ওয়ানডেতে কেন সফল নন সুরিয়াকুমার যাদব?

টি-টোয়েন্টিতে যেখানে তাঁর ব্যাটিং গড় ৪৫.৬৪, সেখানে ওয়ানডে ক্রিকেটে তা মাত্র ২৪.৩৩। আর গত এক বছরের তাঁর ব্যাটিং গড় গিয়ে নেমেছে ১৩.২১-এ। সেঞ্চুরি তো দূরে থাক, সর্বশেষ ১৮ ইনিংসে সুরিয়া পাননি কোনো অর্ধশতক। টি-টোয়েন্টিতে আগ্রাসী এ ব্যাটারের ওয়ানডে ক্রিকেটে ব্যর্থ হওয়ার কারণটা কী?

সাদা বলের ক্রিকেট। অথচ টি-টোয়েন্টি থেকে একদিনের ক্রিকেটে গেলেই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। এ দৃশ্যপটের সফলতা-ব্যর্থতার দুই মেরুতেই রয়েছেন ভারতের সুরিয়াকুমার যাদব।

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ব্যাটারদের র‌্যাংকিংয়ে এই মুহূর্তে শীর্ষে থাকা ব্যাটারের নাম সুরিয়াকুমার যাদব। কিন্তু বিস্ময়করভাবে, ওয়ানডে ক্রিকেটে খেলতে নামলেই যেন খেই হারিয়ে ফেলেন তিনি। নিজের ছায়া হয়ে ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি এঁকে প্রতি ম্যাচেই সুরিয়ার মাথা নিচু করে সাজঘরে যাওয়াটা যেন হয়ে উঠেছে চিরায়ত এক দৃশ্য।

টি-টোয়েন্টিতে যেখানে তাঁর ব্যাটিং গড় ৪৫.৬৪, সেখানে ওয়ানডে ক্রিকেটে তা মাত্র ২৪.৩৩। আর গত এক বছরের তাঁর ব্যাটিং গড় গিয়ে নেমেছে ১৩.২১-এ। সেঞ্চুরি তো দূরে থাক, সর্বশেষ ১৮ ইনিংসে সুরিয়া পাননি কোনো অর্ধশতক। টি-টোয়েন্টিতে আগ্রাসী এ ব্যাটারের ওয়ানডে ক্রিকেটে ব্যর্থ হওয়ার কারণটা কী?

মূল কারণটা তাঁর ঐ ব্যাটিং আগ্রাসনই। মাঠের চার দিকে শট খেলার সক্ষমতা তিনি বহু আগেই দেখিয়েছেন। কিন্তু ফরম্যাট বদলে গেলেও তাঁর ব্যাটিংয়ের ধরণটা সেই টি-টোয়েন্টি ঘরানারই রয়ে গিয়েছে। অত্যধিক শট খেলার প্রবণতায় আটকেও যাচ্ছেন সিংহভাগ ম্যাচেই। শুরু ভাল করলেও ইনিংস লম্বা করতে পারছেন না। আবার মাঝেমধ্যে শুরুতে এসে বোলারকে ঠিকঠাক রিডও করতে পারছেন না।

ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট অবশ্য সুরিয়ার উপর থেকে এখনই হাত সরাতে চাইছে না। বিশ্বকাপে সুরিয়া এক্স ফ্যাক্টর হতে পারেন, এই আশায় নিয়মিত সুযোগ দিয়ে যাচ্ছে তাঁকে। কিন্তু বিশ্বকাপ ঘনিয়ে এলেও এ ব্যাটার আস্থার প্রতিদানটা কোনোভাবেই দিতে পারছেন না।

এ বছরের মার্চে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে টানা তিন ওয়ানডেতে শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন। জড়িয়েছেন বিব্রতকর রেকর্ডে। তবে সেই তিক্ততা মুছে ফেলার মতো কিছু করে দেখাতে পারেননি তিনি। উইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের তিন ম্যাচে তাঁর রান যথাক্রমে—১৯, ২৪ ও ৩৫।

