এই রান তাড়ায় বাংলাদেশ থাকলে কেমন হত!

শ্রীলঙ্কার রান তাড়া দেখছিলাম আর ভাবছিলাম, আজকে এই রান তাড়ায় বাংলাদেশ থাকলে কেমন করত? শারজাহতে রশিদ-মুজিব-নবি-ফারুকিদের বিপক্ষে ১৭৬ রান তাড়ায় অ্যাপ্রোচ কেমন থাকত!

ভাবতেই কুঁচকে যাচ্ছি। কারণ, উত্তরটা আপনিও জানেন, আমিও জানি। আজকে উইকেট বেশ ভালো ছিল ব্যাটিংয়ের জন্য। তার পরও ভাবতে পারছি না যে বাংলাদেশ ১৭৫ টপকে জিততে পারত বা সেই তাড়না দেখাতে পারত।

নিজেদের দল নিয়ে এরকম ভাবতে যে খুব ভালো লাগছে, অবশ্যই তা নয়। আক্ষেপ-হতাশা-হাহাকার জাগছে বরং।

শ্রীলঙ্কার রান তাড়া যে খুব আদর্শ হয়েছে, তা কিন্তু নয়। তাদের সর্বোচ্চ ইনিংসটি স্রেফ ৩৬ রানের। আইডিয়ালি চাওয়া থাকে, শীর্ষ তিন ব্যাটসম্যানের দুইজন বা অন্তত একজন বড় ইনিংস খেলবেন। কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে আইডিয়াল কিছু সব দিন করা সম্ভব নয়। তবে বেশির ভাগ দিনই কার্যকর কিছু করা সম্ভব। আজকে যেমন শ্রীলঙ্কা করেছে। তাদের ৫ ব্যাটসম্যান কার্যকর অবদান রেখেছেন। সেই ৫ জনের স্ট্রাইক রেট ১৮৯, ১২৫, ১৬৫, ২২১ ও ১৭৭।

আইডিয়াল দিন কখনও আসবে, কখনও নয়। তবে বেশির ভাগ ব্যাটসম্যানের অ্যাপ্রোচ ঠিক থাকলে আপনার দল বেশির ভাগ দিনই কার্যকর হবে। ব্যাপারটা সিম্পল।

শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানরা কি পাওয়ার আর স্কিলে খুব এগিয়ে বাংলাদেশের চেয়ে? হয়তো, কিংবা হয়তো নয়। হয়তো সামান্য এগিয়ে বা কাছাকাছি। কিন্তু মানসিকতায় অবশ্যই আপাতত অনেক এগিয়ে।

মানসিকতায় এগিয়ে থাকার অনেক কারণ আছে। বিস্তারিত বলতে গেলে রচনামূলক আরেকটি লেখা লিখতে হবে। আপাতত ছোট করে দু-একটি কথা বলা যায়। শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট বোর্ডও খুব আদর্শ কিছু নয়, বছরের পর বছর ধরে অনেক দূর্নীতিগ্রস্থ। তাদের যে কোনো সিরিজ-টুর্নামেন্টের স্কোয়াড অনুমোদন নিতে হয় ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে। যেটা অন্যান্য দেশের বাস্তবতায় অবিশ্বাস্য।

কিন্তু, তাদের কোনো বোর্ড প্রধানকে অন্তত টসের সিদ্ধান্ত আগে থেকে জানাতে হয় না। একাদশে কে খেলবেন আর কে বাদ পড়বেন, এসবের বিস্তারিত ব্যখ্যা বোর্ড প্রধানের কাছে দিতে হয় না। তাদের কোনো বোর্ড প্রধান কখনও বলেননি , ‘(এশিয়া কাপে) টিম ডিরেক্টর আছে। জালাল ভাই (অপারেশন্স চেয়ারম্যান) আছে, আমি আছি, আর কি লাগে?’

