বিরাট কোহলির ফিটনেস ও ইয়ো-ইয়ো টেস্টের আস্ফালন

বিরাট কোহলি তাঁর ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে এই ছবিটি দিয়েছেন। ইয়ো-ইয়ো টেস্ট দেওয়ার পর হাসিমুখে তৃপ্তি নিয়ে তিনি জানিয়েছেন তার স্কোর– ১৭.২।

বিরাট কোহলি তাঁর ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে এই ছবিটি দিয়েছেন। ইয়ো-ইয়ো টেস্ট দেওয়ার পর হাসিমুখে তৃপ্তি নিয়ে তিনি জানিয়েছেন তার স্কোর– ১৭.২।

এশিয়া কাপের আগে ভারতীয় দলের ৬ দিনের কন্ডিশনিং ক্যাম্প শুরু হলো আজকে কর্নাটকের আলুরে। শুরুতেই ছিল ইয়ো-ইয়ো টেস্ট। সেই পরীক্ষা শেষে নিজের স্কোর জানান কোহলি।

ইয়ো-ইয়ো টেস্টের ন্যূনতম মানদণ্ড একেক দল একেকটা ঠিক করে। নানা সময় তা পরিবর্তনও হয়। ভারতীয় দলের জন্য ন্যুনতম মানদণ্ড এখন ১৬.১। কোহলি এর চেয়ে বেশ বেশিই করেছেন। তাঁর চোখেমুখে এমন সন্তুষ্টি হয়তো এজন্যই।

তবে, ইয়ো-ইয়ো টেস্টে এর চেয়ে বেশি স্কোর বেশ কবারই করেছেন কোহলি। ১৯ স্কোরও তুলেছেন। এবার ১৭.২ স্কোর করা মানে কি তার ফিটনেস কমে গেছে?

অবশ্যই নয়। কমে গেলে নিশ্চয়ই তিনি এটা পোস্ট করতেন না বা তৃপ্তির হাসি তার মুখে দেখা যেত না। এই ব্যাপারটিই অনেকে বুঝতে পারেন না। ইয়ো-ইয়ো টেস্ট মানে ফিটনেসের একটা পরিমাপক মাত্র। সার্বিক ফিটনেসের প্রমাণ নয়। একই কথা বিপ টেস্টের জন্যও প্রযোজ্য।

বাংলাদেশ দলে আগে বিপ টেস্ট নেওয়া হতো, কার্যত যা আরও কঠিন। এখন ইয়ো-ইয়ো টেস্ট নেওয়া হয়। এই দুটির মধ্যে কোনটি বেছে নেওয়া হবে, তা মূলত ট্রেনার, টিম ম্যানেজমেন্ট মিলে ঠিক করেন। আমি নানা সময়ে একেক ট্রেনারে কাছ থেকে একেকটা শুনেছি। কেউ বলেছেন, ক্রিকেটের জন্য বিপ টেস্টই বেশি উপযুক্ত, কেউ বলেছেন ইয়ো-ইয়ো।

যাহোক, এই দুটির কোনোটিই সার্বিক ফিটনেস পরীক্ষা নয়। এটা মূলত রানিং টেস্ট, সহিষ্ণুতা বা সহ্যক্ষমতার একটি পরীক্ষা। ফিটনেস ব্যাপারটি আরও ব্যাপক। বিশেষ করে, ক্রিকেটের ফিটনেস অন্য অনেক খেলার চেয়ে ভিন্ন। এখানে ম্যাচ ফিটনেস ভিন্ন ব্যাপার। ম্যাচ ফিটনেসের মধ্যেও আবার বোলিং ফিটনেস, ব্যাটিং ফিটনেস, ফিল্ডিং ফিটনেস, এসব আলাদা আলাদা ব্যাপার।

ইয়ো-ইয়ো বা বিপ টেস্টে একটা ন্যুনতম মানদণ্ড বেঁধে দেওয়া হয় স্রেফ ফিটনেসের একটা অবস্থা বোঝার জন্য। ফিটনেস সম্পর্কে একটা ধারণা নেওয়ার জন্য। এই তো। এখানে অনেক বেশি স্কোর করলে তো অবশ্যই খুবই ভালো। তবে কেউ যদি কোনোরকমে পাশ করে, সেটিও খুব ভালোভাবেই গ্রহণযোগ্য।