সংখ্যাটা দেখেই বুঝা যাচ্ছে, সেট হয়ে আউট হয়ে এসেছেন। শুরুর ছন্দটা নিজের ধৈর্য্যচ্যুতিতেই উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন। ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজের এমন ব্যর্থতার কথা অবশ্য নিজেও অকপটে স্বীকার করেছেন সুরিয়াকুমার যাদব। তবে এখনও নিজের উন্নতিতে চোখ রাখছেন তিনি।

সুরিয়াকুমার যাদব অবশ্য নিজেকে কিছুটা ভাগ্যবান ভাবতেই পারেন। একে তো টিম ম্যানেজমেন্টে পাশে পাচ্ছেন। তার উপর নাম্বার ফোর আর ফাইভে খেলার জন্য ভারতের অন্যতম পছন্দ শ্রেয়াস আইয়ার, লোকেশ রাহুলরা ইনজুরির কারণে রয়েছেন মাঠের বাইরে।

লোকেশ রাহুল ফিরলে ভারতের একাদশে ৫ নম্বর জায়গাটা তাঁর জন্যই বরাদ্দ থাকতে চলেছে। এরপর ছয়ে হার্দিক পান্ডিয়া আর সাতে রবীন্দ্র জাদেজার খেলবেন। সুরিয়ার জন্য তাই একমাত্র অপশন হল ৪ নম্বর পজিশন। যে পজিশনের খেলার দৌড়ে তিনি ছাড়াও আবার রয়েছেন সাঞ্জু স্যামসন, শ্রেয়াস আইয়ার আর তরুণ ব্যাটার তিলক ভার্মা।

সবাইকে ডিঙ্গিয়ে তাই সুরিয়ার জন্য বিশ্বকাপ একাদশের সুযোগ পাওয়াটা কঠিনই। তবে মূল ব্যাপারটা হচ্ছে, ভারতের টিম ম্যানেজমেন্টের ভাবনায় সুরিয়া রয়েছেন ভালভাবেই। আর এটিই এ ব্যাটারকে একটা দারুণ সুযোগের মঞ্চের দ্বার উন্মোচন করে দিতে পারে।

তবে ভারতের চাওয়ায় আবার এটাও রয়েছে, চার নম্বরে তাকেই নেওয়া হবে, যিনি বড় ইনিংস খেলতে পারেন, চাপের মুখে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। কিন্তু ২৬ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে সুরিয়া পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেলেছেন মাত্র দুটি। বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে তাই ভারতের একাদশে কোনোভাবেই অটোমেটিক চয়েসের কাতারে থাকছেন না সুরিয়াকুমার যাদব।

তবে ওয়ানডে ক্রিকেটের টেম্পারমেন্ট ধরতে পারলে এই সুরিয়াই হতে পারেন এই বিশ্বকাপের ট্রাম্পকার্ড। সে ক্ষেত্রে অধিক শট খেলার প্রবণতাটা তাঁকে কমাতে হবে। একদিনের ক্রিকেটে বড় ইনিংস খেলার পথে যে ধৈর্য্য থাকা প্রয়োজন, সেটি রপ্ত করতে হবে। তবেই একদিনের ক্রিকেটে সফল হবেন তিনি।

নতুবা টি-টোয়েন্টির নাম্বার ওয়ান ব্যাটার ওয়ানডে ক্রিকেটের আক্ষেপের গল্পই লিখতে থাকবেন। তবে ধারাবাহিক ব্যর্থতায় সে গল্পের কলেবর নিশ্চয়ই বাড়াতে পারবেন না সুরিয়াকুমার যাদব। ভারতীয় ক্রিকেটে তারুণ্যের ভিড়ে যে কাউকে ছুঁড়ে ফেলা তো আর নতুন ঘটনা নয়।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...