এখন তো দল ব্যর্থ। কি মনে হয়, আর কিছু লাগে, স্যার?

শ্রীলঙ্কার টিম ডিরেক্টর বা এই পর্যায়ের কেউ কখনও মিডিয়ার সামনে এসে দিনের পর দিন ক্রিকেটারদের ধুয়ে দেন না। এভাবে প্রকাশ্যে কাঠগড়ায় দাঁড় করান না। হ্যাঁ, টিম ডিরেক্টর প্রকাশ্যে এভাবে বললে মিডিয়ার জন্য এসব ভালো, তারা রসালো খবর পাচ্ছে। পাবলিকের জন্য মুখরোচক ব্যাপার। কিন্তু ড্রেসিং রুমের আবহাওয়ার জন্য কি এসব ভালো?

আপনি যাওয়ার আগে বলে গেলেন যে আফিফকে চার নম্বরে খেলানো হবে অবশ্যই। একটা ম্যাচেও তা দেখা গেছে? আপনি মিডিয়ার সামনে বিরাট হম্বি-তম্বি করছেন, কিন্তু ড্রেসিং রুমে কি সেই বার্তা দিয়েছেন? আপনি বিশাল বক্তব্য দিচ্ছেন আর মিডিয়ায় অভিযোগ করছেন যে অনেকে নিজের জন্য খেলছে, জায়গা বাঁচাতে খেলছে, আপনি কি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন? তাদের বাদ দিয়েছেন? তাদের কড়া কোনো বার্তা সরাসরি দিয়েছেন? আপনি যাওয়ার আগে উঁচু গলায় বললেন, মেক শিফট ওপেনার খেলানো হবে, ব্যতিক্রমী কিছু করা হবে, কিন্তু যাওয়ার পর প্রথম ম্যাচেই সেই লাউ-কদু দেখালেন, দায়টা কার?

যেসব কথা একান্তে তাদের সঙ্গে বলা উচিত, যেসব বার্তা ড্রেসিং রুমে দেওয়া উচিত, সেসব আরও ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে মিডিয়ায় বলছেন, এসব কি দলের জন্য ভালো?

ক্রিকেটারদের দায় তো আমরা দিচ্ছিই। মুশফিক পারছেন না, মাহমুদউল্লাহ পারছেন না, মুস্তাফিজ পারছেন না, লিটন চোটে পড়ার পর ১৭ কোটি মানুষের দেশে টি-টোয়েন্টি ওপেনার নেই। কিন্তু আপনারা কতটা পারছেন?

এত সব কথা বলছি, ওই মানসিকতার প্রসঙ্গে। শ্রীলঙ্কা যে মানসিকতা দেখিয়েছে, সেই মানসিকতা বাংলাদেশের নেই কেন? কারণ, ড্রেসিং রুমে সেই সুবাতাস আপনারা বইয়ে দিতে পারছেন না। সেই নির্ভরতা আপনারা জোগাতে পারছেন না।

ক্রিকেটাররা পারছেন না। খুবই সত্যি। আপনারা কতটা পারছেন? আপনি ১০ বছর ধরে বোর্ড প্রধান, আপনার দেশে টি-টোয়েন্টি ওপেনার নাই, (বাই দা ওয়ে, তামিমের সঙ্গী কোনো থিতু কোনো টেস্ট ওপেনারও নাই), গোটা দেশে একটা টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্ট ক্রিকেটার নাই… ভাবা যায়!

আপনি টিম ডিরেক্টর, আপনাকে রাখা হয়েছে দলকে চাঙা করার জন্য, ড্রেসিং রুমের আবহাওয়া ভালো রাখার জন্য। আপনি উল্টো অমুক-তমুককে প্রকাশে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে নিজের দায় এড়াচ্ছেন। আপনি সাইফ হাসানকে টি-টোয়েন্টি ওপেনার বানাচ্ছেন, আপনারা পারভেজ ইমনকে প্রথম ঘোষিত দলে নিলেও তাকে ব্রাত্য বানিয়ে পরে উড়ে আসা নাঈম শেখকে ম্যাচে নামিয়ে দিচ্ছেন, আপনাদের প্রসেস কোথায়? আপনারা ড্রেসিং রুমে কি বার্তা দিচ্ছেন, স্যার?