এসব টেস্টের ন্যূনতম মানদণ্ড যেমন দেশ থেকে দেশে, খেলা থেকে খেলায় ভিন্ন থাকে, তেমনি টেস্টের ভেতরেও অনেক ভিন্নতা থাকে। কখনও ক্রিকেটারদের বয়সের রেঞ্জ অনুযায়ী একটা মানদণ্ড সেট করা হয়, কখনও কোনো টেস্টের মাঝপথেও নানা কারণে মানদণ্ড কম-বেশি করা হয়। টেস্ট ইনডোরে নেওয়া হচ্ছে নাকি আউটডোরে, এটাও গুরুত্বপূর্ণ।

ভেতরে বা বাইরের তাপমাত্রা কেমন, ওই দিনের আবহাওয়া কেমন, অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। টেস্ট নেওয়ার আগের কিছুদিনে ওই ক্রিকেটার কত ম্যাচ খেলেছেন বা কী কী করেছেন, ওয়ার্কলোড কেমন ছিল, নাকি বিশ্রামে ছিলেন পুরোপুরি, এসব ব্যাপারও কিছুটা প্রভাব ফেলে।

ভারতীয় দলের ইয়ো ইয়ো টেস্ট

আশিষ নেহরা, খুব ভালো অ্যাথলেট হিসেবে যার পরিচিতি কখনোই ছিল না, ২০১৭ সালে ৩৮ বছর বয়সে একটি ইয়ো-ইয়ো টেস্টে তিনি ১৮.৬ স্কোর তুলেছিলেন। সেদিন তার স্কোর ছিল কোহলির চেয়েও বেশি। ওই একই টেস্টে রবীন্দ্র জাদেজার স্কোর ছিল ১৬.১, আদতে যিনি ভারতের সবচেয়ে ফিট ক্রিকেটারদের একজন তখনও ছিলেন, এখনও আছেন। ইয়ো-ইয়ো স্কোর তখন বা এখন যেমনই হোক।

কাজেই সিম্পল ইয়ো-ইয়ো বা বিপ স্কোর দেখে কারও ফিটনেসের সার্বিক অবস্থার রায় দেওয়া ঠিক নয়।

এজন্যই ইয়ো-ইয়ো বা বিপ টেস্টের স্কোর সাধারণত অফিসিয়ালি কখনোই প্রকাশ করা হয় না। কারণ, তাতে নানা বিভ্রান্তি ছড়ানো কিংবা ভুল বার্তা প্রকাশের সুযোগ থাকে। অনেক সময় ক্রিকেটাররা বা সংশ্লিষ্ট কেউ আনঅফিসিয়ালি জানান।

কখনও কখনও আমাদের মতো দেশগুলিতে নানা সূত্র থেকে খবর নেওয়ার টেষ্টা করা হয়, অমুকের স্কোর কত, তমুকের স্কোর কত (যেটা মোটেও জরুরি নয়) এবং সূত্র থেকে পাওয়া বলেই আজগুবি সব স্কোর অনেক সময় জানা যায় এবং একটু না ভেবেও তা প্রচারও করা হয়। অথচ এই ব্যাপারগুলি স্পর্শকাতর, কারণ ক্রিকেট অনুসারীরা এসব গভীরভাবে জানেন না। তারাও তাই স্রেফ স্কোর দেখে রায় দিয়ে দেন, অমুকের ফিটনেস ভালো, তমুকের খারাপ।

অবশ্যই বলছি না ইয়ো-ইয়ো বা বিপ টেস্টের গুরুত্ব কম। গুরুত্বপূর্ণ বলেই নানা খেলায় এসব টেস্ট চলে আসছে। তবে আবারও বলছি, এটা স্রেফ ফিটনেসের একটি দিকের পরিমাপক মাত্র। সার্বিক ফিটনেসের একমাত্র প্রমাণপত্র নয়।

– ফেসবুক থেকে

 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...