রোনালদো মাত্র রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়েছেন, তাতে করে রিয়াল মাদ্রিদকে চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে ফেলে দেওয়ার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারে না। রিয়াল মাদ্রিদ নামটাই চ্যাম্পিয়নস লিগের জন্য বড় নাম, সে যেই থাকুক না কেন। তাও যখন প্রথম লেগে ২-১ গোলে এগিয়ে আছে তারা।
সান্তিয়াগো বার্নাব্যূতে সেদিন নতুন এক দল দেখেছিল বিশ্ব। রিয়াল মাদ্রিদকে ৪-১ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে পা রেখেছিল আয়াক্স। নতুন এক আয়াক্সকে দেখেছিল বিশ্ব, যা দেখেনি কেউই। ২০১৮-১৯ মৌসুমের সারপ্রাইজ প্যাজকেজ ছিল আয়াক্স।
এরিক টেন হাগের সেই দল খেলেছিল চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমি ফাইনাল। সেখানেও হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছিল মাউরিসিও পচেত্তিনোর টটেনহ্যামের সাথে। ৪-৪ গোলের টাই তারা হেরেছিল অ্যাওয়ে গোলের হিসেবে।
কিন্তু মৌসুম শেষ হতে না হতেই সকলে বুঝে নিয়েছিল, এই দল আর একত্রে থাকছে না। আয়াক্স সবসময়ই একইরকম। আয়াক্সের মতো ক্লাবের পরিণতি এরকমই, তরুণদের গড়া দল নিয়ে অনেকদূর যাবে, এরপর বড় ক্লাবগুলো তাদের থেকে খেলোয়াড় নিয়ে যাবে। আর সেই অর্থ দিয়ে বছর কয়েক পর আবারও তরুণ দল গড়ে চমক দেখাবে আয়াক্স।
সেটাই হয়েছে। মৌসুম শেষ হতে না হতেই হারিয়ে ফেলে দলের কাণ্ডারিদের। একে একে অনেকেই পাড়ি জমায় নতুন ঠিকানায়। চলুন দেখে নেওয়া যাক সেই আর্মস্টার্ডাম রূপকথার নিয়মিত মুখগুলো এখন কে কোথায় আছেন।
- আন্দ্রে ওনানা (গোলরক্ষক) – আয়াক্স
আয়াক্সের ২৫ বছর বয়সী গোলরক্ষক সকলের নজরে এসেছিলেন চ্যাম্পিয়নস লিগ দিয়েই। ২০১৬ সাল থেকে মূল দলের সঙ্গে আছেন তিনি। বার্সেলোনার একাডেমি থেকে তাকে ১৯ বছর বয়সে তাকে কিনে এনেছিল আয়াক্স। সেই থেকে আয়াক্সের ভরসার পাত্র এই ক্যামেরুনিয়ান।
যদিও ডোপ টেস্টে ফেল করে ১ বছরের জন্য মাঠের বাইরে আছে তিনি। গর্ভবতী স্ত্রীর ওষুধ ভুল করে খেয়ে জরিমানা দিতে হচ্ছে তাকে। এই মৌসুম শেষে তাকে আর আয়াক্সের জার্সিতে নাও দেখা যেতে পারে, জার্মানি-ইংল্যান্ড থেকে বেশ ভালো অফার রয়েছে তাদের জন্য, এই শাস্তির জন্যই বলতে গেলে এখনও আয়াক্সে আছেন তিনি।
- মাথিয়াস ডি লিট (ডিফেন্ডার) – জুভেন্টাস
