ম্যাচ উইনিং মেমোরিজ

ক্রিকেট পাড়ায় ফিনিশার শব্দটার প্রচলন সম্ভবত মাইকেল বেভানের হাত ধরেই। ফিনিশিংয়ে সংঙ্গাটা যেনো তার ব্যাটেই পরিচিতি পেয়েছে ক্রিকেটে। ফিনিশার হিসেবে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের কারণে সতীর্থদের কাছ থেকে পেয়েছিলেন ‘দ্য টার্মিনেটর’ আখ্যা। ব্যাট হাতে বিধ্বংসী ফিনিশিং ছাড়াও বল হাতে বেশ কার্যকর ছিলেন এই চায়নাম্যান!

বেভানের ক্যারিয়ারের সেরা মূহুর্তগুলোর মাঝে সেরা দশটি নিয়েই এই আলোচনা। সর্বকালের অন্যতম সের এই ওয়ানডে ফিনিশারের সেরা মূহুর্ত গুলো দেখে নেওয়া যাক।

  • ৭৮*- প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ১৯৯৯

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে মুখোমুখি অস্ট্রেলিয়া। বৃষ্টি বাঁধায় খেলা হয় ৪৩ ওভারের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেওয়া ১৭৩ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৩৮ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে অজিরা। ম্যাচের জয়ের সম্ভাবনা তখন একেবারেই ক্ষীন। এরপর দলের হাল ধরেন মাইকেল বেভান।

৭৪ রানে ৭ উইকেট হারানোর পর যেনো ম্যাচ থেকে আরও ছিটকে যায় অজিরা। অষ্টম উইকেটে পল রাইফেলের সাথে ৮৪ রানের অবিশ্বাস্য জুটির পথে দলকে টেনে তুলেন বেভান। এরপর দ্রুত রাইফেল ও ওয়ার্ন ফিরলেও শেষ বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে বেভানের ৮৮ বলে ৭৮ রানের হার না মানা ইনিংসে শেষ বলে ১ উইকেটের শ্বাসরুদ্ধকর জয় পায় অজিরা।

  • ১০২*- প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড, ২০০২

২০০২ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২৪৬ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ৮২ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে তখন মুখ থুবড়ে পড়েছে অস্ট্রেলিয়া। ক্রিজে ছিলেন মাইকেল বেভান। একপ্রান্তে দুর্দান্ত ব্যাটিং করে ১০২ রানের অপরাজিত ইনিংসে ওই ম্যাচে ২ উইকেটের অবিশ্বাস্য এক জয় পায় অজিরা। ৯৫ বলে ৭ চারে ১০২ রানে অপরাজিত থাকেন বেভান।

  • ৬৫ – প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা, ১৯৯৯

১৯৯৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনলে জয় নায়ক হিসেবে শেন ওয়ার্নকেই মানা হয়। আলোচনাও হয় তাকে নিয়েই। তবে সেদিনের জয়ের পেছনে অনবদ্য ভূমিকা ছিলো মাইকেল বেভানের। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৬৮ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর বেভানের ৬৫ ও স্টিভ ওয়াহর ৫৬ রানে ভর করেই ২১৩ রানের সংগ্রহ পায় অজিরা।

এই দু’জনের ব্যাট না হাসলে সেদিন হয়তো ডিফেন্ড করার মতো সংগ্রহই পেতো না অজিরা। ওয়ার্ন দাপটে পরবর্তীতে ২১৩ রানে প্রোটিয়ারা গুড়িয়ে গেলে ম্যাচ টাই হয়। গ্রুপ পর্বের জয়ের কারণে ফাইনালে পা দেয় অজিরা।

  • ১৮৫* – প্রতিপক্ষ এশিয়া একাদশ, ২০০০

২০০০ সালে এশিয়া একাদশ বনাম বিশ্ব একাদশের ম্যাচে এশিয়া একাদশের ৩২০ রানের জবাবে ৮ উইকেটে ৩১৯ রান করে বিশ্ব একাদশ। মাত্র ১ রানে হারার ম্যাচে দলের হয়ে ১৮৫ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন বেভান। ৫ ছক্কা ও ১৯ চার হাঁকান এই অজি তারকা। বেভান ছাড়া দলের কেউই পেরোতে পারেননি ত্রিশের কোটা।

  • টেস্ট ব্যাটিং

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৫৮ গড় হওয়া সত্ত্বেও টেস্টে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি বেভান। মাত্র ২৯.০৭ গড়ে রান করেছেন তিনি। ৮২, ০, ৭০ রানের ইনিংসে ১৯৯৪ সালে শুরুটা করেছিলেন বেশ। এরপর ১৯৯৭ এর অ্যাশেজ সিরিজে ব্যর্থতা, তাঁর জায়গায় সুযোগ পান রিকি পন্টিং।

  • ১০ উইকেট – প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ১৯৯৭

১৯৯৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অ্যাডিলেডে প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট শিকারের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট নিয়ে একাই ধসিয়ে দেন ক্যারিবিয়ানদের। ওই টেস্টের প্রথক ইনিংসে ৮৫ রানের অসাধারণ ইনিংসও খেলেন বেভান। শেন ওয়ার্নকে ছাপিয়ে ওই ম্যাচে অলরাউন্ড নৈপুণ্য দেখান বেভান। ওয়ার্নের চেয়ে ভালো এভারেজ থাকা সত্ত্বেও টেস্টে শিকার করেছেন মাত্র ২৯ উইকেট!

  • বেভানের বলে হুপারের সেই ফ্যান্সি ক্যাচ – ১৯৯৬

১৯৯৬ সালে এক টেস্টে কার্ল হুপারকে ৫৭ রানে ফেরান বেভান। বেভানের বল ব্যাট স্পর্শ করে স্লিপে যেতেই মার্ক টেলরের হাত থেকে ছুঁটে যায় বল। এরপর বুটে লেগে আবার ওই ক্যাচ তালুবন্দী করেন টেলর! ক্রিকেট ইতিহাসে ওই ক্যাচটি ‘টাবির ফ্যান্সি ফুটওয়ার্ক’ হিসেবেই পরিচিত।

  • ওয়ানডে ব্যাটিং গড় ৫৩.৫৮

বেশ কয়েক ম্যাচেই নট আউট থাকায় বেভানের ব্যাটিং গড়টা ৫৩.৫৮। কিন্তু সেসময় উইকেট বিবেচনায় শেষ ১০ ওভারে মারমুখী হয়ে খেলার পরেও যেভাবে তিনি উইকেটে টিকে ছিলে সত্যি অসাধারণ। ওয়ানডেতে তিনি সর্বকালের অন্যতম সেরা ফিনিশার হিসেবেই পরিচিত। তাঁর চেয়ে বেশি গড়ধারী চারজনই আধুনিক যুগের ক্রিকেটার!

  • ৭৪* – প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড, ২০০৩ বিশ্বকাপ

২০০৩ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০৫ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ২ বল বাকি থাকতে ২ উইকেটের শ্বাসরুদ্ধকর জয় পায় অস্ট্রেলিয়া। ১১৪ রানে ৭ ও ১৩৫ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ছিটকে পড়া অজিদের ৭৪ রানের অনবদ্য ইনিংসে ২ উইকেটের নাটকীয় জয় এনে দেন বেভান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link