ক্রিকেটে একই পরিবারের দুই সদস্য একসাথে মাঠে নেমেছেন, এমন উদাহরণ আছে অনেক। সেই দুই সদস্য দুই ভাই যেমন আছে, তেমনি বাবা আর ছেলেও আছেন। তিন-চার ভাই একসাথে খেলে ফেলার ঘটনাও একেবারে কম নয়।
তবে ক্রিকেট মাঠে কখনও কখনও দেখা গেছে যমজ দুই ভাই বা বোনকেও। আজকে তাহলে যমজ জোড়ার গল্প হোক। খেলা ৭১-এর এই তালিকায় জায়গা পেয়েছেন ক্রিকেটের বিখ্যাত কিছু জমজেরা।
- ওয়াহ ভ্রাতৃদ্বয়
মার্ক ওয়াহকে দলে জায়গা দিতে বাদ পড়েছিলেন দুই মিনিটের বড় স্টিভ। এই গল্পটা সবার জানা। সেই সাথে এটাও জানা যে, পরে দু জনে কেমন একসাথে রাজত্ব করেছেন।
স্টিভ ওয়াহ আর মার্ক ওয়াহ দীর্ঘদিন ধরেই খেলেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে এই দুজনের রেকর্ডটাও বেশ ভাল। দুজনে মিলে রান করেছেন ৩৫ হাজার; যার মধ্যে সেঞ্চুরিই আছে ৭৩ টা! তবে শুধু ব্যাটিং এই না, বোলিং রেকর্ডও এই জুটির বেশ উজ্জ্বল। একত্রে তাঁরা নিয়েছেন প্রায় ৪০০ উইকেট। ক্যারিয়ার জুড়েই দুজন ছিলেন একাদশের প্রথম পছন্দ।
- শেভিল বোনেরা
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা যমজ খেলোয়াড়দের মধ্যে শেভিল বোনেরাই আসলে প্রথম উদাহরণ। ফার্নি শেভিল, আইরিন শেভিল, এসি শেভিল- তিন বোন খেলেছেন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে।
এদের মধ্যে ফার্নি ছিলেন ডানহাতি পেসার, আইরিন ছিলেন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান আর এসি শেভিল ছিলেন পুরোদস্তুর ব্যাটসম্যান। তিনজনই অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেললেও মাত্র একবারই তাঁরা একইসাথে মাঠে নামতে পেরেছিলেন- ১৯৩৪ সালে ইংল্যান্ডের সাথে একটি টেস্টে।
- মার্শাল ভ্রাতৃদ্বয়
হ্যামিশ মার্শাল আর জেমস মার্শাল ছিলেন একই ম্যাচে মাঠে নামা পুরুষ যমজ ক্রিকেটারদের মধ্যে প্রথম উদাহরণ। নিউজিল্যান্ডের হয়ে মাঠে নামা সেই ম্যাচটা হয়েছিল অকল্যান্ডে, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। উদাহরণটা অবশ্য খুব বেশিদিনের পুরনো নয়। এই ২০০৫ সালের ঘটনা এটা। মাঠে রিকি পন্টিং তাঁদের দু’জনকে আলাদাই করতে পারছিলেন না।
- রিপন ভ্রাতৃদ্বয়
ডাডলি রিপন আর সিডনি রিপন জন্মেছিলেন কেনিংসটনে। ইংলিশ কাউন্টিতে দুজনই খেলতেন সমারসেটের হয়ে। সমারসেটের হয়ে তাঁদের একত্রে বেশ কিছু রেকর্ডও আছে, যার কয়েকটা তো বইয়ের পাতায়ও জায়গা করে নিয়েছে।
- বেডসার ভ্রাতৃদ্বয়
ইংল্যান্ডের এই যমজ জোড়াকে চাইলে সবচাইতে জনপ্রিয় যমজ বলে চালিয়ে দেওয়া যায় । সারের হয়ে এরিক বেডসার আর অ্যালেক বেডসার খেলেছেন প্রায় ১৫ বছর। অ্যালেক ছিলেন ডানহাতি মিডিয়াম ফাস্ট বোলার আর এরিক ছিলেন ডানহাতি অফ ব্রেক বোলার। বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিং এও দারুণ কার্যকরী ছিলেন এই দুই ভাই। সারের হয়ে তাঁরা মোট সাতবার টাইটেল জিতেছেন।
