একটা লফটেড ড্রাইভ। মিড অনে থাকা ফিল্ডারের মাথার উপর দিয়ে চলে গেল তা সীমানার বাইরে। বিরাট কোহলির ব্যাট থেকে এলো ম্যাচ জয়ের শেষ রানটুকু। বিরাটের অবশ্য এই ধারা নতুন নয়। তবে বিরাট এবারের বিশ্বকাপটা ঠিক নিজের মত করেই রাঙিয়ে যেতে বড্ড মরিয়া।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ জয়ের কাজটা সহজই করে দিয়েছিলেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। বিশ্বকাপে ভারতের দ্রুততম সেঞ্চুরিয়ান শেষ অবধি ১৩১ রানে থেমেছেন। তবে ততক্ষণে ম্যাচ জয়ের চিত্রপট লেখা হয়ে গেছে ভারতের পক্ষে। স্রেফ সিনিয়র চরিত্রের একটা আলতো ছোঁয়ায় হ্যাপি এন্ডিংয়ের অপেক্ষা।
সেই সমাপ্তি রেখাই টেনে দিলেন বিরাট কোহলি। তবে তার আগে এবারের বিশ্বকাপে নিজের দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরির দেখাটা পেয়েই যান ‘কিং কোহলি’। ধারাবাহিকতার রেললাইনের উপর দিয়েই চলছে বিরাটের রানের চাকা। এদিন অবশ্য খুব একটা কাঠখড় পোড়াতে হয়নি তাকে। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে স্রেফ দলকে শেষ অবধি গাইড করাই ছিল তার কাজ।
তিনি সেটাই করেছেন। তবে এর আগের ম্যাচে নিতান্তই এক কঠিন মুহূর্তের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল তাকে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রাথমিক ধাক্কা সামলে নিতে হয়েছে। দলের জয় যখন দূর কোন এক দ্বীপ, তখন নৌকা বাইতে হয়েছে স্রোতের বিপরীতে। তবুও তিনি জয়ের একেবারে কাছে অবধি নিয়ে গিয়েছিলেন দলকে। ৮৫ রানের সেই ইনিংসটি নিঃসন্দেহে মনে রাখার মত।
তবে জীবনের শেষ বেলায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৫৫ রানের ইনিংসটিও মনের গহীন থেকে দোলা দিয়ে যাবে তাকে। কেননা যেখান থেকেই বিরাটের সবচেয়ে উজ্জ্বল এক তারকা হওয়ার স্বপ্নের শুরু, সেখানেই তো তিনি খেললেন ম্যাচ জয়ের গুরুত্বপূর্ণ এক ইনিংস। ঘরের সমর্থক, যাদের আদুরে বিরাট এখন শাসন করেন বিশ্ব ক্রিকেট, তাদের সামনেই নিজের ‘ক্লাস’-টা দেখালেন বিরাট কোহলি।
তোয়াক্কাই করলেন না আফগানদের স্পিন ত্রয়ীকে। তার নামে গোটা এক গ্যালারী নামকরণ করা হয়েছে দিল্লীর অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে। এরপর এই প্রথম তিনি খেলতে নেমেছেন রাজধানীতে। নেমেই একটা অপরাজিত অর্ধশতক। দলের জয়ের শেষ রানটুকু এলো তার ব্যাটে। এই স্মৃতিটুকু তো নিশ্চয়ই কোহিনূর হীরার মতই মূল্যবান।
অন্যদিকে নিজের উঁচু মানসিকতারও পরিচয় দিয়েছেন। ঘরের মানুষেরা ভিনদেশী অতিথি নাভিন-উল হককে দুয়োধ্বনিতে ব্যতিব্যস্ত করে রেখেছিলেন। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের সময় হওয়া স্নায়ুযুদ্ধর অবসান ঘটান তিনি নাভিনকে বুকে টেনে নিয়ে। করোজড়ো নিজের মানুষদের অনুরোধ জানান দুয়োধ্বনি না দিতে।
বিরাট কোহলি চরিত্রটাই বেশ রঙিন। তিনি মাঠে প্রতিপক্ষকে একেবারে তুলোধুনো করেন। তবে মাঠের বাইরে বেশ আলাদা এক চিত্র। কোন ধরণের বিতর্কের সাথে বিন্দুমাত্র সম্পৃক্ততা নেই তার। এই বিরাট এবারের বিশ্বকাপে যথেষ্ট ধারাবাহিক। ২০১১ সালে এক তরুণ হয়ে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ জিতেছিলেন তিনি।
এবার সময় পরিণত সুপারস্টার হয়ে ঘরের দর্শকদের আরও একটি শিরোপা উপহার দেওয়া। বিরাট সে পথেই আছেন। বিরাটের ব্যাট আর সময় তাকে সঙ্গ দিচ্ছে। সাথে কয়েকশ কোটি পাগলাটে বিরাট ভক্তরাও মনে প্রাণে বিরাটের জন্যে প্রার্থণারত। এই বিশ্বকাপটা বিরাটময় হোক!