ভারতীয় ঘরোয়া ক্রিকেটের পরিচিত মুখ নন তিনি। বরং আইপিএলে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স তাঁকে দলে ভেড়ানোর পর বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন অনেকে। তবে পারফরম্যান্স দিয়েই যেন নিজের আগমনী বার্তার জানান দিলেন নেহাল ওয়াধেরা। পথ হারানো মুম্বাইয়ের টপ অর্ডারের ব্যর্থতা একাই ঘুচিয়ে দিয়েছেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটার।
২২ বছর বয়সী নেহালের আইপিএলে এটাই প্রথম মৌসুম। নিজের অভিষেক মৌসুমেই তিনি আলো ছড়াচ্ছেন ব্যাট হাতে। চেন্নাইয়ের বিপক্ষে ১৪ রানে তিন উইকেট হারিয়ে মুম্বাই যখন কাঁপছে, ঠিক সেই সময়টাতে ব্যাট হাতে পাল্টা আক্রমণ শুরু নেহালের।
অপরপ্রান্তে ব্যাটাররা আসা-যাওয়ার মিছিলে শামিল থাকলেও নেহাল ছিলেন অবিচল। চাপের মুখেই যেন নিজের সেরাটা বের হয়ে আসে এই তরুণের। তাঁর ৬৪ রানের ইনিংসেই সম্মানজনক সংগ্রহ পায় মুম্বাই।
অথচ এবারের আইপিএল শুরুর আগে নেহালকে কেউ চিনতোই না। ঘরোয়া ক্রিকেটে পাঞ্জাবের হয়ে খেললেও তিনি যেন রয়ে গেছেন বিস্মৃতির আড়ালে। লুধিয়ানা থেকে উঠে আসা নেহাল ক্রিকেটের প্রেমে পড়েন সেই ছোটবেলাতেই। মূলত মায়ের আগ্রহেই নয় বছর বয়সে ক্রিকেট খেলতে শুরু করেন নেহাল। এমনকি স্কুলও পরিবর্তন করেন তাঁর মা যেন নেহাল ক্রিকেটে আরো বেশি মনোযোগ দিতে পারেন।
২০১৮ সালে অনুর্ধব-১৯ জাতীয় দলে ডাক পান নেহাল। নিজের অভিষেকেই ব্যাট হাতে আলো ছড়ান এই তারকা, প্রথম ম্যাচেই খেলেন ৮২ রানের দারুণ এক ইনিংস। পরের ম্যাচেও ৬৪ রানের ইনিংস খেললেও জায়গা মেলেনি ছোটদের বিশ্বকাপগামী দলে। হতাশ নেহাল সেবারে মনোনিবেশ করেন ঘরোয়া ক্রিকেটে।
তবে পাঞ্জাবের সিনিয়র দলে জায়গা করে নিতেও বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে তাঁকে। তবে অনুর্ধব-২৩ ক্রিকেটের এক ম্যাচে ৪১৪ বলে ৫৭৮ রানের এক ইনিংসে সবাইকে চমকে দেন এই তরুণ। তাঁর ব্যাটিংয়ে সেদিন হতবাক হয়ে গিয়েছিল সকলে, উল্টেপাল্টে দেখতে হয়েছে রেকর্ডবুক।
ব্রায়ান লারার ৫০১ কিংবা বিবি নিম্বলকরের ৪৪৩ রানের রেকর্ড পেছনে ফেলেন নেহাল। ভারতের যেকোনো সারির স্বীকৃত ক্রিকেটে দ্রুততম ২০০,৩০০,৪০০ এবং ৫০০ রানের রেকর্ড তাঁর দখলেই।
কেবলমাত্র ব্যাট হাতে নয়, নেহালের লেগস্পিনও সমান কার্যকরী। সেই টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে বল হাতে তিন উইকেট শিকার করে দলকে ফাইনালে তোলেন এই তারকা। সেই টুর্নামেন্টের পরই মূলত পাঞ্জাবের সিনিয়র স্কোয়াডে জায়গা পান নেহাল।
এই বছরের শুরুতে রঞ্জি ট্রফিতে অভিষেক হয় এই তরুণের। অভিষেক ম্যাচেই আলো ছড়ান তিনি, গুজরাট বিপক্ষে হাঁকান দারুণ এক সেঞ্চুরি। এছাড়া প্রথম মৌসুমেই মধ্য প্রদেশের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরি করেন নেহাল। এখনো পর্যন্ত প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে পাঁচ ম্যাচ খেলে ৫৩.৫১ গড়ে তাঁর সংগ্রহ ৩৭৬ রান।
এরপরই মূলত নিলাম থেকে ভিত্তিমূল্য বিশ লাখ রুপিতে তাঁকে দলে ভেড়ায় মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। নিজের প্রথম মৌসুমেই দলটির আস্থার প্রতিদান দিচ্ছেন এই তারকা। তবে নেহালের ক্যারিয়ারের সবেমাত্র শুরু। ফর্মটা ধরে রাখতে পারলে অবশ্য পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না এই তরুণকে।