কাছে এসে দূরে সরার যন্ত্রনা

টেস্ট ক্রিকেট একই সাথে খেলাটির সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী ও কঠিন ফরম্যাট। নবীন দলগুলোর এই ফরম্যাটে প্রতিষ্ঠিত হতে অনেক বছর লেগে যায়। অনেকবারই পা ফঁসকে যায়। পায়ের নিচে মাটি শক্ত হওয়ার আগেই অনেকদলকেই দেখা যায় তুলনামূলক বড় দলগুলোর বিপক্ষে লড়াই করে জয়ের দুয়ারে গিয়ে ফিরে আসতে।

টেস্ট ক্রিকেট একই সাথে খেলাটির সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী ও কঠিন ফরম্যাট। নবীন দলগুলোর এই ফরম্যাটে প্রতিষ্ঠিত হতে অনেক বছর লেগে যায়। অনেকবারই পা ফঁসকে যায়। পায়ের নিচে মাটি শক্ত হওয়ার আগেই অনেকদলকেই দেখা যায় তুলনামূলক বড় দলগুলোর বিপক্ষে লড়াই করে জয়ের দুয়ারে গিয়ে ফিরে আসতে।

আন্ডারডগদের বিখ্যাত কিছু টেস্ট হার নিয়ে আমাদের এবারের আয়োজন। চলুন তাহলে আরো একবার ধুলোপড়া সে স্মৃতিগুলোকে রোমন্থন করে আসা যাক।

  • বাংলাদেশের মুলতান স্বপ্নভঙ্গ

পাকিস্তান বনাম বাংলাদেশ, মুলতান, ২০০৩

২০০৩ এর সে সিরিজের আগে বাংলাদেশ টেস্ট জেতা তো দুরের কথা, প্রথম ইনিংসে লিডই নিতে পারেনি কখনো। সে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচেই প্রথমবারের মতো প্রথম ইনিংসে লিড নেয় বাংলাদেশ। মুলতানে যখন জয়ের খুব কাছাকাছি চলে গিয়েছিলো খালেদ মাহমুদ সুজনের দল, সমর্থকরা ভেবেছিলেন হয়তো প্রথম ইনিংস লিডের মতো করে প্রথম টেস্ট জয়টাও ধরা দিচ্ছে সহসাই, কিন্তু বিধি বাম!

নিখাদ নাম্বার টেন আর ইলেভেনের যুগে ২৬২ তাড়া করতে নেমে ২০৫ রানের মাথায় নিজেদের অষ্টম উইকেট হারিয়ে ফেলা ছিলো মহাবিপদের চেয়েও বেশি কিছু।

সে খাদের কিনারা থেকে দলকে টেনে তুলে ইনজামাম যখন পাকিস্তানকে স্বস্তির জয় এনে দেন বাংলাদেশের খেলোয়াড়, সমর্থকদের চোখে তখন রাজ্যের বিস্ময়, অবিশ্বাস আর হতাশা। সেদিন বাংলাদেশের চোখের জল পাকিস্তানের সাফল্যের কনফেত্তি হয়ে ঝরে পড়েছিলো মুলতানের মাটিতে।

  • ডি সিলভা আর রানাতুঙ্গায় ভর করে রেকর্ড রান তাড়া শ্রীলঙ্কার

শ্রীলঙ্কা বনাম জিম্বাবুয়ে, কলম্বো, ১৯৯৮

কলম্বোয় রেকর্ড রান চেজ, প্রশ্নবিদ্ধ আম্পায়ারিং, দিনশেষে শ্রীলঙ্কার জয়। সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাবে হুবহু আজকের ম্যাচটার মতো এক দৃশ্যের অবতারণা ঘটেছিলো ঠিক উনিশ বছর আগে।

পল স্ট্র্যাঙয়ের ঘুর্নিতে ভর করে জিম্বাবুয়ে প্রথম ইনিংসে অপ্রত্যাশিত লিড পেয়ে বসে, যাতে ভর করে জিম্বাবুয়ে দল শ্রীলঙ্কার সামনে দাঁড় করায় ৫ সেশনে ৩২৬ রানের এভারেস্ট।

