ভারতীয় ক্রিকেটে নতুন সম্ভাবনার বাহক হয়ে এসেছিলেন ওয়াশিংটন সুন্দর। ভবিষ্যৎ ভারতের অন্যতম সেরা পারফর্মার তিনি হবেন – এমনটাই আশা করা হয়েছিল। অথচ এখন তিনি লড়ছেন ইনজুরির সাথে। সবচেয়ে বেশি ইনজুরির শিকার খেলোয়াড়দের তালিকায় তাঁর নামটা উপরের দিকেই থাকবে।
যখনই জাতীয় দলে জায়গা পাকা পোক্ত করার সুযোগ পেয়েছেন ওয়াশিংটন সুন্দর তখনই বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ইনজুরি। এই যেমন আসন্ন জিম্বাবুয়ে সফরেও স্কোয়াডে নাম ছিল তাঁর, কিন্তু বাম কাঁধের চোটে ইতোমধ্যে ছিঁটকে গিয়েছেন এই অলরাউন্ডার। খুব একটা গুরুতর কিছু নয়, কিন্তু ২২ বছর বয়সী এই তরুণের আরেকটি সুযোগ ছিনিয়ে নিতে যথেষ্ট হয়েছে এই চোট।
অথচ চোটে পড়ার আগ পর্যন্ত কি দারুণ সময়-ই পার করছিলেন ওয়াশিংটন সুন্দর। ইংল্যান্ডের ঘরোয়া টুর্নামেন্ট রয়্যাল লন্ডন ওয়ানডে কাপে মাত্র চার ম্যাচেই তুলে নিয়েছেন ১১ উইকেট। এর সাথে ব্যাটিংয়েও নিজের ছন্দ খুঁজে পেতে শুরু করেছিলেন সুন্দর।
এর আগেও ওয়াশিংটন সুন্দরের সুন্দর ক্যারিয়ারের আশায় জল ঢেলে দিয়েছিল ইনজুরি। গত বছর ইংল্যান্ড সিরিজের আগে আঙুলে ফ্র্যাকচার হয়েছিল তাঁর। ছয় মাস পর যখন আবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তখন সুন্দরের শরীরে হানা দেয় করোনা। এছাড়া শ্রীলঙ্কা সিরিজের আগে হ্যামস্ট্রিং ইনজুরি; ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) এর মাঝপথে আঙুল ভেঙে যাওয়া।
সবমিলিয়ে গত দেড়বছরের বেশি সময় ধরে ইনজুরি, পুনর্বাসন, ওষুধ আর অপারেশনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন ওয়াশিংটন সুন্দর। এসবের ফাঁকে ফাঁকে টুকটাক ব্যাট-বলের লড়াইয়ে দেখা যায় তাকে।
সাদা পোশাকে সর্বশেষ যে ইনিংসে ব্যাট করেছিলেন ওয়াশিংটন সুন্দর সেবার তিনি অপরাজিত ৯৬ করেছিলেন। এছাড়া লম্বা সময় ধরে বিশ ওভারের ফরম্যাট থেকেও বাইরে আছেন এই ক্রিকেটার। মিস করেছেন ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, খুব সম্ভবত এবারও অস্ট্রেলিয়া যাওয়া হবে না তাঁর।
টেস্ট ক্রিকেটে বোলিং আরেকটু ভাল করতে পারলেই পুরোদস্তুর অলরাউন্ডার হয়ে উঠতে পারতেন ওয়াশিংটন সুন্দর। একইভাবে ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটিং আরেকটু উন্নতি করলে রঙিন পোশাকেও হতে পারবেন নিঁখুত অলরাউন্ডার।
লাল বলের ছোট ক্যারিয়ারে এরই মাঝে বেশ কয়েকটি ভাল ইনিংস খেলেছেন ওয়াশিংটন সুন্দর। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মত কন্ডিশনে যেমন ফাস্ট বোলারদের সামলেছেন তেমনি ভারতের স্পিন উইকেটেও ছিলেন সাবলীল। অন্য দুই ফরম্যাটে এখনো বলার মত কিছু করতে না পারলেও, তাঁর প্রতিভা নিয়ে কারো সন্দেহ নেই।
একটা সময় ভারত দলে পার্ট-টাইম বোলারের অভাব ছিল না। বীরেন্দর শেবাগ, শচীন টেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলি, সুরেশ রায়নার মত ব্যাটাররা বল হাতেও কার্যকরী ছিলেন। এছাড়া যুবরাজ সিং তো ছিলেন-ই। কিন্তু এখন ব্যাটসম্যানদের মাঝে কেউই নির্ভরযোগ্য স্পিনার নেই। আর এজন্য বড় মঞ্চে ছয় কিংবা সাত নম্বর বোলিং অপশনের অভাবে ভুগতে হয় ভারতকে।
এই ঘাটতি পূরণের জন্য ওয়াশিংটন সুন্দরের উপর লম্বা সময় ধরে বিনিয়োগ করছে টিম ইন্ডিয়া। বোলিংয়ে তিনি যুবরাজ, রায়নাদের তুলনায় অনেক বেশি সামর্থ্যবান। সেই সাথে ব্যাটিংটাও ভাল আয়ত্তে আছে এই উদীয়মান তরুণের।
ওয়াশিংটন সুন্দর এমন একজন খেলোয়াড় যিনি যেকোনো দলে ভারসাম্য ঠিক রাখতে পারেন। তিনি থাকলে স্পিন সহায়ক উইকেটে ব্যাটসম্যান কম নেয়া ছাড়াই তিনজন স্পিনার নেয়া যাবে। আবার পেস বোলিং পিচে বাড়তি পেসার নিলেও সুন্দরের উপস্থিতি দলের স্পিন বিভাগকেও সুসংহত রাখে।
তবে এত এত সম্ভাবনার ভীড়ে ইনজুরি বারবার পিছিয়ে দিচ্ছে ওয়াশিংটন সুন্দরকে। আর তাই কঠোর পরিশ্রমে নিজের ফিটনেস লেভেল আরো উন্নীত করার দিকে মনোযোগী হতে হবে তাকে। আবার পরিশ্রমের সাথে সাথে সতর্ক থাকতে হবে ইনজুরির ব্যাপারে। যে সম্ভাবনার প্রদীপ শিখা নিয়ে এসেছেন সুন্দর, সেই শিখার তেজ মাঠে দেখতে চায় দর্শকরা – কোন পুনর্বাসন কেন্দ্রে নয়।