আয়াক্সের সময় থেকেই ইউরোপের সম্ভাবনাময় সেন্টারব্যাক ছিলেন ম্যাথিয়াস হচ্ছেন ডি লিট। আর সে কারণে সেই মৌসুম থেকেই তার দিকে নজর ছিল অনেক ক্লাবের। তবে শেষমেশ তাকে দলে ভেড়ান ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। নেদারল্যান্ড-পর্তুগাল ম্যাচে তাকে জুভেন্টাসে আসার প্রস্তাব দেন রোনালদো নিজেই। ডি লিটও না করেননি। ফলে পরের মৌসুমেই যোগ দেন জুভেন্টাসে ৭৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে। সেই থেকে জুভেন্টাস ডিফেন্সের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ডি লিট।
- ডিলে ব্লিন্ড (ডিফেন্ডার) – আয়াক্স
আয়াক্সের বাড়ির খেলোয়াড় ছিলেন ব্লিন্ড। আয়াক্সের একাডেমী থেকে উঠে এসে নিজেকে প্রমাণ করে এসেছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে। চার মৌসুমে ইউনাইটেডে খেলে আবারও আয়াক্সে ফিরেছেন ব্লিন্ড। সেই আয়াক্স দলের সবচেয়ে বয়স্ক খেলোয়াড়দের একজন ছিলেন ব্লিন্ড। গত মৌসুমে এই ৩১ বছর বয়সী ডিফেন্ডার হৃদরোগের সমস্যায় পড়েন। হৃৎপিণ্ডের সমস্যা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল তাকে। যদিও এই মৌসুমে আবারও আগের ফর্মে ফিরেছেন তিনি।
- নিকোলাস তাগ্লিয়াফিকো (ডিফেন্ডার) – আয়াক্স
আর্জেন্টাইন এই লেফটব্যাক আয়াক্সে এসেছিলেন সেই মৌসুমেই ইন্দিপেন্দিয়েন্তে থেকে। সেই মৌসুমের পর থেকেই তাকে দলে ভেড়ানোর জন্য উঠেপরে লেগেছিল অনেকদল। গুঞ্জন ভারী করেছিল অনেক ইংলিশ ক্লাবই, কিন্তু সবকিছুকে কাটিয়ে আয়াক্সেই রয়ে গিয়েছেন তিনি।
- নুসায়ের মাজরাউই (ডিফেন্ডার) – আয়াক্স
২৩ বছর বয়সী এই মরোক্কান ডিফেন্ডারও উঠে এসেছেন আয়াক্স একাডেমী থেকে। ২০১৮ সালে আয়াক্স সিনিয়র দলের হয়ে অভিষেক হয় তার। আর তার পর থেকে এখনও আয়াক্স দলের সদস্য তিনি। যদিও এই মৌসুমে তাকে মাঝমাঠে পাকাপাকিভাবে সেট করেছেন টেন হাগ।
- ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং (মিডফিল্ডার) – বার্সেলোনা
সেই আয়াক্সের সবচেয়ে প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের ডি ইয়ং। মাত্র ২৩ বছর বয়সেই পাল্লা দিয়ে সেরা খেলোয়াড়দের সাথে। সেবারের চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়াল মাদ্রিদ, জুভেন্টাসের মতো ক্লাবের বিপক্ষে একাই মাঝমাঠ সামলেছেন তিনি। সুযোগটা হাতছাড়া করেনি বার্সেলোনা। বার্সার সাথে আয়াক্সের সম্পর্কটাও বেশ ভালো। বার্সাও তার মাঝে যেন খুঁজে পেয়েছিল ভবিষ্যৎ আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার উত্তরসূরি খুঁজছিল অনেকদিন থেকে। ফলে সে মৌসুম শেষ হওয়ার আগেই তাকে ন্যু ক্যাম্পে আনার কাজ সেরে ফেলেন তারা। দুই বছরের মধ্যে বার্সা মিডফিল্ডের ভরসা হয়ে উঠেছেন তিনি।
- ল্যাস শোনে (মিডফিল্ডার) – আয়াক্স
