ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া উইকেট তুলতে পটু প্যাট কামিন্স। ডান হাতের ব্যাটারদের জন্য ইন-সুইংগার এবং বাম হাতের ব্যাটারদের পায়ের পাতা উপড়ানো ইর্য়কারের জন্য বিখ্যাত মিশেল স্টার্ক।
সবশেষে জেমস অ্যান্ডারসনের মত স্যুইং, ক্যাগিসো রাবাদার মত গতি আর জাসপ্রিত বুমরাহের মত তীক্ষ্ণ আক্রমণেরর সংমিশ্রণে গড়া জশ হ্যাজেলউড। অস্ট্রেলিয়ার পেস ত্রয়ী যেন দুর্ভেদ্য।
২০১৭ সালের নভেম্বরে একসাথে খেলতে শুরু করে এই তিনজন। এখন টেস্ট ক্রিকেটে ইতিহাসের তৃতীয় সর্বোচ্চ সফল পেস ত্রয়ী। একত্রে খেলা ৬২ ম্যাচে তারা ৩৯৬ উইকেট নিয়েছে তারা, গড় ২৫.৩৩ এবং প্রতি ৪৯.৫ বল পরপর একটি উইকেট।
শুধু দক্ষিণ আফ্রিকার ডেল স্টেইন, মরনে মর্কেল এবং ভার্নন ফিলান্ডারের স্ট্রাইক রেট (৪৮.৮৭) তাদের চেয়ে ভালো। তাদের পূর্বসূরি জেসন গিলেস্পি পর্যন্ত তাদের শ্রেষ্ঠত্বের কথা বলেছেন। গিলেস্পি বলেছিলেন, ‘তারা অস্ট্রেলিয়ার সেরা পেস বোলিং ত্রয়ী।’
তাদের সম্পর্কটা স্পেশাল। তারা একে অপরের সাফল্যে খুশি, প্রতিযোগিতা করলেও অহংকার নেই। কামিন্স এক কলামে বলেছেন, ‘আমাদের মধ্যে কোনও অহংকার নেই, একে অপরের প্রতি পূর্ণ সম্মান রয়েছে।’
তারা প্রত্যেকে স্কিলফুল, একসাথে তারা এক অপার ক্ষমতার সৃষ্টি করেছেন। ১৩ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে গতির ঝড় তোলা স্টার্কের গতিটা যদিও এখন একটু কমেছে।
তবে, দ্রুত লেন্থ পরিবর্তন, গতি বদল বা ইনসুইংটা আজও ভয়ানক ধারালো। নতুন বলে ভারতীয় ব্যাটারদের নাকানি চুবানি দিতে প্রস্তুত তিনি। গোলাপি বলে ১৮.০৩ গড়ে ৬৫ উইকেট যেন তারই আগাম জানান দেয়।
কামিন্স যেমন বলেন, ‘স্টার্কের প্রথম স্পেল আমাদের কাজ অনেক সহজ করে দেয়।’ হ্যাঁ, স্টার্কের বলবান সূচনাকে বেগবান করেন কামিন্স!
নির্ভুল লাইন লেন্থ আর আগুনে পেস নিয়ে তারপরেই প্রস্তুত হ্যাজেলউড। তার গতিটা অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি গ্লেন ম্যাকগ্রা থেকেও বেশি। তাকে ‘সেট-আপ’ মাস্টারও বলা হয়।
প্রথম কয়েকটি বল চতুর্থ স্টাম্পের দিকে করেন। এতে করে ব্যাটারের ফ্রন্ট ফুটটা ব্লকড হতে শুরু করে, এরপরে দুই-তিনটা বল একটু ওয়াইডার দিয়ে ধুপ করে আবার একটা চতুর্থ স্টাপে ইংস্যুইং করা বল।
বলের লাইন বুঝতে না পেরে ব্যাটের কানায় লেগে স্লিপে না হলে উইকেট কিপারের কাছে ক্যাচ। এ যেন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে গেছে হ্যাজেলউডের জন্য। চতুর্থ ও পঞ্চম স্টাপের বলে খোঁচা দিয়ে উইকেট বিলিয়ে আসা কোহলির জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে।
এই দুইজন থেকেও পরিত্রাণ কোনভাবে পেয়ে গেলেও তারপর আসবে কামিন্স। চোখের পলকে যে বলের গতি ১৩০ থেকে ১৪৫ এ নিয়ে আসতে পারে, ভ্যারিয়েশন আর ট্রিকসে ঘুরিয়ে দিতে পারে ম্যাচের মোড়।
রোহিত শর্মাকে ১০ ইনিংসে চারবার, কোহলিকে ১২ ইনিংসে পাঁচবার, রুট কে ৩১ ইনিংসে ১১ বার কিংবা ১৯ ইনিংসে পূজারা কে ৮ বার আউট করার পরিসংখ্যানই তার দক্ষতার পরিচয় দেয়। কোকাবুরা বলের শাইনটা নষ্ট হলেই যেন জাদুর বাক্স খোলা শুরু করেন কামিন্স।
তিনজনই এখন মিড থার্টিসে। একসাথে জিতেছেন সাদা বলের বিশ্বকাপ, অ্যাশেজ সহ বহু সিরিজ, খেতাব। তবে, অর্জনের খাতায় যুক্ত হতে বাকি একটা পালক।
একসাথে জেতা হয়নি বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি। শেষ বেলায় সেটি জিতিয়েই হয়ত সবটা রাঙিয়ে জেতে চাইবেন তাঁরা।