ট্রাজিক হিরো তাওহিদ হৃদয়

সব নায়কই উপন্যাস শেষে হাসেন না, শুধু জিতলেই নায়ক বলা যায় না - কখনো কখনো নায়ক রয়ে যান পরাজিতদের দলে, কখনো কখনো তাঁকে অশ্রু লুকাতে হয় মলিন হাসিতে। বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ যদি কোন কালজয়ী উপন্যাস কিংবা চলচ্চিত্র হয় তবে তাওহিদ হৃদয় নিশ্চয়ই এমন এক ট্র্যাজিক হিরো।

সব নায়কই উপন্যাস শেষে হাসেন না, শুধু জিতলেই নায়ক বলা যায় না – কখনো কখনো নায়ক রয়ে যান পরাজিতদের দলে, কখনো কখনো তাঁকে অশ্রু লুকাতে হয় মলিন হাসিতে। বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ যদি কোন কালজয়ী উপন্যাস কিংবা চলচ্চিত্র হয় তবে তাওহিদ হৃদয় নিশ্চয়ই এমন এক ট্র্যাজিক হিরো।

হিরো-ই তো হৃদয়, স্রোতের বিপরীতে কি শক্ত করেই না হাল ধরেছিলেন তিনি। বারবার ভরসা জুগিয়েছেন ‘আমি তো আছি’। কিন্তু মুহূর্তের ভুলে কিংবা ভাগ্যের উপহাসে জয়ের মালা গলায় পরা হলো না তাঁর। ৮২ রানের দুর্দান্ত একটা ইনিংস খেলেও তাই মাঠ ছাড়তে হয়েছে মাথা নত করে।

একের পর এক উইকেট হারিয়ে টাইগাররা যখন চাপের মুখে, তাওহীদ হৃদয় তখন এসেছিলেন ত্রাতা হয়ে। শুধু কি মাঠের চাপ? না, আগের তিন ম্যাচে ব্যর্থতার ভারও তখন চেপে বসেছিল হৃদয়ের ভাবনায়।

কিন্তু তাতে কি, হৃদয় আরো একবার নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছিলেন; জিতে নিয়েছেন ‘হৃদয়’। দলের বিপর্যয়ে শুরুতে ধৈর্য ধরে খেলেছেন, এরপর শাসন করেছেন লঙ্কান বোলারদের। প্রথম ৭১ বলে করেছিলেন ৪৬ রান, অথচ পরের ২১ বলে করেছেন ৩৬ রান। কিন্তু সঙ্গীর অভাবে হৃদয় জিতেই ক্ষান্ত হতে হলো তাঁকে, ম্যাচ জেতাতে পারলেন না।

৯৭ বলে ৮২ – সাতটা চারের সঙ্গে আছে একটা বিশাল ছয়ের মার। ৮৪.৫৪ স্ট্রাইক রেটের এই ইনিংস যদি আরো কিছুক্ষণ চালিয়ে যেতে পারতেন এই ডানহাতি, তাহলে মাঝরাতে বেদনায় মুখ লুকাতে হতো না পুরো বাংলাদেশকে।

মাহিশ থিকসানার বলে এলবিডব্লুর ফাঁদে আটকা পড়েছিলেন তাওহিদ হৃদয়; বোঝার ভুল তো ছিলই, কিন্তু আউটে এর চেয়ে বেশি দায় অবশ্য আম্পায়ার্স কলের। প্রায় গুড লেন্থে পিচ করা বল বেরিয়ে যাচ্ছিল লেগ স্ট্যাম্প দিয়ে; বেনেফিট অব ডাউটের সুবিধা পাওয়ার কথ ব্যাটারেরই। কিন্তু অদৃষ্টের পরিহাসেই আঙুল তুলে দিলেন আম্পায়ার।

ডিআরএস নিয়েও শেষরক্ষা হয়নি; রিভিউ আরো আক্ষেপ বাড়িয়েছে। লেগ স্ট্যাম্পের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বলটা শুধু একটুখানি ছুঁয়ে গিয়েছিল কাঠের টুকরোকে – এতটুকুই অবশ্য যথেষ্ট হয়েছিল লঙ্কানদের জন্য, উল্লাসে ফেটে পড়েছে পুরো গ্যালারি।

হেরে গেলেও তাওহিদ হৃদয়ের এমন লড়াই বৃথা যায়নি। এই ইনিংস, এই মনোভাব নিশ্চয়ই আগামীদিনের জ্বালানি হবে হৃদয়ের জন্য। সামনে বিশ্বকাপের মত গুরুত্বপূর্ণ আসর, এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তাঁর ভবিষ্যত ক্যারিয়ার – উভয় ক্ষেত্রেই হয়তো ‘হিরো’ হয়ে উঠতে এই তরুণ তুর্কিকে সাহায্য করবে এবারের ‘ট্রাজিক হিরো’ হওয়াটা।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...