সাকিব-তামিম নাকি আমরা, ‘ভুয়া’ আসলে কে!

যেহেতু গত রাতের ঘটনাটা একদমই সাকিব-তামিমের মধ্যে সীমাবদ্ধ এবং সেটা কেবল উদযাপনকে ঘিরে, দর্শকদের বিপক্ষে কোনো প্রতিক্রিয়াকে কেন্দ্র করে নয়, তাই গত রাতের ঘটনাটার সাথে চার দিন আগে ঘটে যাওয়া সাকিবের সেই ঘটনার কোনো যোগসূত্র আমি অন্তত দেখছি না।

আসলে কী ভাই, আমরা সমালোচনার সুযোগ পেয়েও ঠিকঠাক সমালোচনাটা করতে পারি না। হয় গালিগালাজ দিয়ে শুরুতেই একটা গুবলেট পাঁকিয়ে বসি নয়তো প্রসঙ্গের বাইরে গিয়ে হাবিজাবি কথাবার্তা বলে সমালোচনার সুযোগটাকে ধ্বংস করে ফেলি।

গত রাত থেকেই বিপিএলে সাকিব আল হাসানের আউটের পর তামিম ইকবালের উদ্‌যাপন নিয়ে এখন কম আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে না। সমালোচনার যথেষ্ট রসদও রয়েছে সেখানে। কিন্তু সমালোচনা করতে গিয়ে অনেককে বলতে দেখছি, তামিমের ক্যারিয়ারের একমাত্র অর্জন না কি সাকিবের মতো ক্রিকেটারের সাথে তাঁর ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব। তামিম না কি নিজেকে আলোচনায় রাখতে এসব করেছেন যেন তাঁকে পরবর্তীতে কেউ ভুলে না যায়। কারণ, তিনি না কি নিজেকে মনে রাখার মতো কিছুই করতে পারেননি আজ অবধি।

সিরিয়াসলি? মানুষ কতটা নির্বোধ হলে এসব বলতে পারে, আমার বোধে আসে না। আরে ভাই, নিজেকে দীর্ঘকাল মনে রাখার মতো যথেষ্ট অর্জন তামিম ইতোমধ্যে করে ফেলেছেন। তাঁর ক্যারিয়ারের কঠিনতম সময়ে এসে আপনি হয়তো সেগুলো ভুলে যেতে পারেন, কিন্তু ইতিহাস তো আর ভুলবে না। তামিম এখন পর্যন্ত যা যা করেছেন, সেগুলো ইতিহাসের পাতায় তো বটেই, মানুষের মনেও ঠিকই ঠাঁই পেয়ে থাকবে আজীবন।

একই কথা প্রযোজ্য কোনোকিছু ডিফেন্ড করার ব্যাপারেও। আমরা ভাই সমালোচনার মতো ডিফেন্ডটাও ঠিকঠাক করতে পারি না। এক্ষেত্রেও হয় গালিগালাজ করি, আমি নিজেই যার ভুক্তভোগী, নয়তো প্রসঙ্গের বাইরে কথা বলি, যেমন- তামিমের উদ্‌যাপনকে ডিফেন্ড করতে এসে দর্শকদের উদ্দেশ্যে দিন চারেক আগে করা সাকিবের একটা অশ্লীল অঙ্গভঙ্গির ঘটনাকে তুলে ধরা।

প্রথমত, ওটা একেবারেই প্রসঙ্গের বাইরে পড়ে। ওটা সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা আলোচনা। এখনকার প্রসঙ্গটা হলো গত রাতে শেষ হওয়া রংপুর-বরিশাল ম্যাচে তামিমকে আউট করার পর সাকিবের উদ্‌যাপন এবং সাকিব আউট হবার সাকিবকে নকল করেই তামিমের উদ্‌যাপন। সাকিবের উদ্‌যাপনের সাপেক্ষে তামিমের উদ্‌যাপনটা কতটা যৌক্তিক ছিল, তা নিয়েই মূলত আলোচনা-সমালোচনা। এখানে চার দিন আগে সাকিবের ওই ঘটনাটাকে নতুনভাবে তুলে ধরার মানে কী?

দ্বিতীয়ত, সাকিবের সেই অশ্লীল অঙ্গভঙ্গিটা কিন্তু তামিমের বিপক্ষে ছিল না। আর সেটা কোনো উদ্‌যাপন তো ছিলই না৷ সেটা ছিল দর্শকদের ‘ভুয়া ভুয়া’ রবের বিপক্ষে সাকিবের মেজাজ হারানো একটা প্রতিক্রিয়া। বলার অপেক্ষা রাখে না, সেটা ছিল যারপরনাই দৃষ্টিকটু এবং পুরোপুরি অসমর্থনযোগ্য। সাকিব সেখানে নিশ্চিতভাবে অপরিপক্বতার পরিচয় দিয়েছেন৷

অথচ সপ্তাহ দুয়েক আগেও একই ঘটনায় কী পরিপক্বতার সাথেই না নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন সাকিব। তখন দর্শকদের ‘ভুয়া ভুয়া’ রব শুনে সাকিবও তাতে শামিল হয়ে ‘ভুয়া ভুয়া’ বলতে শুরু করেন। এতে করে দর্শকরা খুশি হয়ে সেই রব থামিয়ে সাকিবের পক্ষেই রব ওঠিয়ে বসেন।

এত সুন্দর ও ফলপ্রসূ প্রতিক্রিয়ার পরেও গেল শুক্রবার কী বুঝে সাকিব দর্শকদের উদ্দেশ্যে ব্যাট হাতে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করলেন, তিনিই ভালো জানেন!

এই ঘটনাটা আসলে ভিন্ন আলোচনার অবকাশ রাখে। ওই আলোচনায় আবার দুজনেরই দর্শকদের সাথে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় জড়ানো একাধিক উদাহরণের কথা সামনে চলে আসতে বাধ্য। যেহেতু গত রাতের ঘটনাটা একদমই সাকিব-তামিমের মধ্যে সীমাবদ্ধ এবং সেটা কেবল উদযাপনকে ঘিরে, দর্শকদের বিপক্ষে কোনো প্রতিক্রিয়াকে কেন্দ্র করে নয়, তাই গত রাতের ঘটনাটার সাথে চার দিন আগে ঘটে যাওয়া সাকিবের সেই ঘটনার কোনো যোগসূত্র আমি অন্তত দেখছি না।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...