‘আপনি যদি নিজেকে অপ্রয়োজনীয় মনে করেন, তবে ভেবে দেখেন অলিম্পিকের সাঁতার ইভেন্টে একজন লাইফ-গার্ড কাজ করেন।’ এমন এক ব্যাঙ্গচিত্র তথা ‘মিম’ ছড়িয়ে পড়েছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যেখানে পৃথিবীর সবচেয়ে তুখোড় সাঁতারুরা অবস্থান করছেন, সেখানে একজন লাইফ-গার্ডের কাজটা মূলত কি?
এই পদের দায়িত্ব-রতদের তাচ্ছিল্যই হয়ত করছেন অনেকে। তবে একেবারেই ফেলনা নন তারা। কিংবা তাদের দায়িত্বকে খুব একটা খাটো করে দেখবার সুযোগ নেই। দুর্ঘটনা আগাম বার্তা জানিয়ে আসে না। যেকোন মুহূর্তে দুর্ঘটনার মুখোমুখি হতে পারেন যে-কেউ।
যেকোন সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যেতে পারে। সেসব মুহূর্তের জন্যই প্রস্তুত রাখা হয় লাইফ-গার্ডদের। এমনকি সাঁতার চলাকালীন সময়ে সুইমিংপুলে কোন অবাঞ্ছিত বস্তু যাতে ব্যাঘাত ঘটাতে না পারে, সেদিকেও নজর রাখতে হয়ে লাইফ-গার্ডদের। প্রতিযোগী ছাড়া একমাত্র তাদেরই অনুমতি রয়েছে সুইমিংপুলে নামবার।
একবার তো এমন ঘটনা ঘটেছিলও বটে। প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে, এমন সময়ে সুইমিংপুলে ভেসে বেড়াচ্ছে সুইমিং ক্যাপ। কোন এক সাঁতারুর মাথা থেকে খুলে গিয়েছিল তা। তৎক্ষণাৎ একজন লাইফ-গার্ড তুলে ফেলেন সেটি। সে কাজের জন্য ‘বব দ্য ক্যাপ ক্যাচার’ তকমাও পেয়ে যান জনৈক সেই লাইফ-গার্ড।
তাদেরকে প্রতিটা মুহূর্তের জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। সদা সচেষ্ট থাকতে হয় যেকোন বিপদ মোকাবেলায়। প্রতিটা মুহূর্তে তারা প্রস্তুত থাকেন, সেটাই তাদের দায়িত্ব। এই কাজটাও মোটেও সহজ নয়। সদা সচেষ্ট থাকা মানসিক দৃঢ়তার অর্জনের জন্যও বেশ কঠিন প্রস্তুতি নিতে হয় তাদের।
তবুও হয়ত প্রশ্ন আসতে পারে, তাদের দরকারটা কি? যেকোন সময় একজন অ্যাথলেট অবচেতন হয়ে যেতে পারেন। জ্ঞান হারিয়ে তলিয়ে যেতে পারেন নিম্নভাগে। সময় মত তাকে উদ্ধার করা না হলে মৃত্যু ঝুঁকিও থেকে যায়। ঠিক সে কারণেই লাইফ গার্ডদের থাকা বিষয়ে জোর দাবি জানিয়েছেন আমেরিকান অলিম্পিয়ান রেগান স্মিথ।
তিনি বলেন, ‘যে মুহূর্তে লোকেরা ভাবতে শুরু করে যে আমাদের লাইফ গার্ডের প্রয়োজন নেই তখন একটি অদ্ভুত দুর্ঘটনা ঘটে।’ তেমন এক দুর্ঘটনা ঘটেছিল ২০২২ সালের অ্যাকুয়াটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে। আর্টিস্টিক সুইমার আনিতা আলভারেজ তার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এরপর তলিয়ে যেতে শুরু করেন। তখন অবশ্য লাইফ-গার্ড হেলাফেলা করেছিলেন।
তিনি হয়ত ভেবেছিলেন কিছুই হয়নি সেই সাঁতারুর। তবে তার কোচ বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে ঝুঁকি অনুধাবন করা মাত্রই ঝাঁপ দেন পানিতে। এরপর বাঁচিয়ে আনেন সেই সাঁতারুকে। সে ঘটনাই হয়ত আবার প্রমাণ করেছে যে, অলিম্পিকের সাঁতার প্রতিযোগিতাতেও লাইফ-গার্ড থাকা প্রয়োজন। ঠিক সে কারণেই ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকেও লাইফ-গার্ড রাখা হয়েছে।