাইল থাকবেনা তখন গেরিলা যুদ্ধই তো করতে হবে।’
যুদ্ধ কীভাবে করবেন সেটা হাতুরুই ভালো জানেন। কেননা কাজটা তো তাকেই করতে হবে। গেরিলা যুদ্ধ করেই যদি সাফল্য পেয়ে থাকেন তাহলে বিসিবি নিশ্চয়ই তাতেই সায় দিবে। কিংবা ভবিষ্যতের কথা পরিকল্পনা করে মিসাইল তৈরিও করতে পারেন তিনি। আসলে কী হবে সেটা তো সময়ই বলে দিবে।