উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারীর কথা সবারই জানা। কালাজ্বরের প্রতিষেধক আবিষ্কার করেছিলেন তিনি। আমি অন্য এক উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারীর গল্প বলছি। এই বঙ্গতনয় পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। বছর ছয়েক আগে তাঁকে নিয়ে স্টোরি হয়েছিল কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে। শিরোনামে এসেছিল বর্ধমানের যুবকের নাম।
২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে ধরাশায়ী হয়েছিল ভারত। বিরাট কোহলি সেই সময়ে ভারতীয় দলের অধিনায়ক। কোচ অনিল কুম্বলে। ভারতীয় ক্রিকেটের অন্ধকার সময় তখন। অনেক ভাবনা চিন্তা করে কোহলিদের হেড স্যার করা হয়েছিল কুম্বলেকে। কিন্তু তাঁর বিসর্জন হয়েছিল অত্যন্ত হতশ্রী ভাবে। অত্যন্ত কুৎসিত বিজ্ঞাপনের নজির তৈরি করেছিল ভারতীয় ক্রিকেট।
অধিনায়ক কোহলি কোচ কুম্বলের কাজের পদ্ধতি ভালভাবে মেনে নিতে পারেননি। কোচ ও অধিনায়কের সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকেছিল। বনিবনা না হওয়ায় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালের পরেই কোচের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেন কুম্বলে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পরই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যাওয়ার কথা ছিল ভারতের। কুম্বলে সরে যাওয়ায় ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড নতুন কোচের জন্য বিজ্ঞাপন দিয়েছিল।
একাধিক প্রাক্তন তারকা জাতীয় দলের হেড কোচের পদের জন্য জীবনপঞ্জী জমা দিয়েছিলেন। সেই তালিকায় নিজের নাম লিখিয়েছিলেন উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারীও। বঙ্গসন্তান তখন কর্মসূত্রে মহারাষ্ট্র নিবাসী। একটি বহুজাতিক সংস্থার ইঞ্জিনিয়ার তিনি। ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের অন্ধ ভক্ত। অনিল কুম্বলেও তাঁর প্রাণাধিক প্রিয় একজন ক্রিকেটার। সেই অনিল কুম্বলের চূড়ান্ত অসম্মান মেনে নিতে পারেননি। বিসিসিআই-কে মেল করে তাঁর জীবনপঞ্জী পাঠিয়ে দেন। হতে চান ভারতীয় দলের হেডকোচ।
অনেক কষ্ট করে উপেনবাবুর ফোন নম্বর জোগাড় করে ফোন করেছিলাম। কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, এমন একটা পদক্ষেপ কেন নিলেন? উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী যা বলেছিলেন সেদিন বিকেলে, তার নির্যাস ছিল, কুম্বলের অসম্মানে তিনি ব্যথিত। সেই কারণেই প্রতিবাদ হিসেবে হেড কোচ হওয়ার আবেদন করে নিজের জীবনপঞ্জী পাঠিয়েছেন।
কোচের পদের জন্য আবেদনে বর্ধমানের যুবক সেই সময়ে লিখেছিলেন, ‘আমাকে কেন কোচ করা হবে?’
তিনি বিশ্বাস করতেন, অধিনায়ক কোহলির দুর্বিনীত আচরণের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা তাঁর রয়েছে। কিন্তু অন্য কোনও কিংবদন্তি ক্রিকেটারের পক্ষে অসম্মানিত হয়ে কোচের পদে থেকে যাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু তিনি অধিনায়ককে ধীরে ধীরে সঠিক রাস্তায় নিয়ে আসতে পারবেন। এমন দৃঢ় বিশ্বাস ছিল নিজের উপরে।
দুর্বিনীত অধিনায়ক শান্ত হলে, বোর্ড একজন কিংবদন্তি ক্রিকেটারকে কোচ হিসেবে নিয়োগ করবে। এই ছিল তাঁর অভিপ্রায়।
ছোটবেলা থেকে যে ক্রিকেটাররা ছিলেন তাঁর স্বপ্নের ফেরিওয়ালা, তাঁদের অসম্মান, অপমান মেনে নিতে পারেননি। সেই কারণেই প্রতিবাদের উপায় খুঁজছিলেন। তিনি নিজেও জানতেন, জাতীয় দলের কোচ হওয়ার জন্য যে যোগ্যতা দরকার তা নেই তাঁর। তথাপি নিজের জীবন-পঞ্জী সটান পাঠিয়ে দেন বিসিসিআই-এর সদর দফতরে।
বাঙালি ইঞ্জিনিয়ার বাবুকে নিয়ে লেখা স্টোরিটা বেশ চলেছিল সেদিন।