শ্রীলঙ্কা অনূর্ধ্ব ১৯ দলের বিপক্ষে যুব টেস্টে খেলেছিলেন ১৮৫ রানের অপরাজিত ইনিংস। ২০১৮ এশিয়া কাপের ফাইনালে সেই শ্রীলঙ্কা অনূর্ধ্ব ১৯ দলের বিপক্ষেই ২৮ বলে ৫২ রানের ঝড়ো ইনিংস। দিল্লীর ক্রিকেটার আয়ুশ বাদোনির ঝড়ো ইনিংসের প্রশংসা টুইটার অবধি ছড়িয়ে পড়ে।
অনেকের মতে ভারতীয় তারকা ক্রিকেটার ঋষাভ পান্তের মতোই হিটিং অ্যাবিলিটি আছে বাদোনির। ১৫তম ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) মেগা নিলামে মাত্র ২০ লাখ রুপিতে তাকে দলে ভেড়ায় নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি দল লখনৌ সুপার জায়েন্টস।
এত এত তারকার ভীড়ে একাদশে সুযোগ পাওয়া নিয়ে ছিল সংশয়। তবে সুযোগ ধরা দিল নিজেদের প্রথম ম্যাচেই। আরেক নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি দল গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে সুযোগ পেয়েই অসাধারণ এক ফিফটি করেন বাদোনি। দলের বিপর্যয়ে ত্রানকর্তার ভূমিকা পালন করেন এই ২২ বছর বয়সী তরুন ক্রিকেটার।
টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে মাত্র ২৯ রানে চার উইকেট হারিয়ে চরম বিপাকে পড়ে লখনৌ। পঞ্চম উইকেটে জুটি গড়ে দলকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলেন দিপক হুডা ও আয়ুশ বাদোনি। পঞ্চম উইকেটে দু’জনে মিলে গড়েন ৮৭ রানের জুটি! এই ৮৭ রানের জুটির পথে ৪১ বলে ৫৬ রানে হুডা ফিরলেও টিকে থাকেন বাদোনি। খেলেন ৪১ বলে ৫৪ রানের অসাধারণ এক ইনিংস! ৩ ছক্কা ও ৪ চারে আইপিএল ইতিহাসে অভিষেকেই সবচেয়ে কম বয়সে ফিফটির রেকর্ড গড়েন বাদোনি!
শ্রীভাস্ত গোস্বামী ও দেবদূত পাদ্দিকালের পর তৃতীয় সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে আইপিএল অভিষেকে ফিফটি গড়েন তরুন বাদোনি। প্রথম ২২ বলে করেন মাত্র ১৩ রান! এরপর ১৫ তম ওভারে গুজরাটের অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়ার প্রথম তিন বলেই ১ ছক্কা ও ২ চারে নেন ১৪ রান। প্রথম ২২ বলে ১৩ রান করা বাদোনি পরের ১৯ বলে করেন ৪১ রান। এর মধ্যে বর্তমান সময়ের সেরা টি-টোয়েন্টি বোলার আফগান তারকা রশিদ খানকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে হাঁকান বিশাল এক ছক্কা!
ইনিংস বিরতির সময় বাদোনি বলেন, ‘আমি হাফ সেঞ্চুরির কথা ভাবিনি, ৫০ করার খানিক বাদে বুঝতে পেরেছিলাম কি হয়েছে! আমার মধ্যে স্নায়ুচাপটা কাজ করছিল। আমি আগের রাতে ঘুমাতেও পারিনি। আমি যখন প্রথম বাউন্ডারি মারলাম তখন বুঝতে পারলাম আমি এখানে খেলার যোগ্য।’
বাদোনি ও হুডার জোড়া ফিফটিতে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৫৮ রান সংগ্রহ করে লখনৌ সুপার জায়েন্টস। জবাবে ব্যাট করতে নেমে রাহুল তেওয়াতিয়া ২৪ বলে অপরাজিত ৪০ রানের ইনিংসে ৪ উইকেট হাতে রেখেই জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় গুজরাট।
এইতো গেল বছর ২০২১ সালে মুম্বাইয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক। দিল্লির হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেছেন এখন অবধি মাত্র ৫ ম্যাচ! আর এই ৫ ম্যাচেই ব্যাট হাতে ছিলেন চরম ব্যর্থ। ৫ ম্যাচে করেন মোটে ৮ রান! ঘরোয়া ক্রিকেটের এই ব্যর্থতার পরেও সামর্থ্যের বিচারে লখনৌর হয়ে দল পান তিনি।
আর সুযোগ পেয়েই করলেন বাজিমাত। ঘরোয়া ক্রিকেটের হতশ্রী পারফরম্যান্সের কালো ছায়াটা মাড়াতে দেননি আইপিএলের মঞ্চে। বিশ্বের সেরা এই ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে সুযোগ পেয়ে অভিষেকেই আলোকিত করে রাখলেন ক্যারিয়ার।
মোহাম্মদ শামি, লকি ফার্গুসন, রশিদ খানদের বিপক্ষে ঠায় দাঁড়িয়ে আধিপত্য দেখান এই তরুন বাদোনি। দলের বিপর্যয়ে খেলেন অসাধারণ এক ইনিংস। আইপিএল অভিষেকেই মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন এই তরুন ক্রিকেটার। সামর্থ্য নিয়ে কোনো সংশয়ই ছিল না। নিজেকে প্রমাণ করে এসেছেন অনূর্ধ্ব-১৯ দল থেকেই। মাত্র ২০ লাখ রুপিতে দলে ভেড়ানো এই তরুন তুর্কি হতে পারে লখনৌর তুরুপের তাস!