ক্রীড়াজগতে শোকের মাতম চলছেই। কিংবদন্তি পেলে সবাইকে ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন পরপারে; তাঁর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতেই ব্যস্ত প্রায় সবাই। আর এসবের মাঝেই ভেসে এসেছে আরেক দুঃসংবাদ – ভয়াবহ এক সড়ক দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন ভারতের ক্রিকেটার ঋষাভ পান্ত। আনুমানিক ভোর রাতে দুর্ঘটনা নামক অভিশাপ নেমে এসেছিল তাঁর উপর। দ্রুতই উদ্ধার করে এরপর স্থানীয় হাসপাতালে পাঠানো হয় এই তরুণকে।
উত্তরখণ্ড প্রদেশে ঋষাভ পান্তের বাড়ি, মা-কে চমকে দিতে মাঝরাতেই বাড়ি ফেরার পথ ধরেছিলেন তিনি। কিন্তু গাড়ি চালানোর সময় হঠাৎ করে ঘুমিয়ে পড়েন পান্ত, তারপরই সড়ক বিভাজকের সাথে দ্রুত গতির গাড়িটির সংঘর্ষ হয়। স্বাভাবিকভাবেই মারাত্মক চোটের শিকার হন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর দেরাদূনের ম্যাক্স হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় তাঁকে।
ইতোমধ্যে ঋষাভ পান্তের ইনজুরি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গিয়েছে। এই ক্রিকেটারের কপালে দুইটি বড় ক্ষত স্থান সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া বাম চোখের উপরেও চোট লেগেছে। আবার ডান হাঁটুর লিগামেন্ট ছিঁড়ে গিয়েছে। গোড়ালি, পায়ের আঙ্গুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই সাথে পিঠের চামড়া অনেক জায়গায় উঠে গিয়েছে। যদিও আরো কিছু পরীক্ষা এবং স্ক্যান করার পর জানা যাবে আঘাত গুলো কতটা গুরুতর।
তবে কর্তব্যরত ডাক্তাররা আশ্বস্ত করেছেন যে, পঁচিশ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারের অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল; তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। যদিও এখন পর্যন্ত যেসব আঘাতের কথা জানা গিয়েছে সেগুলো সারতেও লম্বা সময় লাগবে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
ভারতীয় ক্রিকেটের নেক্সট বিগ থিঙ ভাবা হয় ঋষাভ পান্তকে। সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনায় যেকোনো পরিবেশে ভারতের সেরা টেস্ট ব্যাটারদের একজন তিনি। ওয়ানডেতেও পান্ত রয়েছেন দারুণ ফর্মে। শ্রীলঙ্কা সিরিজে কোন ফরম্যাটের দলে না থাকলেও আসন্ন নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামার অপেক্ষায় ছিলেন তিনি; সে হিসেবে প্রস্তুতি নিতে ব্যাঙ্গালুরুর জাতীয় ক্রিকেট একাডেমিতে ক্যাম্প করার কথাও ছিল পান্তের।
কিন্তু এসব এখন শুধুই কল্পনা, কারণ ঋষাভ পান্ত মাঠের বাইরে ছিটকে গিয়েছেন অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য। ক্রিকেট খেলা তো দূরে থাক, হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতেই হয়তো লম্বা সময় অপেক্ষা করতে হবে এই তারকাকে৷ তাছাড়া যেতে হতে পারে ডাক্তারের ছুরিকাঁচির নিচেও, সেক্ষেত্রে আরো দীর্ঘায়িত হবে এই অপেক্ষা।
অনুমান করা যাচ্ছে যে অন্তত দুই বছর ক্রিকেটের সবুজ গালিচায় দেখা যাবে না ঋষাভ পান্তকে। সুস্থ হওয়ার পর ফিট হয়ে ওঠা, তারপর ধীরে ধীরে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শেষ করা, সবশেষে ক্রিকেটীয় অনুশীলন – তারপর হয়তো বিবেচনা করা হবে তাঁকে। কিন্তু ততদিন পর্যন্ত পান্তের জ্বলমলে ব্যাটে মরিচা পড়বে না সেটির নিশ্চয়তাও বা কি। তাই তো তাঁর ক্যারিয়ারে যে বড় সড় ধাক্কা লেগেছে সেটি বলাই যায়।
কার্যত ঋষাভ পান্তের ক্যারিয়ার প্রায় শেষ। ইনজুরি থেকে ফিরে এসে নিজেকে প্রমাণ করা যতটা কঠিন হবে তাঁর জন্য, সেটির চেয়ে কঠিন হবে দলের নতুন কম্বিনেশন ভেঙে নিজের জায়গা করে নেওয়াটা। ভারতের মত প্রচন্ড প্রতিযোগিতায় ভরপুর একটি ক্রিকেট সাম্রাজ্যে একবার রাজত্ব হারালে আবার সেই আসন ফিরে পাওয়া প্রায় অসম্ভব।
এক্ষেত্রে অবশ্য হার্দিক পান্ডিয়া অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারেন ঋষাভ পান্তের জন্য। কোমরের ইনজুরির কারণে প্রায় এক বছরের জন্য খেলার বাইরে ছিলেন পান্ডিয়া, একটা সময় আড়ালেই চলে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এরপর নিজেকে প্রমাণ করেই ফিরেছেন এই অলরাউন্ডার, এখন তো সাদা বলের ক্রিকেটে ভারতীয় দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ তিনি।
এতকিছুর পরেও ঋষাভ পান্ত নিজেকে ভাগ্যবান ভাবতেই পারেন। যেই গাড়ি তিনি চালাচ্ছিলেন, দুর্ঘটনার পর সেটি আগুনে পুড়ে রীতিমতো ভস্ম হয়ে গিয়েছে। আপাতত তাই ক্রিকেটীয় চিন্তা বাদ দিয়ে জীবনের জন্য স্রষ্টাকে ধন্যবাদ দিতেই পারেন তিনি।