ওয়াসিম আকরাম, ১৯৯২ বিশ্বকাপ ফাইনালের নায়ক

ব্যাট হাতে কার্যকরী ৩৩ রানের ক্যামিও। এরপর বল হাতে গুরুত্বপূর্ণ ৩ টি উইকেট। ১৯৯২ বিশ্বকাপ ফাইনালে ইংল্যান্ডকে বলতে গেলে একাই ডুবিয়ে দিয়েছিলেন ওয়াসিম আকরাম।

১৯৯২ সালের বিশ্বকাপকে বলা হয়ে থাকে ইমরান খানের বিশ্বকাপ। কারণ তাঁর নেতৃত্বেই যে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ শিরোপা উঁচিয়ে ধরেছিল। তবে বিশ্বকাপ জয়ের কৃতিত্বটা ইমরান খানকে দেওয়া হলেও সেই বিশ্বকাপে ‘বিশ্বকাপ’ নামক যুদ্ধের ময়দানে তাঁর অন্যতম সেনানী ছিলেন ২৫ বছর বয়সী ওয়াসিম আকরাম। যাকে বলা হয়ে থাকে ‘সুলতান অব সুইং’।

১৯৯২ বিশ্বকাপের ফাইনাল। মেলবোর্নের সেই ফাইনালে একদিকে ছিল গ্রাহাম গুচের ইংল্যান্ড। আর অন্যদিকে ছিল ইমরান খানের পাকিস্তান। ইতিহাস কিংবা শক্তিমত্তা, যে কোনো বিবেচনাতেই তখন পাকিস্তানের চেয়ে ঢের এগিয়ে ইংল্যান্ড। ফাইনালের ফেবারিট হিসেবে তাই মাঠে নেমেছিল ইংল্যান্ডই।

ফেবারিট তকমার প্রতিচ্ছবিও ফুটে উঠলো ফাইনালের মঞ্চে। মাত্র ২৪ রানেই সাজঘরে ফিরে যান পাকিস্তানের দুই ওপেনার। ইংলিশ পেসার ডেরেক প্রিঙ্গলের বোলিং তোপে পাকিস্তান তখন অল্প রানে গুটিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায়। অবশ্য প্রাথমিক বিপর্যয় সামলে পাকিস্তানের ইনিংসকে কিছুটা এগিয়ে দিয়েছিলেন  অধিনায়ক ইমরান খান আর জাভেদ মিঁয়াদাদ। দুজনে মিলে গড়ে তোলেন ১৩৯ রানের জুটি।

তবে মেলবোর্নের সে ফাইনালে এ জুটি প্রতিরোধ গড়লেও তা যথেষ্ট ছিল না। কারণ দুজনে মিলে বড় এক জুটি গড়ে তুললেও রানের গতিটা ঠিক বাড়াতে পারেননি। ইংলিশদের সামনে তাই লড়াকু এক সংগ্রহ ছুঁড়ে দেওয়ার দিক দিয়ে বেশ পিছিয়েই ছিল পাকিস্তান। তবে এমতাবস্থায় ত্রাতা হিসেবে হাজির ওয়াসিম আকরাম।

বাঁ-হাতি পেসার হিসেবে পরিচিতি থাকলেও ব্যাটিংটা তিনি ভালই করতে পারতেন। তবে সেই ফাইনালের আগে তাঁর নজির মেলেনি একটি ম্যাচেও। ওয়াসিম আকরামের ব্যাটিং তাণ্ডবের দেখা মিলল মোক্ষম সময়েই। বলা যেতে পারে, পাকিস্তান ক্রিকেট ইতিহাসের স্মরণীয় একটি দিনে।

ইমরান খান আউট হওয়ার পর ব্যাটিংয়ে নেমেই ঝড়ো গতিতে মাত্র ১৯ বলে ৩৩ রানের একটি ইনিংস খেলেন ওয়াসিম আকরাম। আর ঐ ঝড়ো ব্যাটিংয়েই পাকিস্তান পায় ২৪৯ রানের লড়াকু এক সংগ্রহ।

তবে ওয়াসিম আকরামে প্রধান কাজটা তো বোলিংয়ে। ৩৩ রানের অমন একটা ইনিংস খেলার পর বোলিং প্রান্তে এসেও দেখালেন ঝলক। শূন্য রানে ফিরিয়ে দেন ইয়ান বোথামকে। ওয়াসিম আকরামের আক্রমণাত্বক বোলিং শুরুতেই চাপে পড়ে ইংল্যান্ড।

তবে ৬৯ রানে ৪ উইকেট হারানো ইংল্যান্ড ঠিকই ম্যাচে ফেরে পরবর্তীতে। অ্যালান ল্যাম্ব আর নিল ফেয়ারব্রাদারের দৃঢ়তায় প্রাথমিক সে বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠে ইংল্যান্ড। আর এ দুই ইংলিশ ব্যাটার ৭২ রানে জুটিতে ধীরে ধীরে ম্যাচ জয়ের দিকেই ছুটছিল। এমতাবস্থায় প্রয়োজন ছিল একটি ব্রেক থ্রু। এবারও পাকিস্তানের সেই বিপদের সময়ে আবির্ভূত হন ওয়াসিম আকরাম।

 

অধিনায়ক ইমরান বোলিং প্রান্তে আনেন ওয়াসিমকে। আর এরপর এক ওভারের পুরো দৃশ্যপট পাল্টে যেতে শুরু করে। রাউন্ড দ্য উইকেটে বল করে ল্যাম্বকে বোল্ড করলেন দুর্দান্ত এক অফ কাটারে। এর পরের বলেই  ক্রিস লুইসকে দারুণ এক ইনসুইংয়ে বোল্ড করেন তিনি।

ওয়াসিম আকরামের ঐ এক ধাক্কায় আর ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ইংল্যান্ড। ২৫০ রান তাড়া করতে নামা ইংল্যান্ড গুটিয়ে যায় ২২৭ রানে। ফলত, প্রথম বারের বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পায় পাকিস্তান। আর ৩৩ রান ও গুরুত্বপূর্ণ ৩ উইকেট নিয়ে সে ফাইনালের ম্যাচসেরা নির্বাচিত ওয়াসিম আকরাম।

ওয়াসিম আকরাম অবশ্য ঐ এক ম্যাচেই নজর কাড়েননি। পুরো টুর্নামেন্টে ১৮ উইকেট নিয়ে সেবারের বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী বোলার বনে গিয়েছিলেন তিনি। ৯২ এর বিশ্বকাপ তাই ইমরান খানের হলেও, মেলবোর্নের ঐ ফাইনালের নায়ক হয়ে আছেন ওয়াসিম আকরামই। কেননা, পাকিস্তান যে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে হেসেছে ঐ একবারই। আর ঐ বিশ্বজয়ের হাসিটা এনে দিয়েছিলেন ওয়াসিম আকরাম।

 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...