প্রশ্ন এড়াতে পারেন, দায় নয়!

ব্যাটিংয়ে ডানহাতি-বাঁহাতি কম্বিনেশন, বোলিংয়ে দুজন বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানের বিপক্ষে বাঁ-হাতি স্পিনারকে না আনা কিংবা একই পরিস্থিতিতে কোনো ডানহাতি লেগির হাতে বল তুলে না দেওয়ার মতো গৎবাঁধা নিয়মগুলা আমাদের অধিনায়কদের একেবারে মননে-মগজে গেঁথে আছে৷ শুধু যে বর্তমান অধিনায়কদের ক্ষেত্রে এমনটা হয়েছে তা নয়। আগেপরে আমাদের একাধিক সাবেক অধিনায়কের বেলায়ও এরকমটা দেখা গেছে।

ব্যাটিংয়ে ডানহাতি-বাঁহাতি কম্বিনেশন, বোলিংয়ে দুজন বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানের বিপক্ষে বাঁ-হাতি স্পিনারকে না আনা কিংবা একই পরিস্থিতিতে কোনো ডানহাতি লেগির হাতে বল তুলে না দেওয়ার মতো গৎবাঁধা নিয়মগুলা আমাদের অধিনায়কদের একেবারে মননে-মগজে গেঁথে আছে৷ শুধু যে বর্তমান অধিনায়কদের ক্ষেত্রে এমনটা হয়েছে তা নয়। আগেপরে আমাদের একাধিক সাবেক অধিনায়কের বেলায়ও এরকমটা দেখা গেছে।

এক্ষেত্রে সাবেক অধিনায়ক হিসেবে মুশফিকুর রহিমের নাম আসবে, আসবে আমাদের ইতিহাসেরই সবচেয়ে সফলতম অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা, এমনকি সেরা ক্রিকেট-মস্তিষ্ক হিসেবে সমাদৃত সাকিব আল হাসানের নামও।

যাকগে। বর্তমানে ফিরি। গত কয়েকমাস ধরেই এরকম গৎবাঁধা নিয়মের মুখস্থ প্রয়োগ মাঠে করার জন্য এবং পরে তা বুমেরাং হবার জন্য অধিনায়ক হিসেবে রিয়াদের দায়টা নি:সন্দেহে বেশি। কিন্তু দায়টা শুধু অধিনায়কের নয়, কোচেরও তথা পুরো টিম ম্যানেজমেন্টের। এখানে আরো তিনটা বিষয়ও আছে যেগুলা বললেই আসলে স্পষ্ট হয়, কোচ-অধিনায়কের সমন্বিত দায় ও ব্যর্থতার ব্যাপারটা৷

সদ্য সমাপ্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে গতকাল অবধি কোচ-অধিনায়কের সবগুলা প্রেস ব্রিফিংয়ের বক্তব্যেই স্পষ্ট তাঁরা দুজনই সমানতালে এই গৎবাঁধা নিয়মগুলা অন্ধের মতো বিশ্বাস করেন। ইন ফ্যাক্ট, টি-টোয়েন্টি দলে সাইফ হাসানের অন্তর্ভুক্তিও এই অন্ধবিশ্বাসেরই ফসল।

আবার হাইপোথ্যাটিকলি ধরছি, এই সিদ্ধান্তগুলা শুধুই কোচের, রিয়াদের মন:পূত নয়। ধরি, অধিনায়কের ওপর কোচ অনেকটা চাপিয়েই দিয়েছেন এই সিদ্ধান্তগুলা। এক্ষেত্রে কোচের দায়ের পাশাপাশি অধিনায়কের দায়টাও কম নয়। কেননা মাঠে তিনিই সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। কোচের কথামতো সবসময় তাঁকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে এমনটা নয়।

আবার মাঠের বাইরে কোচকে উপলব্ধি করানোর ব্যাপারটাও অধিনায়কেরই দায়িত্ব। এখানে পুরা বিষয়টাই গাট ফিলিংয়ের। যেমন, মাশরাফিকে বেশ কয়েকবার আমরা দেখেছি কোচের বিরুদ্ধে গিয়েও নিজের সিদ্ধান্তটা মাঠে প্রয়োগ করতে কিংবা মাঠের বাইরে কোচকে কনভিন্স করতে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ২০১৫ সালে ভারতের বিপক্ষে মুস্তাফিজুর রহমানের ওয়ানডে অভিষেকে কোচের বিন্দুমাত্র সম্মতি ছিল না। মাশরাফি নিজে কোচকে কনভিন্স করে তখন মুস্তাফিজকে খেলিয়েছিলেন। বাদবাকিটা তো সবাই জানেন!

এবার মনে করি, এইসব গৎবাঁধা নিয়মগুলোর প্রয়োগ কেবল অধিনায়কের ইচ্ছাতেই হচ্ছে। কোচের না। সেক্ষেত্রে রিয়াদের পাশাপাশি টিম ম্যানেজমেন্টের ইন্ট্রেগ্রাল পার্ট হিসেবে কোচও এই দায়টা এড়াতে পারেন না। যখন রিয়াদের এই সিদ্ধান্তগুলা একের পর এক বুমেরাং হচ্ছে তখন কোচেরই দায়িত্ব তাঁকে এসব থেকে সরিয়ে আনা। শুধু একটা-দুটা ম্যাচে হলে আজ আর এসব লিখতে বসতাম না। এই ডমিঙ্গোর মেয়াদে রিয়াদ অধিনায়ক থাকাকালীন অবস্থায় বেশ কয়েকবার এরকম সিদ্ধান্তে বলি হতে হয়েছে বাংলাদেশকে।

এতসব বকবক শেষে সারমর্মে আসা যাক। উপরে উল্লিখিত তিনটা বিষয়ের মধ্যে প্রথমটাই হলো রূঢ় বাস্তবতা। বাকি দুইটা শুধুই বিষয়গুলা পরিষ্কার করার জন্য তুলে ধরা। ওহ, আরেকটা কথা। লেখায় বারবার ‘টিম ম্যানেজমেন্ট’ শব্দটা প্রয়োগ করে এখন মনে হচ্ছে বিপাকেই পড়েছি। ব্যাকরণের নিয়মে বোধ হয় বাক্যের যোগ্যতাও হারিয়েছে। কেননা অধিনায়ক স্বয়ং যখন বলেন ‘মুশফিক রিলেটেড কুয়েশ্চেনের বেস্ট আন্সার দিতে পারবে টিম ম্যানেজমেন্ট’ কিংবা ‘আমি তো ডিসিশন নিই না’, তখন বাক্যের যোগ্যতা যে ক্ষুণ্ণ হয়েছে তা নি:সঙ্কোচে বলাই যায়।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...