আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে মাপকাঠি ধরলে তাঁকে বড় কোনো কিংবদন্তি মনে করার সুযোগ নেই। তবে, ঘরোয়া ক্রিকেটকে মাপকাঠি ধরলে তার মানের ব্যাটসম্যান বাংলাদেশে আর আসেনি বললেই চলে। বিশেষ করে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে একদম শেষ মুহূর্ত অবধি তিনি ছিলেন দেশের ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যান।
সেই তুষার ইমরান সব ধরণের ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে ফেললেন। নিজের ৩৮ তম জন্মদিনের দিন জানিয়ে দিলেন, এখানেই শেষ। বিদায়ের আগে রেখে গেলেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে বিদায়ের ঘোষণা দিয়েছেন তুষার ইমরান। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আরো কিছুদিন খেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, ইনজুরির কারণে সেটা হয়ে ওঠেনি। তুষার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আগামীকাল প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিতে মাঠে যাব। দোয়া করবেন।’
জাতীয় লিগে গেল সাত নভেম্বর সিলেটে তিনি খেলতে নামেন রংপুরের বিপক্ষে। সেটাই তাঁর প্রতিযোগীতামূলক ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। দুই ইনিংস মিলিয়ে খুলনা বিভাগের এই ব্যাটসম্যান করেন ১৫ রান।
তুষার ইমরান জানালেন খেলোয়াড়ী জীবনের ইতি টানলেও থাকতে চান ক্রিকেটের সাথেই। খেলা ৭১ – কে তিনি বলেন, ‘আমি সেই ১৯৯৭ সাল থেকে ক্রিকেট খেলি। এই সম্পর্কটা রাখতে চাই। এখন শেখ জামালের প্রধান কোচ হিসেবে আছি। ক্রিকেট কোচ হিসেবে ক্রিকেটের সাথেই থাকতে চাই।’
কয়েকটা মৌসুম আগেই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সেঞ্চুরির পর সেঞ্চুরি করে গেছেন তিনি। সেই সময়টাকেই নিজের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সুন্দর সময় বলে মানেন তুষার। তিনি বলেন, ‘আমি ১০ বছর পর জাতীয় দলের ফেরার চেষ্টা করেছিলাম। আমি বিশ্বাস করি অন্তত ৭৫ ভাগ কাছাকাছি চলে এসেছিলাম জাতীয় দলের। আমি মনে করি, আমার চেষ্টায় আমি সৎ ও সফল ছিলাম। সেটাই আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সুন্দর সময়।’
আবার এটাই তুষারের সবচেয়ে বড় আক্ষেপও। তিনি বলেন, ‘জাতীয় দলে আসার চেষ্টা করেছিলাম। সেটা হয়নি। এটা একই সাথে তাই আমার ক্যারিয়ারের বড় আক্ষেপও। আমি ২০ বছরের বেশি সময় ধরে ক্রিকেট খেলছি। এই পরিচয়টা ছেড়ে গেছি। ফলে ছাড়ার আক্ষেপ তো আছেই। ইনজুরি ছিল, এই মৌসুমের শুরুতে খেলতে পারিনি। আরো কিছুদিন খেলার ইচ্ছা ছিল।’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেশের হয়ে পাঁচটি টেস্ট ও ৪১ টি ওয়ানডে খেলেছেন তুষার ইমরান। ওয়ানডেতে আছে দু’টো হাফ সেঞ্চুরি। সর্বশেষ জাতীয় দলে খেলেছেন ২০০৭ সালে। এর বছর দশেক বাদে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বিস্তর রান করে জাতীয় দলে ফেরার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছিলেন। কিন্তু, শেষ অবধি হয়নি ব্যাটে-বলে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১৮২ ম্যাচে ৩২ সেঞ্চুরি ও ৬৩ ফিফটিতে ৪২.৭৫ গড়ে ১১৯৭২ রান করেছেন তিনি। ক্যারিয়ার শেষ করলেন ১২ হাজার রানের মাইলফলক থেকে ২৮ রান দূরে থাকতে।
এটাও বড় একটা আক্ষেপ। তিনি বলেন, ‘জীবনে আক্ষেপ থাকবেই। ১২ হাজার রান থেকে ২৮ রান দূরে ছিলাম। সেটা করতে পারলাম না ইনজুরির কারণে।’
এটাই যেন তুষারের ক্যারিয়ারের সারমর্ম। অল্পের জন্য তিনি হতে পারেননি বাংলাদেশের মহাতারকা – ‘এত কাছে, তবুও দূরে!’