- বেডসার ভ্রাতৃদ্বয় (দক্ষিণ আফ্রিকা)
নাহ, ভুল করে পুনরাবৃত্তি করিনি। ক্রিকেট আসলেই আরেক বেডসার জোড়াকে দেখেছে আর এবারের ঘটনা ইংল্যান্ডের নয়। মজার ব্যাপার হল, এদের দুজনের নামও ছিল এরিক বেডসার ও অ্যালেক বেডসার। তবে নামের বানানে অবশ্য কিছুটা ভিন্নতা ছিল।
সারের প্রচন্ড ভক্ত ছিলেন এই বেডসার ভাইয়েদের মা। তিনিই এরিক ও অ্যালেকের নামে নিজের দুই জমজ সন্তানের নাম রাখেন। কাকতাল হলো, তারাও কালক্রমে বিখ্যাত ক্রিকেটার হয়ে ওঠেন।
- ব্ল্যাকওয়েল বোনেরা
অ্যালেক্স ও কেট ব্ল্যাকওয়েল – তাঁরা কেবল ‘আইডেন্টিকাল টুইন’ই নন, ২০০৪ সালে এক সাথে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ওয়ানডে খেলে ইতিহাসও গড়েন। জন্ম ১৯৮৩ সালের ৩১ আগস্ট। ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে নারী বিশ্বকাপ জয় করা এই দুই বোনই মিডল অর্ডার ব্যাটার।
- ডেন্টন ভ্রাতৃদ্বয়
বিলি ডেন্টন আর জন ডেন্টন ছিলেন আরেক ইংরেজ যমজ। নর্থহ্যাম্পটনশায়ারে জন্ম নেওয়া এই দুই ভাই দেশের হয়ে খেলেছেন একশোরও বেশি ম্যাচ। কাউন্টি ক্রিকেটেও নর্থহ্যাম্পটনশায়ারের হয়ে ওপেন করা এই দুই ভাই ছিলেন দারুণ কার্যকরী এক জুটি।
- মাতামবানাজোস ভ্রাতৃদ্বয়
নামটা কঠিন- এভারটন ভিকমবেরেরো মাতামবানাজো! কঠিন নামের এই খেলয়াড়টি জিম্বাবুয়ের হয়ে খেলেছেন তিনটি টেস্ট। খুব বেশি যে সাফল্য পেয়েছেন তা বলা যাবে না। তবে তাঁর যমজ ডার্লিংটন মাতামবানাজোসের অবশ্য টেস্ট অভিষেকের সুযোগটুকুও হয়নি, আজীবনই খেলেছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে।
- জয়েস বোনেরা
আয়ারল্যান্ডের জয়েস – এটুকু শুনলে প্রথমেই ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের সাবেক ব্যাটসম্যান এড জয়েসের কথা মনে পড়ে। তবে, মজার ব্যাপার হল এড জয়েসের দুই বোন সিসিলিয়া ও ইসাবেলও ক্রিকেটার। শুধু তাই নয়, তাঁরাও জমজ।
- টেইলর ভ্রাতৃদ্বয়
বাকিংহামশায়ারে জন্ম নেওয়া মার্ক টেইলর আর ডেরেক টেইলর অবশ্য বেশ আইকনিক যমজ। তবে একই পরিবারের হলেও দুজনই কিন্তু খেলেছেন ভিন্ন ভিন্ন কাউন্টি দলের হয়ে। মিডিয়াম পেস অলরাউন্ডার মাইক টেইলর যেমন খেলছেন নটিংহ্যামশায়ার আর হ্যাম্পশায়ারের হয়ে, অন্যদিকে উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান ডেরেক টেইলর খেলেছেন সারে ও সমারসেটের হয়ে।
- সিগন্যাল বোনেরা
লিজ সিগন্যাল আর রোজ সিগন্যাল খেলেছেন নিউজিল্যান্ডের হয়ে। মজার ব্যাপার হল, এই দুজনের অভিষেকও হয়েছিল একইসাথে। ১৯৮৪ সালে হেডিংলির সে ম্যাচের পর অবশ্য রোজের আর দেশের হয়ে মাঠে নামা হয়নি, তবে আরো লিজও আরো পাঁচ ম্যাচের বেশি দলে টিকতে পারেননি। তবে ততদিনে ইতিহাস হয়ে গেছে, এই দুই বোন হয়ে গেছেন নিউজিল্যান্ডের হয়ে খেলা প্রথম কোন যমজ ক্রিকেটার।