উনিশের ১৯ বছরের মুলতান আক্ষেপ জয়

মুলতান। শব্দটা শুনলেই বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তরা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। যেন মনের অনেক গভীরে লুকিয়ে থাকা ক্ষতটাকে খোঁচা দেয় শব্দটা। ২০০৩ সালে মুলতান টেস্ট হেরে চোখে জল নিয়ে মাঠ ছেড়েছিল খালেদ মাহমুদ সুজনের দল। আজ প্রায় দুই দশক পর সেই ক্ষতটায় কেউ একটু মলম দিল যেন। সেই মুলতানেই এবার রঙিন পোশাকে রঙিন স্মৃতি এনে দিল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল।

২০০৩ সালের পুচকে বাংলাদেশ পারেনি। খালেদ মাহমুদ সুজনরা লড়াই করেও শেষ পর্যন্ত হেরে গিয়েছিলেন ইনজামাম উল হকের ব্যাটে। তবে আজ সেই মুলতানে মুখে হাসি নিয়েই ফিরেছেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক আহরার আমিন। পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে তাঁর দল।

দলের বিপদেও হাল ধরেছিলেন দক্ষ মাঝির মতই। বাংলাদেশের ম্যাচ ও সিরিজ জিততে হলে করতে হত ২২১ রান। অথচ ১১৩ রানেই পাঁচ উইকেট হারিয়ে বসে উনিশ না পেরোনো যুবারা। তখনই ঠান্ডা মাথায় দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে গেলেন অধিনায়ক। ৫২ রানের ইনিংস খেলে যখন মাঠ ছাড়ছেন তখন দলের জয় প্রায় নিশ্চিত।

বাংলাদেশ পাঁচ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর শেষ পর্যন্ত থেকেই দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন অধিনায়ক আহরার আমিন। সেই সময়ে তাঁদের পরিকল্পনা নিয়ে আমিন খেলা ৭১ কে বলেন, ‘আমাদের জন্য ম্যাচটা জেতা জরুরি ছিল। আমি যখন ব্যাটিং করি তখন পাঁচ উইকেট পড়ে গিয়েছে। তখন আমরা ঠিক করি শেষ পর্যন্ত ব্যাট করার। শেষ দিকে বেশি রান প্রয়োজন হলেও আমরা করতে পারব এমন একটা বিশ্বাস ছিল আমাদের দুজনের।’

এছাড়া পাকিস্তানের সাথে খেলা মানেই বাড়তি উত্তেজনা। সাথে মুলতান টেস্টের সেই স্মৃতি জানা ছিল আমিনদেরও। তিনি বলছিলেন,’ আমরা এখানে এসেই শুনেছি সেই টেস্টের গল্প। আমরা তাই টেস্টটা জিততে চেয়েছিলাম। যাই হোক, ওয়ানডে জিততে পারবো সেই আত্মবিশ্বাস আমাদের ছিল। আমরা ফোকাসড ছিলাম, এখনও আছি। কেননা আমাদের মূল টার্গেট অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ।’

এছাড়া এই যুব দলের ম্যানেজার হিসেবে আছেন বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটার হান্নান সরকার। ২০০৩ সালের সেই মুলতান টেস্টে তিনি ছিলেন বাংলাদেশের ওপেনার। উনিশ বছর পর আবার মুলতানে ফিরে গিয়ে নিজের আবেগটা ধরে রাখতে পারেননি তিনিও।

হান্নান সরকার বলছিলেন, ‘আসলে প্রথম যেদিন মুলতানে আসলাম সেদিনই ২০০৩ সালের কথা মনে পড়েছে। ১৯ বছর পর আবারও সেই মুলতানে আসলাম। এটা আমাদের জন্য আবেগের জায়গা। ইনজামাম শেষ বলে যখন চারটা মারল আমরা সবাই কেঁদে মাঠ থেকে বের হয়েছিলাম। ওই সময়ে পাকিস্তানের সাথে টেস্ট জিততে পারলে আমাদের জন্য অনেক বড় পাওয়া হত। তবে এখন সবকিছুই বদলে গিয়েছে। এবার ছেলেরা ভাল খেলেছে। ওদের জন্য এই জয়টা খুব কাজে দিবে।’

ওদিকে সবাই যখন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়ে ব্যস্ত তখনই দেশ ছেড়েছিল বাংলাদেশ যুব দল। উনিশ বছর না পেরোনো এই ক্রিকেটাররা খেলতে গিয়েছিলেন পাকিস্তানে। সেখানে আরেকবার নিজেদের দিকে সবার দৃষ্টি কেড়ে নিয়েছেন এই ক্রিকেটাররা। মুলতানে আজ পাকিস্তান অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয় করল বাংলাদেশ।

তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে আজ ছিল ডিসাইডার। প্রথম দুই ম্যাচে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান দুই দলই ম্যাচ জিতেছিল একটি করে। আর শেষ ম্যাচে কাঙ্খিত সেই জয়টাই তুলে নিয়েছে এই যুব ক্রিকেটাররা। পাকিস্তান অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে ৪ উইকেটে হারিয়ে সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে।

মুলতান আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাট করে পাকিস্তান। সেখানে তায়াব আরিফের ৮৭ রানে ভর করে ২২০ রানের সংগ্রহ গড়ে পাকিস্তান। জবাবে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের তিন ব্যাটার অর্ধশতকের দেখা পান। ওপেনার আশিকুর রহমান শিবলি ৫৬ বলে ৭২ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন। শিবলি নিজের ইনিংসটি সাজিয়েছেন ১১ চার ও ২ ছয় দিয়ে।

এরপর অধিনায়ক আহরার আমিন ও পারভেজ রহমান জীবন ৮৫ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান। দুজনেই পেয়েছেন অর্ধশতকের দেখা দেখা। ৭০ বলে ৫২ রান করে আহরার আউট হলেও দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন পারভেজ। ৫৯ বলে ৫৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন তিনি।

শেষ পর্যন্ত এক ওভার হাতে রেখেই চার উইকেটের জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। মুলতান শব্দটা শুনলে এবার অন্তত একটা সুখস্মৃতিও ভাসবে বাংলাদেশের সমর্থকদের মনে।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link