মালিঙ্গা = হাসারাঙ্গা!

একসময় বিশ্ব ক্রিকেটেও রাজত্বকারী নাম ছিল শ্রীলঙ্কা। কুমার সাঙ্গাকারা, মাহেলা জয়াবর্ধনে, দিলকারত্নে দিলশান এবং লাসিথ মালিঙ্গা পরবর্তী সময়ে দ্বীপদেশটি যেন ক্রিকেটে কিছুটা বিবর্ণ হয়ে পড়ে। সাম্প্রতিক কালে একঝাক তরুণ তুর্কীর উপর ভর করে ধীরে ধীরে তাঁরা তাঁদের সোনালী অতীতকে ফিরিয়ে আনছে।

তারুণ্যে ভর করেই চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের মাঝেও দেশটির ক্রিকেট স্বগর্বে আবারও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শিখছে। দেশটির যে সংকটকে শক্তিতে পরিণত করার দারুণ শক্তি আছে তা এবার এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে তাঁরা বুঝিয়ে দিয়েছে। এশিয়ার সেরা ক্রিকেট দল এখন শ্রীলঙ্কা। আর এইজন্য তারুণ্য নির্ভর দলটির প্রত্যেকেই বাহবার দাবিদার।

সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা বিশ্ব মানের স্পিনার হয়ে উঠেছেন। এখন তো লঙ্কানদের স্পিন আক্রমণের নেতা হাসারাঙ্গা। বয়সটা পঁচিশের ঘরে। অভিজ্ঞতার ঝুলিটা খুব ছোট্টই, কিন্তু ক্যারিয়ারে প্রাপ্তির ঝুলিটা দিন দিন সমৃদ্ধ কর তুলছেন নিজের প্রতিভা দিয়ে। একদিনের ক্রিকেটে একমাত্র হ্যাটট্রিককারী লেগ স্পিনার তিনি। ২০২১ সালের টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপে হাসারাঙ্গা আট ম্যাচে ১৬ উইকেট নিয়ে সবার নজর কেড়েছিলেন। এই লেগস্পিনার প্রতিপক্ষ দলের ব্যাটারদের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দেন রীতিমতো।

শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং কিংবদন্তি খোদ মাহেলা জয়াবর্ধনেও ওয়ানিন্দু হাসরাঙ্গার উত্থানে দারুণ মুগ্ধ। জয়াবর্ধনে নাকি এই স্পিন অলরাউন্ডারের মধ্যে পেস বোলিং গ্রেট লাসিথ মালিঙ্গার ছায়া দেখতে পাচ্ছেন। এশিয়া কাপে ব্যাট ও বল হাতে দারুণ পারফরমেন্সের জন্য তিনি আইসিসির সেরা অলরাউন্ডার র‍্যাংকিংয়ে চার নম্বর জায়গা দখল করে নিয়েছেন।

হাসারাঙ্গার বিকশিত হওয়ার বিষয়ে মাহেলা জয়াবর্ধনে বলেন, ‘দারুণভাবে সে বিকশিত হয়ে উঠেছে। সেও লাসিথের মত দক্ষিণ থেকে আগত (গাল্লে)। এবং তাঁদের আচরণও একই রকম।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেভাবে তারা দুজনই বেরিয়ে এসেছিল, তাঁরা তাঁদের ক্যারিয়ার শুরু করেছিল নি:শব্দে। আপনি প্রথমে দেখবেন তাঁরা ড্রেসিংরুমের কোণে বসে থাকতো। তারপর ধীরে ধীরে তাঁরা বড় হতে থাকে। তাঁদের চুলের স্টাইল পরিবর্তন হয়, ট্যাটুগুলি বেরিয়ে আসে। লাসিথ যেভাবে লাসিথ হয়েছিলেন তার সাথে হাসারাঙ্গার উত্থানের অনেকটা মিল রয়েছে। আমি একজন খেলোয়াড় হিসেবে ওয়ানিন্দু যেভাবে প্রস্ফুটিত হয়েছে তা দেখেছি।’

মাহেলা জয়াবর্ধনে এখন শ্রীলঙ্কার পরামর্শক কোচ হিসেবে কাজ করছেন। তাঁর মতে হাসারাঙ্গা ও মালিঙ্গা দুজনের প্রতিযোগিতার মনোভাবে দারুণ মিল আছে। এবারের এশিয়া কাপে হাসরাঙ্গা ছিলেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী। এশিয়া কাপের টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কার ও নিজের করে নেন এই অলরাউন্ডার। ফাইনালে ২১ বলে ৩৬ রান এবং বল হাতে তিন উইকেট শ্রীলঙ্কার জয়ে দুর্দান্ত অবদান রাখে।

হাসারাঙ্গার প্রশংসা করে জয়াবর্ধনে আরও বলেন, ‘গত বারো মাসে তিনি দেখিয়েছেন যে তিনি কতটা পরিপক্ক। তা শুধু একজন বোলার হিসাবে নয় ব্যাট দিয়েও। দলের কঠিন পরিস্থিতিতে তিনি এসেছেন এবং ডেলিভারি করেছেন।’

জয়াবর্ধনের সাবেক সতীর্থ চতুরাঙ্গা ডি সিলভা ছিলো হাসারাঙ্গার বড় ভাই। সেই সূত্রে জয়াবর্ধন সেই উনিশ বছর বয়স থেকেই হাসরাঙ্গাকে চেনেন। সেই সুবাদে একদম কাছ থেকে তিনি হাসারাঙ্গার উঠতি ক্রিকেটার থেকে একজন দায়িত্ববান ক্রিকেটার হিসেবে বেড়ে ওঠার পর্যায়কে দেখেছেন।

ধীরে ধীরে হাসারাঙ্গা দলে নিজেকে কিভাবে লঙ্কান স্পিন আক্রমণের প্রধান অস্ত্রে পরিণত করেছেন সেই পরিবর্তনটাও দেখেছেন। একদিন হয়তো হাসারাঙ্গাও লাসিথ মালিঙ্গার মত বিশ্ব ক্রিকেটে বাঘা ক্রিকেটার হিসবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link