আরব আমিরাতের কিউই বধ, নেপথ্যে ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট

সংযুক্ত আরব আমিরাতের জন্য ব্যাপারটা রূপকথার মতোই। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি যে টি-টোয়েন্টিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয় পেয়েছে! এর আগে টেস্ট প্লেয়িং দেশগুলোর মধ্যে আয়ারল্যান্ড, আফগানিস্তান আর জিম্বাবুয়েকে হারানোর কীর্তি আছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের। তবে নিউজিল্যান্ড বধ অন্য যে কোনো জয়ের চেয়েও স্মরণীয় হয়ে থাকলো দেশটির জন্য। 

সংযুক্ত আরব আমিরাতের জন্য ব্যাপারটা রূপকথার মতোই। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি যে টি-টোয়েন্টিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয় পেয়েছে! এর আগে টেস্ট প্লেয়িং দেশগুলোর মধ্যে আয়ারল্যান্ড, আফগানিস্তান আর জিম্বাবুয়েকে হারানোর কীর্তি আছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের। তবে নিউজিল্যান্ড বধ অন্য যে কোনো জয়ের চেয়েও স্মরণীয় হয়ে থাকলো দেশটির জন্য।

২০১৪ সাল থেকে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে পথচলা শুরু সংযুক্ত আরব আমিরাতের। এ সময়কালে দুবাইয়ে ৮ টি ম্যাচ খেললেও কখনোই জয়ের খাতা খুলতে পারেনি তাঁরা। তবে দুবাইয়ের এ মাঠে তাদের প্রথম জয়টা আসলো শক্তিশালী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে।

নিউজিল্যান্ডের কাছেও অবশ্য এমন তিক্ত অভিজ্ঞতা প্রথম। এর আগে সহযোগী দেশগুলোর বিপক্ষে ৩৮ টি ম্যাচ খেললেও কখনোই পরাজয়ের মুখ দেখেনি কিউইরা। প্রথম সহযোগী দেশ হিসেবে নিউজিল্যান্ডকে সেই পরাজয়ের তিক্ত স্মৃতি উপহার দিল সংযুক্ত আরব আমিরাত।

কিউইদের বিপক্ষে ৭ উইকেটের এ জয় পাওয়ার পরই ক্রিকেট বিশ্বে যেন একটা বিস্ময়ের সুর বইছে। তবে ভারতের স্পিনার রবিচন্দন অশ্বিন অবশ্য তাতে অবাক হন নি। তাঁর মতে, এটি ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের বিশ্বায়নেরই সুফল। এর পাশাপাশি তিনি টুইটারে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে অভিনন্দনও জানিয়েছেন।

ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট নিয়ে অশ্বিনের কথাটা যথার্থই বটে। ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট ক্রিকেটারদের দুয়ার খুলে দিয়েছে। এর আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের গণ্ডিতে প্রতাপ ছড়াত শুধু টেস্ট প্লেয়িং দেশগুলোই। কিন্তু এখন সেই চিত্র বদলে গিয়েছে।

ক্রিকেটে ওভার যত কমেছে, দুই দলের মধ্যে জয়-পরাজয় ভাগ্য নির্ধারণও তত দুরূহ হয়ে পড়েছে। এ কারণে এবারের ১০ দলের বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আয়ারল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ে সুযোগ পায়নি। তবে নন টেস্ট প্লেয়িং দেশ হয়েও নেদারল্যান্ডস জায়গা করে নিয়েছে।

মূলত ক্রিকেটের বিশ্বায়নটা সম্ভবপর হচ্ছে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট দিয়েই। আরো নির্দিষ্ট করে বলল, ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের আধিক্য নিয়ে নানান সমালোচনা হলে, তা এক অর্থে ক্রিকেটারদের আরো পরিণত করতে সাহায্য করছে।

এই যেমন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের অধিনায়ক মোহাম্মদ ওয়াসিমের অভিজ্ঞতা রয়েছে পিএসএল, গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি কানাডার মতো টুর্নামেন্ট খেলার। এ ছাড়া নিজ দেশের ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট ইন্টারন্যাশনাল লিগ টি-টোয়েন্টি (আইএলটি) খেলারও অভিজ্ঞতা আছে তাঁর।

আর এই অভিজ্ঞতায় তাঁকে পৌঁছে দিয়েছে সাফল্যের শিখরে। এই মুহূর্তে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সেরা ১০ ব্যাটারের ছোট তালিকায় একমাত্র সহযোগী দেশের ক্রিকেটার তিনি। আছেন ৬ নম্বরে। পিছনে ফেলেছেন ডেভন কনওয়ে, জশ বাটলারের মতো বিশ্বনন্দিত ব্যাটারদের।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয় পাওয়া ম্যাচে মোহাম্মদ ওয়াসিম নিজেও জাত চেনাতে ভুল করেননি। তাঁর ২৯ বলে ৫৫ রানের ইনিংসেই ম্যাচ জয়ের একটা ভিত্তি পেয়ে যায় সংযুক্ত আরব আমিরাত। তবে নিউজিল্যান্ডকে ১৪২ এ আটকে রাখার কাজটা করেছিলেন স্পিনার আয়ান আফজাল খান। ৩ উইকেট পাওয়া এ স্পিনারের কাছেই গিয়েছে ম্যাচসেরার পুরস্কার।

উল্লেখ্য ব্যাপার হলো, সংযুক্ত আরব আমিরাতের এই স্পিনারেরও রয়েছে ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা। সদ্য শেষ হওয়া গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি কানাডায় মন্ট্রিয়েল টাইগার্সের হয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পুষ্পমাল্য তাঁর গলাতেও উঠেছে।

মোদ্দাকথা হলো, ক্রিকেটারদের ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটে খেলার অভ্যস্ততা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। ক্রমেই যেন খর্বশক্তি শব্দটা বাইশ গজের ক্রিকেটে বিলীন হওয়ার পথে। কারণ এখন সহযোগী দেশগুলো প্রায়ই চমকে দিচ্ছে।

২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কথাই ধরা যাক। ঐ এক আসরেই নেদারল্যান্ডস দুটি টেস্ট প্লেয়িং দেশ জিম্বাবুয়ে ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছিল। আবার সুপার ১২ তে জিম্বাবুয়ে হারিয়েছিল পাকিস্তানকে, যারা বারা ৪ সেমিফাইনালিস্ট দলের একটি ছিল।

ওদিকে ঐ বারের আসরের চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে সুপার ১২ তে হারিয়েছিল আয়ারল্যান্ড। অর্থাৎ, ২০ ওভারের ক্রিকেট এখন আর দলের শক্তিমত্তা দেখে ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণের গণ্ডিতে আটকে নেই। বরং নিজেদের দিনে যে কোনো দল বড় দলগুলোকে হারিয়ে দিতে পারে।

সাম্প্রতিক সময়ের টি-টোয়েন্টি ম্যাচ গুলো সেই বার্তা দিচ্ছে। অবশ্য এই পরিবর্তনের মূলে রয়েছে ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট। এই সময়ে এসে ক্রিকেটাররা যে পরিমাণে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলার সুযোগটা পায় তার সিংহভাগই থাকে ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের সৌজন্য।

আর ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট শুধু ক্রিকেটের বিশ্বায়নই ঘটাচ্ছে না, একই সাথে ক্রিকেটকে আরো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণও করে তুলছে। যেটির ধারা সামনেও অব্যাহত থাকার পথে রয়েছে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...