কে এই আমান খান!

বাবা চেয়েছিলেন ছেলে পেসা হবেন। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে পেসার হিসেবেই খেলেছেন বেশ কিছু ম্যাচ। কিন্তু এক সড়ক দুর্ঘটনায় পালটে গেল সব। পায়ের সেই আঘাতে পেসার হওয়াটা হল না। তবে সেই ঘটনাই ক্যারিয়ারের ভোল পাল্টে দেয় আমান হাকিম খানের।

সেই দুর্ঘটনার পরের দিনই খেলতে নেমে অনূর্ধ্ব ১৪ দলের হয়ে করেন ৬০ রান। নজর কাঁড়েন কোচ প্রবীন আম্রের, সাবেক ক্রিকেটার থেকে কোচ বনে যাওয়া এই আম্রেই কত শত ক্রিকেটারের জীবন পাল্টে দিয়েছেন। আমানের জীবনেও পরশপাথর হয়ে এসেছিলেন আম্রে। লোয়ার অর্ডার থেকে চারে উন্নীত হলেন আমান। সেখান থেকে বয়সভিত্তিক দলে বনে গেলেন ওপেনার।

পেসার থেকে পাওয়ার হিটার হওয়ার ভ্রমণটা এমনই ছিল কলকাতা নাইট রাইডার্সের আমান হাকিমি খানের। ২৫ বছর বয়সী এই পাওয়ার হিটার আইপিএলের মেগা নিলামে ২০ লাখ রুপি ভিত্তিমূল্যতে কলকাতার হয়ে খেলার সুযোগ পেয়েছেন।

নিজ এলাকার টুর্নামেন্টে খেলতেন হাকিমির বাবা। বাবার সান্নিধ্যেই ক্রিকেটার হিসেবে বেড়ে ওঠা। কলকাতার বর্তমান অধিনায়ক শ্রেয়াস আইয়ারের সাথে বয়সভিত্তিক দলে দীর্ঘ সময় খেলেছেন আমান।

দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে আমান ডাক পান মুম্বাই অনূর্ধ্ব ১৯ দলে। এরপর ভারতের বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট কুচবিহার ট্রফিতে সুযোগ পেলেও লিগামেন্ট ইনজুরিতে ছিটকে যান তিনি।

২০২০-২১ বিজয় হাজারে ট্রফিতে কোয়ার্টার ফাইনালে মুম্বাইয়ের হয়ে আভিষেক হয় আমানের। সৌরাষ্ট্রের বিপক্ষে সেই ম্যাচে ব্যাট কিংবা বল হাতে নিজেকে প্রমাণের সুযোগ পাননি তিনি। পরবর্তীতে সেমিফাইনালে কর্ণাটকের বিপক্ষে ছয় নম্বরে ব্যাট করতে নেমে খেলেন ১৮ বলে ২৫ রানের ইনিংস।

এরপর তিনদিন বাদেই ফাইনালে উত্তর প্রদেশকে হারিয়ে শিরোপা জয় করে আমানের মুম্বাই। ব্যাট হাতে সুযোগ না পাওয়া এই তরুণ বল হাতে ২ ওভারে দেন ২২ রান। এরপর ২০২১-২২ মৌসুমে টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয় আমানের। সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফিতে পাঁচ ম্যাচ খেলার সুযোগ পান তিনি। প্রায় ম্যাচেই খেলেছেন লোয়ার অর্ডারে।

২০১৮ সালে মুম্বাই লিগ টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে ৬ ম্যাচে ১৭০ এর বেশি স্ট্রাইক রেটে ১৮৭ রান করে লাইমলাইটে আসেন আমান। এক ম্যাচে ৬ চার ও ৬ ছক্কায় ৪৭ বলে খেলেন ৮৫ রানের ইনিংস। ওই ইনিংসের পথে শ্রেয়াস আইয়ারের সাথে ১২৭ রানের জুটি গড়েন আমান। এরপর ২০১৯ সালে টি-টোয়েন্টি কাপে ৬০ বলে ১৩৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে নিজের সামর্থ্যর জানান দেন আমান।

ছয় মৌসুম ধরে আইপিএলে বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজিতে ট্রায়াল দেন আমান। যদিও সুযোগ মেলেনি এই তরুণের। অবশেষে মেগা নিলামে সুযোগ ধরা দিল আমানকে। আইপিএলের এবারের আসরে কলকাতার হয়ে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে অভিষেক হয় আমানের।

রাশিক সালামের ইনজুরিতে ভাগ্য খুলে যায় আমানের। দলে সুযোগ পাওয়ার পর অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে কে এই আমান হাকিমি। এরপর হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে ম্যাচে খেলতে নেমে প্রথম বলেই বাউন্ডারি হাঁকান আমান। যদিও ৩ বলে ৫ রান করেই ফিরতে হয়েছে তাঁকে।

কোচ প্রবীন আম্রের সাথে অনূর্ধ্ব ১১ পর্যন্ত শেখার সুযোগ পান আমান। এই আম্রের অধীনেই ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে ওঠা আমানের বয়সভিত্তিক দলের সতীর্থ ও কলকাতা নাইট রাইডার্সের অধিনায়ক শ্রেয়াস আইয়ারের। এবার শ্রেয়াসের হাত ধরেই না হয় এগিয়ে যাক আমানের ক্যারিয়ার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link