অরবিন্দ ডি সিলভা আর অর্জুনা রানাতুঙ্গার ১৮৯ রানের পার্টনারশিপে সে যাত্রায় পার পেয়ে যায় লংকানরা। শ্রীলঙ্কার এ বিখ্যাত জয়ে কালিমা লেপন করে কিছু আম্পায়ারদের প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্ত যা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে গিয়েছিলো, যেগুলো না হলে হয়তো সেদিন বিজয়ীর হাসি জিম্বাবুয়েই হাসতো।

জিম্বাবুয়ের তৎকালীন কোচ ডেভ হটন তো রীতিমতো বলে বসেন যে তার দলের কাছ থেকে জয়টা ছিনতাই করে নিয়ে নেওয়া হয়েছে!

  • আরো একবার বাংলাদেশের শেষ দুই সেশনের হতাশা, এবার স্বপ্নের হন্তারক পন্টিং

বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান, ফতুল্লা, ২০০৬

সে টেস্টের একটা বড় সময় ধরে চালকের আসনে ছিলো বাংলাদেশ, প্রথম দিনে বিশ্বসেরা অজি বোলিং লাইনআপকে তুলোধুনো করে ৩৫৫ রান তুলে পরে প্রথম ইনিংসে ১৫৮ রানের একটা স্বাস্থ্যকর লিড তুলে নিয়েছিলো স্বাগতিক বাংলাদেশ দল।

যার কারণে দ্বিতীয় ইনিংসে ওয়ার্ন-গিলেস্পির তোপে পড়ে বাংলাদেশ ১৪৮ রানে ইনিংস গুটিয়ে গেলেও অজিদের লক্ষ্য দাঁড়ায় চতুর্থ-পঞ্চম দিনের চিড় ধরা উইকেটে ৩০৭ রান। রফিকের ঘূর্ণিতে অজি মিডল অর্ডার খাবি খেলেও পন্টিংয়ের পেশাদারিত্বের ঠাসবুনটে করা অপরাজিত সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশকে হতাশায় ডুবিয়ে ৩ উইকেটের জয় তুলে নেয় অস্ট্রেলিয়া। 

  • অটল ভেট্টোরি, আরো একবার স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় নীল বাংলাদেশ

বাংলাদেশ বনাম নিউজিল্যান্ড, চট্টগ্রাম, ২০০৮

এ ম্যাচটা ছিলো সাকিবের আজকের সাকিব হয়ে ওঠার ম্যাচ। মাত্রই রফিক অবসর নিয়েছেন, স্কোয়াডে কোনো বিশেষজ্ঞ স্পিনার না দেখে সাংবাদিকরা ব্যাপারটা নিয়ে তৎকালীন কোচ জেমি সিডন্সকে জিজ্ঞেস করলে তিনি সাকিবকে বিশেষজ্ঞ স্পিনার হিসেবে খেলাবেন বলে উত্তর দেন। বলে রাখা ভালো এতদিন পর্যন্ত সাকিব ব্যাটিং অলঅরাউন্ডার হিসেবে দলে ছিলেন।

বিশেষজ্ঞ স্পিনারের ব্যাপারটা পরে ম্যাজিকের মতো ফলে গেলো, সাকিব ৩৬ রানে শিকার করেন ৭ উইকেট। বাংলাদেশ পায় ৭৪ রানের একটা কার্যকর লিড। দ্বিতীয় ইনিংসে সাকিবের ৭১ এ ভর করে কিউইদের সামনে ৩১৭ রানের লক্ষ্যমাত্রা দাঁড় করায় টাইগাররা।

রান তাড়া করতে নেমে যখন ব্ল্যাকক্যাপরা ক্লিনিকাল ফিনিশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো তখন মাত্র ১২ ওভারের ব্যাবধানে তিন উইকেট হারালে বাংলাদেশের আশার পালে জোর হাওয়া লাগে। পরে ভেট্টোরি-ঝড়ে তা দুমড়ে মুচড়ে যায়। নিউজিল্যান্ড পায় ৩ উইকেটের স্বস্তির জয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link