আপনারা মুখে ফেনা তুলছেন পরিবর্তনের কথা বলে, আপনাদের কাজে সেটার প্রকাশ নেই। আপনারা মুখে বলছেন টি-টোয়েন্টি দলের চরিত্র বদলের কথা, কিন্তু ভরসা রাখছেন সেই ব্যর্থদের ওপর, আপনাদের কথায় শোনা যায় সামনে এগোনোর ডাক, আপনাদের কাজে শুধু পেছন পানে হাঁটা।

কিন্তু আপনারা সাধু। আপনি বোর্ড প্রধান, দেশের ক্রিকেটের অভিভাবক। আপনি টিম ডিরেক্টর, দল নির্বাচন থেকে শুরু করে দলের সবকিছুর সর্বেসর্বা। অথচ অন্য সবার দায় থাকলেও আপনাদের দায় নেই।

মানসিকতা বদলের প্রসঙ্গেই এত কথা। এই ছোট ছোট ব্যপারগুলি মিলেই মানসিকতা ভালো হয়। যাদের দিয়ে হচ্ছে না, মানসিকতায় মানাতে পারবে না, তাদের ছেঁটে ফেলতে পারছেন? সিম্পল ব্যাপার। মিডিয়ার সামনে আপনাদের গলা চওড়া, কিন্তু আসল কাজে ঠনঠন। মানসিকতা হাওয়া থেকে আসবে?

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে সেদিন ধারাভাষ্যে সঞ্জয় মাঞ্জরেকার বলছিলেন, ‘বাংলাদেশকে বুঝতে হবে, তাদের টি-টোয়েন্টি ট্যালেন্ট কারা।’ তাঁর বার্তাটা সাধারণ, এই সংস্করণের সঙ্গে মানানসই ক্রিকেটারদের প্রাধান্য দাও। অন্যদের সালাম জানাও, ব্যস। সেই দায়িত্বটা কাদের? আপনাদের। হ্যাঁ, আপনাদের।

আপনারা সেটা পারছেন? আপনি একজন বোর্ড প্রধান হয়ে বছরের পর বছর ধরে ক্রিকেটারদের নাম ধরে নানান কিছু বলে যাচ্ছেন প্রকাশ্যে, আপনি একই সঙ্গে নির্বাচক, ম্যানেজার, কোচ, অ্যানালিস্ট সব কিছু।

আপনি টিম ডিরেক্টর হয়ে আপনার ক্রিকেটারদের নিয়ে বিরাট সব অভিযোগ মিডিয়ায় করে যাচ্ছেন প্রকাশ্যে। এভাবে কোনো দলের মানসিকতা ভালো থাকে?

আপনারা মিডিয়ায় ৩০ মিনিট ডায়লগবাজি করেন, সমস্যা নেই। মিডিয়ার জন্য বিরাট ভালো। খবর আর খবর, হেডলাইনের পর হেডলাইন। মারদাঙ্গা পাবলিক খাওয়ার নিউজ। এসবের সঙ্গে দলের জন্য তিনটা কার্যকর পদক্ষেপ নেন, দলের তাতে উপকার হয়। দেশের ক্রিকেট বর্তে যায়।

সমালোচকদের আয়নায় মুখ দেখার কথা বলেছিলেন না মুশফিক? খুব বাজে উপমা ছিল। কিন্তু আপনারা যারা দেশের ক্রিকেট চালান, আজকে আপনাদেরকে বলছি, আপনাদের বাসায় কি আয়না নেই?

– ফেসবুক থেকে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link