কিছুটা দৃষ্টিভ্রম হতেই পারে! কলকাতা নাইট রাইডার্সের ঘরের মাঠ ইডেন গার্ডেন। কিন্তু সেই মাঠেই গত রবিবারের ম্যাচে গোটা গ্যালারিতে সিংহভাগ মানুষের গায়ে চেন্নাই সুপার কিংসের হলুদ জার্সি! ৬৭ হাজার দর্শকাসনের ইডেন প্রায় পুরোটাই হলুদ জার্সিতে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল।
নিজভূমে কলকাতা নাইট রাইডার্সের এমন পরবাসী হওয়ার কারণ কি? কিংবা কলকাতার মাটিতে ম্যাচ হওয়ার স্বত্ত্বেও টেলিভিশনের অপরপ্রান্তের দর্শক কেন এক মুহূর্তের জন্য ধন্দে পড়ে যাচ্ছে, ‘ম্যাচ টা কি চেন্নাইতে’— এমন ভাবনায়? কারণটা মহেন্দ্র সিং ধোনি নামের এক চল্লিশ বছরের এক যুবক।
এবারের আইপিএলই ধোনির শেষ আইপিএল—এমন সম্ভাবনা প্রবল। আর সেই সম্ভাব্যতার চিত্র এঁকেই ইডেনের মাটিতে ক্রিকেটার হিসেবে ধোনির শেষ পদচিহ্নের এক জমকালো আয়োজনের মঞ্চায়ন করেছিল কলকাতার দর্শকরা।
স্টেডিয়াম জুড়ে ‘ধোনি ধোনি’ চিৎকার ম্যাচের শুরু থেকেই। ধোনি ব্যাট করতে নামার সঙ্গে সঙ্গে সেই চিৎকার রূপ নেয় জয়োধ্বনিতে। ইডেনের মাঠ। অথচ কলকাতার জন্য সমর্থনের ছিটেফোঁটাও পাওয়া গেল না স্টেডিয়ামে আসা দর্শকদের কাছ থেকে। গোটা গ্যালারিতে ধোনির জার্সি, চেন্নাইয়ের পতাকা ভর্তি। এক প্রকার ‘মাহি’ মোহেই কলকাতার রঙ পাল্টে যায় বেগুনি থেকে হলুদ আভায়।
অবশ্য ইডেনের দর্শকদের এমন রূপ পাল্টে যাওয়ার নেপথ্যে শুধুই কি ধোনি? মোটেই তা নয়। রিঙ্কু সিংয়ের টানা ৫ ছক্কায় ম্যাচ জেতানো ইনিংসের পর আর একটা ম্যাচও জিততে পারেনি কলকাতা। সেই থেকে হ্যাটট্রিক হারের তিক্ত স্বাদ নিতে হয়েছে নিতিশ রানা, রাসেলদের দল। দলে রয়েছে বড় মুখ। তারপর প্রত্যাশিত সাফল্য মিলছে না দল থেকে। গুঞ্জন আছে, টানা ব্যর্থতায় দলের উপর ত্যাক্ত বিরক্ত স্বয়ং কলকাতার সমর্থকরাই।
তবে রবিবারের ম্যাচে কলকাতার দর্শদের ভোল পাল্টে যাওয়ার মূলে রয়েছেন ঐ ধোনিই। বেগুনি ছেড়ে হলুদ হয়ে যাওয়া ইডেনের গ্যালারির নেপথ্যে রয়েছেন এই ধোনিই। কারণ ইডেনের এই ঐতিহাসিক মাঠে সেটিই ধোনির শেষ ম্যাচ হতে যাচ্ছে। ধোনিও সেই আভাস দিয়েছেন। কলকাতার দর্শকদের এমন ভালোবাসায় অভিভূত হয়েছেন ধোনি। পরে আবেগাপ্লুত হয়ে এটাও বলেছেন যে, ‘তাঁরা আমাকে বিদায়ী সংবর্ধনা দিতে এসেছিল।’
ইডেনের গ্যালারিতে চেন্নাইকে নিয়ে এমন উচ্ছ্বাসের দিনে জয়টাও পেয়েছে ধোনির চেন্নাই। চেন্নাইয়ের ২৩৫ রানের রানপাহাড়ের সামনে ১৮৬ তেই থামতে হয় কলকাতাকে। ধোনি এ দিন ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন। তবে ইনিংসের শেষদিকে ব্যাট হাতে নেমে সুযোগই পেয়েছেন মাত্র ৩ টা বল। কিন্তু ক্ষণিকের ঐ ‘মাহি’ মুহূর্তেই গোটা গ্যালারির উচ্ছ্বাস রূপ নিয়েছিল এক প্রকার জলোচ্ছ্বাসে।
নামটা ‘ধোনি’ বলেই হয়তো সম্ভব। যার হাত ধরে ২৮ বছরের দীর্ঘ অপেক্ষা ঘুচিয়ে প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠা বেড়াজাল টপকে বিশ্বকাপ জিতেছিল ভারত। তার আগে তো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দিয়েই একটা সম্ভাবনার গল্পের কথার জানান দিয়েছিলেন।
২০১১ বিশ্বকাপের দুই বছর বাদেই আবার ধোনির নেতৃত্বে ভারতের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা জয়। আর ঐ শিরোপাতেই ধোনির অনন্য ইতিহাস লেখা হয়। কারণ সব মিলিয়ে ইতিহাসের একমাত্র অধিনায়ক হিসেবে আইসিসি’র সম্ভাব্য সব শিরোপা যে জিতেছেন ঐ ধোনিই।
ধোনি তাই ভারতীয় ক্রিকেটের পরম এক আবেগের নাম। সেটা ঝাড়খণ্ড কিংবা কলকাতার। ধোনিকে নিয়ে উৎসব হয় সব খানেই। ধোনিই পারেন, প্রতিপক্ষের মাটিতে গিয়ে প্রতিপক্ষকেই পরবাসী বানাতে। অদ্ভুত এক মোহে ভাসাতে পারেন দর্শক, সমর্থকদের।