বিগ ম্যাচ, বিগ ইনিংস

একদিকে ফাফ ডু প্লেসিস, বিরাট কোহলি, গ্লেন ম্যাক্সওয়েলরা ব্যর্থতার খাতায় নাম লিখিয়ে প্যাভিলিয়নে পথ ধরেছেন। এলিমিনেটরে কি তাহলে আবার আক্ষেপ নিয়ে বাদ পড়তে হবে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুকে? গেল দুই আসরে যে এলিমিনেটরেই কাটা পড়েছে দলটি।

এবারের আসরে এলিমিনেটর বাঁধা পেরোতে হলে জয় পেতে হবে লখনৌ সুপার জায়েন্টসের বিপক্ষে। কিন্তু প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শূন্য রানেই আউট অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস। বিরাট, ম্যাক্সিরাও ফিরেন অল্পতেই। তিন বড় তারকাকে হারানোর পরেও লখনৌর সামনে দাপট ছিল ব্যাঙ্গালুরুর।

এই দাপটের মূল কারিগর রজত পাতিদার। কে এই পাতিদার? এলিমিনেটরে যেখানে লখনৌর বোলিং দাপটের সামনে ব্যাঙ্গালুরুর তারকা ক্রিকেটাররা ছিলেন অসহায় – সেখানে একক আধিপত্য বিস্তার করে অবিশ্বাস্য এক সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন রজত।

কথায় আছে, ‘কারো পৌষ মাস তো কারো সর্বনাশ।’ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) পঞ্চদশ আসরের মেগা নিলামে ২০ লাখ ভিত্তিমূল্য থাকলেও দল পাননি পাতিদার। দ্বিতীয় বার নিলামে নামই উঠেনি তাঁর। আইপিএলে অবশ্য তিনি একেবারেই নতুন মুখ নন; খেলেছেন গেল আসরেও। ব্যাঙ্গালুরুর জার্সি গায়ে ৪ ম্যাচে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি তিনি। সেই ব্যর্থতার মাশুলটা দিতে হয়েছে মেগা নিলামে। কোনো দলই আগ্রহ দেখায়নি তাঁকে নিতে।

টুর্নামেন্টের মাঝ পথে লুভনিৎ সিসোডার ইনজুরিতে সুযোগ নিজেই আবার ধরা দিল পাতিদারের কাছে। টুর্নামেন্টের মাঝ পথে ভিত্তিমূল্য ২০ লাখ রুপিতে পাতিদারকে দলে ভেড়ায় রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু। নিজের দ্বিতীয় ম্যাচেই গুজরাটের বিপক্ষে করেন দুর্দান্ত এক ফিফটি; খেলেন ৩২ বলে ৫২ রানের ইনিংস। পরের ম্যাচগুলোতেও ব্যাট হাতে খেলেছেন ঝড়ো ইনিংস। টপ অর্ডারে পাতিদার বনে গেলেন দলের ভরসার নাম।

এলিমিনেটরে একপ্রান্তে যখন প্লেসিস, বিরাট, ম্যাক্সওয়েলরা খাবি খাচ্ছে – আরেকপ্রান্তে ব্যাট হাতে তাণ্ডব চালাচ্ছিলেন পাতিদার। প্রথম ২৮ বলে তুলে নেন ফিফটি। এরপর চার-ছক্কার ফুলঝুরিতে পৌঁছে যান সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে। সেঞ্চুরির খানিকটা আগে দীপক হুডার হাতে জীবন পান তিনি। এরপর আর সুযোগ দেননি; মহসিন খানকে দুর্দান্ত এক শটে মিড উইকেটের উপর দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে পূর্ণ করেছেন টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের মেইডেন সেঞ্চুরির।

৫৪ বল, ১১২ রান। ১২ চার, ৭ ছক্কা। স্ট্রাইক রেট ২০৭.৪১।

রবি বিষ্ণয়ের এক ওভারে ৩ ছক্কা, ২ চারে নেন ২৬ রান।ক্রুনাল পান্ডিয়ার এক ওভারে আদায় করেন ১৯ রান। পাতিদারের মাথা নোয়ারে পারেননি লখনৌর বোলাররা। ২৮ বছর বয়সী এই ব্যাটার বড় মঞ্চে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেই প্রমাণ করেছেন নিজেকে। পাতিদারের বিধ্বংসী ইনিংসে ২০৮ রান সংগ্রহ করে ব্যাঙ্গালুরু। পাতিদারের কাঁধে চড়ে ১৪ রানের অসাধারণ এক জয়ে ফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়ে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে ব্যাঙ্গালুরু।

প্রথম ব্যাঙ্গালুরুর ক্রিকেটার হিসেবে আইপিএল প্লে অফে সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন পাতিদার। সেই সাথে আইপিএল এলিমিনেটরে প্রথম সেঞ্চুরির কীর্তিও তার নামেই; এবারের আসরে দ্রুততম সেঞ্চুরির মালিক। ‘আনক্যাপড’ (জাতীয় দলে অভিষেক না হওয়া) ক্রিকেটারদের মধ্যে প্রথম হিসেবে প্লে অফে সেঞ্চুরির রেকর্ড।

ক’দিন আগেই টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন। প্রায় ১৩৮ স্ট্রাইক রেট আর ৩১ গড়ে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে রান করেছেন তিনি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও আছে প্রায় ২৫০০ রান। মূলত লংগার ভার্সনের ক্রিকেটার হিসেবে পরিচিতি থাকলেও টি-টোয়েন্টির সম্ভাবনাময় এক তারকা তিনি; সেটার প্রমাণও দিয়েছেন ব্যাট হাতে।

মধ্য প্রদেশের হয়ে খেলছেন ২০১৫ সাল থেকে। ঘরোয়া ক্রিকেটে মধ্য প্রদেশের হয়ে তিনি ‘লর্ড হনুমান’ নামেই বেশ পরিচিত। দলের প্রয়োজনে সবসময় হেসে ওঠে পাতিদারের ব্যাট। সতীর্থ ইশ্বর পান্ডে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ সে আমাদের দলের জন্য লর্ড হনুমান, এখন সে ব্যাঙ্গালুরুর হনুমান হয়ে গেছে। ‘

সিসোডার ইনজুরি পাতিদারের ক্যারিয়ারে এনে দিল ভিন্ন মোড়। সুযোগ লুফে নিতে পারে ক’জনে? মেগা নিলামে দল না পাওয়া পাতিদার এখন ব্যাঙ্গালুরুর জয়ের নায়ক। ভাগ্য কখন কাকে কোথায় তুলে দিতে পারে সে জানার সাধ্য নেই কারো। তবে কর্মপ্রচেষ্টা আর ধৈর্য্যশক্তি সাফল্যের দুয়ারে নিয়ে যেতে পারে তার বড় এক উদাহরণ রজত পাতিদার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link