সান্তিয়াগো বার্নাব্যূতে পিনপতন নিরবতা এনে দিয়েছিলেন এই শোনে। তার দুর্দান্ত ফ্রি-কিক দিয়েই পরবর্তী রাউন্ডে নিশ্চিত হয়েছে তাদের। এই ড্যানিশ খেলোয়াড় আয়াক্সে যোগ দিয়েছিলেন ২০১২ সালে। ৩৪ বছর বয়সী মিডফিল্ডার সে মৌসুমের পরেই যোগ দেন ইতালিয়ান ক্লাব জেনোয়াতে। সেখানে দুই মৌসুমে খেলে এই মৌসুমে আবার যোগ দিয়েছেন শৈশবের ক্লাব হেরেনভিনে।
- ডনি ভ্যান ডি বিক (মিডফিল্ডার) – ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড
সেবারের চ্যাম্পিয়নস লিগের সেরা পারফর্মার ছিলেন ডি বিক। সেমিফাইনালের প্রথম লেগের একমাত্র গোলটিও এসেছিল তার পা থেকে। প্রতিটি আক্রমণের পাইপলাইন ছিলেন তিনি। তার পা দিয়েই মাঝমাঠ থেকে বল যেত আক্রমণভাগে। প্রতিটি ফরোয়ার্ড মুভমেন্টের প্রাণভোমরা ছিলেন তিনি। যদিও এক মৌসুম পরেই আয়াক্স ছেড়েছেন তিনি, পাড়ি জমিয়েছেন ওল্ড ট্রাফোর্ডে। যদিও ওলের দলে তেমন সুযোগ পাচ্ছেন না তিনি।
- হাকিম জিয়েখ (উইঙ্গার) – চেলসি
সেই মৌসুমে সবচেয়ে বেশি নজর কেরেছিল আয়াক্সের আক্রমণভাগ। পাসিং, পজিশনিং, ফিনিশিং; কোনো দিক দিয়ে কম ছিল না তারা। সেই আক্রমণভাগেরই নেতা ছিলেন মরোক্কান উইঙ্গার হাকিম জিয়েখ। সেই মৌসুমেই সকলের নজর কেড়েছিলেন তিনি। আর তখনই বড় বড় ক্লাবের রাডারে পরে গিয়েছিলেন জিয়েখ। রিয়াল-বার্সা সকলের রাডার থেকে সরে শেষমেশ চেলসিতে যোগ দিয়েছেন তিনি। ৩৫ মিলিয়ন ইউরোর বদলে তাকে দলে নিয়ে এখন চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালিস্ট তারা। ইতোমধ্যে চেলসির স্ট্রাইকিং প্রান্তে ভরসার পাত্র হয়ে উঠেছেন তিনি।
- ডেভিড নেরেস (ফরোয়ার্ড) – আয়াক্স
ডেভিড নেরেসকে সাও পাওলোতে খুঁজে পেয়েছিল আয়াক্স। আর সেখান থেকেই ২০১৬ সালে তাকে পাকাপাকিভাবে কিনে আনে আয়াক্স। সেই থেকে আয়াক্সের উইঙ্গের ভরসা তিনি। সেবারের চ্যাম্পিয়নস লিগে বিশেষভাবে নজর কেড়েছিল তার ফিনিশিং। সে মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে গুরুত্বপূর্ণ দুই গোল এসেছিল তার পা থেকে। যদিও সে মৌসুমের পর থেকে অনেক ক্লাবের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিলে ন্তিনি। কিন্তু শেষমেশ তিনি থেকে গিয়েছেন আয়াক্সেই।
- দুসান তাদিচ (স্ট্রাইকার) – আয়াক্স
আয়াক্সের হয়ে সেবার যেন পুনর্জন্ম হয়েছিল সার্বিয়ান তারকার। তার ক্যারিয়ার একপ্রকার শেষই ধরে নিয়েছিল সকলে। সাউদাম্পটনে ১৫০ ম্যাচ খেলে মোটে গোল করেছিলেন ২৩ গোল। ২০১৮ সালে যোগ দেন আয়াক্সে। আর সেখান থেকেই যেন পূর্নজন্ম হয় তার। এসেই প্রথম মৌসুমে করেছিলেন ৩৮ গোল। এখন পর্যন্ত আয়াক্সের মূল তারকা হয়ে আছেন তাদিচ।