ভেঙ্কটেশ আইয়ার, ইমপ্যাক্টফুল অলরাউন্ডার

রিঙ্কু সিংয়ের সেদিনের শেষ ৫ বলে ৫ ছক্কায় অবিশ্বাস্যভাবে ম্যাচ জিতেছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। তাতে নিশ্চিতভাবেই সে ম্যাচজয়ের নায়কবনে গিয়েছিলেন তিনি। তবে সেদিন পার্শ্বনায়ক হয়ে থাকা একজন হতে পারতেন নায়কও। গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে ম্যাচে সে ম্যাচে কলকাতার ইমপ্যাক্ট খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নেমেছিলেন ভেঙ্কটেশ আইয়ার।

বিজয় শঙ্করের বিধ্বংসী ইনিংসে কলকাতাকে ২০৫ রানের পাহাড়সহ লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়েছিল গুজরাট টাইটান্স। কিন্তু সে লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথমেই ব্যাটিং বিপর্যয়। মাত্র ২৮ রানেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেছেন দুই ওপেনার। এমন একটা সময়ে ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসেবে মাঠে নামলেন আইয়ার।

আর এরপরই ম্যাচের চিত্র বদলে যেতে শুরু করে। গুজরাটের বোলারদের উপর কিছুক্ষণ বাদে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন ভেঙ্কটেশ-নিতিশ রানা জুটি। ৪০ বলে ৮৩ রানের দুর্দান্ত একটি ইনিংস খেলেন ভেঙ্কটেশ আইয়ার। আর ঐ ইনিংসের জয়ের পথে স্বপ্ন দেখার সাহস জুগিয়েছিল।

ভেঙ্কটেশ আইয়ারের ক্রিকেট ক্যারিয়ার অনেকটা রোলার কোস্টারের মতো। ২০২১ আইপিএলে দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে জায়গা পেয়ে গিয়েছিলেন ভারতীয় দিলেও। কিন্তু হাঁটুর এক চোটে পড়ে পরবর্তীতে সেই যে দল থেকে বাদ পড়লেন, আর ফিরতে পারলেন না। এরপর গত আইপিএলেও রান পেলেন না। এমতাবস্থায় হারিয়েই যেতে বসেছিলেন এ ব্যাটার। তবে চলতি আইপিএল দিয়ে আবার দৃশ্যপটে নিজেকে রাঙ্গাতে শুরু করছেন ভেঙ্কটেশ আইয়ার। গুজরাটের বিপক্ষে ৮৩ রানের ইনিংসের পর এক ম্যাচ বাদেই সেঞ্চুরির দেখাও পেয়েছেন তিনি।

তবে কলকাতার হয়ে মূলত এ ব্যাটারের এবারের টুর্নামেন্ট শুরু হয়েছিল একজন ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসেবে। আর এই ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার নিয়েই ভেঙ্কটেশ আইয়ারের কন্ঠে ভেসেছে বিরোধের সুর। সে ব্যাপারে এ ব্যাটার শক্ত যুক্তিও দিয়েছেন। তাঁর মতে, ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার ধারণা প্রবর্তনের কারণে অলরাউন্ডারদের গুরুত্ব কমে যাচ্ছে।

এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘একটা দল এখন চাইলেই ৬ বোলার নিয়ে খেলতে পারছে, একই ভাবে ৬ জন স্বীকৃত ব্যাটার নিয়েও সাজাতে পারে। এতে করে অলরাউন্ডারদের গুরুত্ব কমে যাচ্ছে। যে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বোলিং করেন, তাঁর বল করার হার কমে যাচ্ছে। এই যেমন আমি বল করার জন্য এখন শতভাগ ফিট। কিন্তু এমন নিয়মের কারণে বল না করেই থাকতে হচ্ছে।’

তবে এমন নিয়মের বেড়াজালে আটকে থাকা স্বত্ত্বেও এ ব্যাটার নিজের মাঠে ফেরা নিয়ে বেশ খুশি। ইনজুরি কাটিয়ে নিয়মিত ব্যাটে রান পাচ্ছেন। ব্যাট হাতে ধারাবাহিকভাবে ছন্দ ধরে রেখেছেন। দীর্ঘদিন পর এমন ফর্মে ফেরা নিয়ে ভেঙ্কটেশ আইয়ার বলেন, ‘রান করার চেয়ে ভাল ব্যাপার হচ্ছে, আমি মাঠে ফিরতে পেরেছি। আমার কাছে মাঠে ফেরাটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এ জন্য সৃষ্টিকর্তাকে কৃতজ্ঞতা জানাই।’

ভেঙ্কটেশ আইয়ার ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি টুকটাক বোলিংও করতে পারেন। সেই প্রমাণ মিলে, স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এ ক্রিকেটার ৭.৪২ ইকোনমি রেখে ৪২ টা উইকেট পেয়েছেন। এ ছাড়া, ভেঙ্কটেশ আইয়ার ব্যাট করতে পারেন যে কোনো পজিশনে। ওপেনিং থেকে শুরু করে মিডল অর্ডার, এমনকি ফিনিশিং রোলেও নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেন। আর এ কারণেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর শুরুটা হয়েছিল মিডল অর্ডার ব্যাটার হিসেবেই।

এই মুহূর্তে ভারতীয় দলে হার্দিক পান্ডিয়া পেস বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত এক নাম। কিন্তু তাঁর যোগ্য রিপ্লেসমেন্ট ঠিক খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে হার্দিক পান্ডিয়ার ব্যাকআপ হিসেবে এখন ভেঙ্কটেশ আইয়ার সেই দৌড়ে নিশ্চিতভাবেই এগিয়ে আছেন। আইয়ারকে দলে নেওয়াতে সুবিধা হলো,  তাঁকে ব্যাকআপ ওপেনার হিসেবেও দলে রাখতে পারবে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট।

আর মাস ছয়েক পরেই ভারতের মাটিতে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। এখন পর্যন্ত ভারতের সেই বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাওয়ার দৌড়ে বেশ পিছিয়েই রয়েছেন ভেঙ্কটেশ আইয়ার। তবে আইপিএলের এমন দুরন্ত ফর্ম অব্যাহত থাকলে, নির্বাচকদের নজরে আসতেও নিশ্চয়ই বিলম্ব হবে না আইয়ারের। তাছাড়া, ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বোলিং অপশন বাড়াতে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট আইয়ারকে আলাদা করে বিবেচনা করতেই পারে।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link