সতেরো তম প্রচেষ্টায়ও বিরাট ব্যর্থ, ব্যাঙ্গালুরু নিস্তব্ধ

নিজেকে উজাড় করে দিয়েও তিনি শিরোপা বঞ্চিত। নিয়তির চরম আঘাতের দৃশ্য বদলায়নি ১৭ বছরেও।

আপনি অভাগা বলুন, আপনি দুর্ভাগা বলুন। তিন বার ফাইনালে উঠেও শিরোপা অধরা থাকা রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুকে এই সকল বিশেষণ বড্ড বেশি মানায়। তার থেকেও বেশি মানায় সম্ভবত বিরাট কোহলির নামের পাশে।নিজেকে উজাড় করে দিয়েও তিনি শিরোপা বঞ্চিত। নিয়তির চরম আঘাতের দৃশ্য বদলায়নি ১৭ বছরেও।

বিরাট কোহলি, প্রায় দেড় দশক ধরে ক্রিকেট দুনিয়াকে করে রেখেছেন মুগ্ধ। জিতেছেন অনেক কিছু। রেকর্ড বইয়ে হয়েছে তাকে নিয়ে আঁকিবুঁকি। অপূর্ণতা ছিল দুই। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা যেন হৃদয়ে ক্ষত করে দেওয়া এক তীক্ষ্ণ সুই।

সেই যে ২০০৮ সালে যাত্রা শুরু। এরপর কতকিছু একসাথে দেখেছে বিরাট আর ব্যাঙ্গালুরু। উত্থান-পতনের রাস্তা ধরে তিনবার যাওয়া হয়েছে ফাইনালে। তবুও এক হাত দূরে থাকা শিরোপাটা থেকে গেছে এক আলোকবর্ষ দূরে। খেলোয়াড়ী জীবনে ব্যক্তিগত অর্জন ছাপিয়ে সর্বদাই মাহাত্ম্য পায় দলগত অর্জন।

লিওনেল মেসি বিশ্বকাপ জিতেছিলেন বলেই তো সর্বকালের সেরার বিতর্ক হয়েছিল বন্ধ। না, বিরাটের আইপিএল অপূর্ণতা অবশ্য ততবড় অর্জনের কাতারে পড়ে না। তবুও তো ১৭ বছরের প্রচেষ্টা যখন কোনভাবেই শেষ সীমানায় নিয়ে যায় না, তখন তো আফসোস হবেই। দুমড়ে-মুচড়ে যাবে হৃদয়। মাথায় এক অদ্ভুত পাহাড় ধপাস করে পড়বে। আর মনে হবে, ‘ভুলটা ঠিক কোথায় ছিল’।

ভুল অবশ্য রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর ছিল না। ২০২৪ আইপিএলের এলিমিনেটরে রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে খুব বেশি ভুল ব্যাঙ্গালুরু করেনি। কিন্তু ভাগ্য মাঝে মধ্যে বড্ড পাষাণ। ইয়াশ দয়ালদেরকে ক্যারিয়ারের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়। বিরাট কোহলিদের পেতে দেয় না সবকিছু। এমন নির্মমতা সহ্য করে বিরাট আরও একটি বছর পার করে দেবেন।

অভাগা যেদিকে যায়, সাগর শুকিয়ে যায়। বিরাটও যেন তাই। অবশ্য বিরাটের কাছে এখনও আছে সুযোগ বাকি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটা যে দরজায় নাড়ছে কড়া। মেসির জন্য বিশ্বকাপ জিতেছিল আর্জেন্টিনা, একই কাজ করবে না ভারত? বিরাটের অপূর্ণতার ক্ষতে তবুও যে একটু স্বস্তির পরশ বুলিয়ে দিয়ে যাবে তা।

কমলা রঙের টুপি মাথায় বিরাট যেন সবার থেকে আলাদা। নিবেদন নিংড়ে দিতেও তিনি বিরল। সেই বাউন্ডারি থেকে ক্ষিপ্রতায় ছোড়া বলটায় রান আউট হওয়া ধ্রুব জুরেলও নিশ্চয়ই সেটা আন্দাজ করতে পেরেছেন। এই বিষয়টা বেশ আগেই আন্দাজ করতে পেরেছিলেন ফাফ ডু প্লেসিস। তাইতো তিনিও প্রচেষ্টা চালিয়েছেন বিরাটের হাতে শিরোপা তুলে দেওয়ার। কিন্তু…

অবশ্য ভালবাসা তো জখম দেয় বলেই তা ভালবাসা। বিরাট সেই ভালবাসার মায়ায় আটকে রইলেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুতে। চাইলেই চলে যেতে পারতেন অন্যত্র। এতদিনে শিরোপাও হয়ে যেত ছোঁয়া। কিন্তু বিরাট ছাড়েননি। সে কারণেই সমর্থকরাও ছেড়ে যাননি। আসছে বছর আবার নতুন উদ্দ্যমে ব্যাঙ্গালুরুর জন্য গলা ফাটাবে সমর্থকরা। বিরাট হয়ত থাকবেন, কিংবা থাকবেন না, তবে তার ‘লয়্যালিটি’ যে ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...