ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের বেশ নামী ওপেনার হয়তো হতে পারতেন ওয়াভেল হাইন্ডস। ক্যারিয়ারের একদম শুরুতে পাকিস্তানের বিপক্ষে তাঁর প্রমাণও দিয়েছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজও স্বপ্ন দেখেছিল বাঁ-হাতি এই ব্যাটসম্যানকে নিয়ে। তাঁর মাঝে দেখেছিল স্বয়ং স্যার ভিভ রিচার্ডসের ছায়া। তবে তাঁর ফুটওয়ার্কের দুর্বলতায় দ্রুতই চোখে পড়ে যায় প্রতিপক্ষ বোলারদের। ফলে এইজ কিংবা লেগ বিফোরের ফাঁদে ধরা দিয়ে আস্তে আস্তে থমকে যেতে থাকে তাঁর সেরা হবার যাত্রা।
জ্যামাইকার রাজধানী কিংস্টনে ১৯৭৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন ওয়াভেল হাইন্ডস। ১৯ বছর বয়সে জ্যামাইকার হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেত খেলা শুরু করেন এই ব্যটসম্যান। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খুব বেশি দিন অপেক্ষা করতে হয়নি। দ্রুতই নিজেকে প্রমাণ করতে শুরু করেন। ব্যাটিং এর পাশাপাশি মিডিয়াম পেসটাও মন্দ করেন না।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে প্রথম ডাক পান ১৯৯৯ সালে। ২০০০ সালের শুরুতে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক ঘটে তাঁর। নিজের অভিষেক ম্যাচেই সাত নম্বরে ব্যাট করতে নেমে খেলেছিলেন ৪৬ রানের অপরাজিত এক ইনিংস। এরপরেই পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ খেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল। সেখানেও জায়গা করে নেন হাইন্ডস।
পাকিস্তানের বিপক্ষেই প্রথম নিজের সামর্থ্য প্রমাণ করেন এই ওপেন। ক্যারিয়ারের মাত্র চতুর্থ টেস্ট খেলতে নেমেছেন সেদিন। ওই টেস্টে ব্যাট করার সুযোগ মিলে তিন নম্বরে। তাঁর যথাযথ ব্যবহার সেদিন করেছিলেন হাইন্ডস। সেই ম্যাচে ঠিক ৩৬১ মিনিট ব্যাট করেছিলেন এই ব্যাটসম্যান। ২৩৬ বলে খেলেন ১৬৫ রানের বিশাল এক ইনিংস। ইনিংসটিতে ছিল ২৪ টি চার ও ১ টি ছয়। তাঁর এই ইনিংসে ভর করে ৪১৯ রান করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পরের ইনিংসেও ৫২ রান করেন তিনি।
তবে এরপর আর লম্ব সময় সেঞ্চুরির দেখা পাননি তিনি। তারচেয়ে বড় কথা হাইন্ডসের ফুটওয়ার্ক নিয়ে তখন বেশ দুশ্চিন্তায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরমধ্যেই ২০০১ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫ ম্যাচের টেস্ট সিরিজের শেষ ম্যাচে ওপেন করতে নামানো হয় হাইন্ডসকে। সিডনি টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথমবারের মত ওপেন করতে নেমেই খেলেন ৭০ রানের ইনিংস। পরের ইনিংসেও করেন ৪৬ রান। ফলে ওপেনিং এর জন্য আবার নতুন করে ভাবা হয় তাঁকে।
একটা সময় ক্রিস গেইলের সাথে নিয়মিত ওপেন করতেন তিনি। দারুণ সব জুটি গড়েছিলেন এই দুইজন মিলে। টেস্ট ক্রিকেটে এই দুই ওপেনার ৩৩ ইনিংসে ৩৯.৩৯ গড়ে করেছিলেন ১৩০০ রান। এছাড়া ওয়ানডে ক্রিকেটেও বেশ সফল ছিল তাঁদের জুটি। সেখানে এই জুটি রান করেছেন ১৬৮৭। তাঁদের এই জুটি ব্যাটিং গড় ছিল ৪১.১৫।
এরমধ্যে ওয়ানডে ক্রিকেটেও নিজেকে প্রামণ করে ফেলেন হাইন্ডস। ২০০৩ সালে নিজের সেরাটা দেখানোর জন্য আবারো বেছে নেন অস্ট্রেলিয়াকে। এবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টানা দুইটি সেঞ্চুরি করে বসেন এই ওপেনার। দুই ইনিংসেই হাইন্ডস ছিলেন অপরাজিত এবং তাঁর এই দুই ইনিংসের কারণে দুই ম্যাচেই জয় পেয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ওদিকে টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর সেরা ইনিংসটি আসে ২০০৫ সালে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জর্জটাউনে। সেখানে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তাঁর ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ এবং একমাত্র ডাবল সেঞ্চুরির ইনিংসটি খেলেন হাইন্ডস। সেদিন ২৯৭ বলে খেলেছিলেন ২১৩ রানের বিশাল এক ইনিংস।
তবে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেবছরই শেষ হয়ে যায় তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারে। একেবারে যে খারাপ ফর্মে ছিলেন তাও বলা যাবে না। মাঝে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজেও দুইটি হাফ-সেঞ্চুরি করেন। তবে বড় ইনিংস বা সেঞ্চুরির দেখা পাচ্ছিলেন না। প্রিয় প্রতিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই খেলেন ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট ম্যাচ।
ওদিকে ওয়ানডে ক্রিকেটটা খেলেছিলেন ২০১০ সাল পর্যন্ত। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে মোট ১১৯ টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন তিনি। সেখানে ২৮.৫১ গড়ে করেছেন ২৮৮০ রান। এই ফরম্যাটে ৫ টি সেঞ্চুরিও এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে। এছাড়া ৪৫ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে ৩৩.০১ গড়ে করেছেন ২৬০৮ রান। এই ফরম্যাটেও একটি ডাবল সেঞ্চুরিসহ আছে ৫ টি সেঞ্চুরি। এছাড়া ক্যারিয়ারের শেষ সময়ে ৫ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচও খেলেছিলেন।
ওদিকে ২০০৮ সালে আহমেদাবাদ রকেটসের হয়ে ভারতের নিষিদ্ধ ক্রিকেট আসর ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগে (আইসিএল) খেলে নিজের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারকে মোটামুটি বিদায়ই জানিয়েছিলেন। যদিও পরের বছর আর এই আসরে খেলেননি তিনি। শেষ পর্যন্ত ২০১০ ভারতের বিপক্ষে একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেই থেমে যায় তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার।