মাহি, আরেকটা বছর খেলে যান

জন্মটা ভারতের ছোট্ট শহর রাঁচিতে। সেখানেই বেড়ে উঠেছেন। ধোনির বেড়ে ওঠা থেকে শুরু করে ২০১১ সালের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক হয়ে ওঠার কাহিনি প্রায় সবারই জানা। তবে ২০০৮ সাল থেকে রাঁচির চেয়েও বেশি ধোনির নামের সাথে জড়িয়েছে চেন্নাই। চেন্নাইয়ের মানুষের কাছে তাদের প্রিয় মাহি বিশেষ কিছু। এরই মধ্যে চেন্নাইয়ের সমর্থকরা ধোনিকে 'চেন্নাইয়ের রজনীকান্ত' বলে স্বীকৃতি দিয়ে দিয়েছে।

জন্মটা ভারতের ছোট্ট শহর রাঁচিতে। সেখানেই বেড়ে উঠেছেন। ধোনির বেড়ে ওঠা থেকে শুরু করে ২০১১ সালের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক হয়ে ওঠার কাহিনি প্রায় সবারই জানা। তবে ২০০৮ সাল থেকে রাঁচির চেয়েও বেশি ধোনির নামের সাথে জড়িয়েছে চেন্নাই। চেন্নাইয়ের মানুষের কাছে তাদের প্রিয় মাহি বিশেষ কিছু। এরই মধ্যে চেন্নাইয়ের সমর্থকরা ধোনিকে ‘চেন্নাইয়ের রজনীকান্ত’ বলে স্বীকৃতি দিয়ে দিয়েছে। চেন্নাই তাকে এতটাই নিজের করে নিয়েছে যে চেন্নাই সমর্থকরা ধোনিকে ‘থালাইভা’ বলে ডাকেন আদর করে। যার অর্থ নেতা।

বয়সটা ৪১ পেড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছেড়েছেন তিন বছর হতে চলল। আইপিএলের প্রতি মৌসুমের শেষ প্রান্তে এসেই ধোনির সামনে একটি প্রশ্ন এসে হাজির হয়- ‘এবারই কি শেষ?’। ধোনি কখনোই সরাসরি উত্তর দেন না। ছেড়ে দেন সময়ের হাতে। এবারও তাই দিয়েছেন। আগামী বছরও ৪২ বছরের ‘তরুণ’ ধোনিকে আবারো চেন্নাইকে নেতৃত্ব দিতে দেখা যাবে কিনা সেটিই এখন বড় কৌতুহলের জায়গা।

বন্ধনটার শুরু হয়েছিল ২০০৮ সালে। ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ককে নিলাম থেকে ছয় কোটি রুপিতে কিনে নেয় চেন্নাই সুপার কিংস। পরের টুকু শুধুই ইতিহাস। শুধু চেন্নাই নয়, পুরো আইপিএলেরই ব্র্যান্ড এম্বাসেডর বলা যায় মাহেন্দ্র সিং ধোনিকে। গত ১৫ বছরে চেন্নাই দল কিংবা পুরো টুর্নামেন্টে ধোনির প্রভাব শুধুই বেড়েছে। ব্যাট কিংবা গ্লাভস হাতে হয়তো বয়সের কারণেই ধার কিছুটা কমেছে। তবে ধোনির ক্রিকেটীয় মস্তিষ্কের দেখা মেলে এখনো।

এ যেন এক অদ্ভুত বিষয়। দর্শকরা সাধারণত স্টেডিয়ামে আসেন কিংবা খেলা দেখতে পর্দার সামনে বসেন ব্যাটারের ব্যাটিং দেখতে কিংবা বোলারদের দুর্দান্ত ডেলিভারি গুলো দেখতে। কিন্তু ধোনি এমন এক দর্শকশ্রেণী তৈরি করতে পেরেছেন যারা খেলা দেখেন ধোনিকে দেখার জন্য। ২২ গজে অধিনায়ক ধোনির কার্যকলাপ প্রত্যক্ষ করার জন্য। ঠিক এই জায়গাটাতেই যেন ধোনি আলাদা সবার চেয়ে।

শুধু চেন্নাই কেন। আইপিএলে ধোনি পুরো ভারতবর্ষের যেই মাঠেই খেলতে যান না কেন প্রতিপক্ষের দর্শকরাও সমস্বরে ‘ধোনি ধোনি’ আওয়াজে মুখোরিত করে রাখেন পুরো স্টেডিয়াম। এমনকি নিজের দলের চেয়েও ধোনির নামে জয়ধ্বনিটাই বেশি দিয়ে থাকেন চেন্নাইয়ের প্রতিপক্ষের সমর্থকরাও। প্রায় ১৪০ কোটি মানুষের দেশে সবার প্রিয় জায়গাটা দখল করে থাকাটা চাট্টিখানি কথা নয়।

ভারতে শচীন টেন্ডুলকারের পর মাহেন্দ্র সিং ধোনিই কেবল পেরেছেন শতকোটি মানুষের মনের মনিকোঠায় জায়গা করে নিতে। ভারতজুড়ে ধোনির জনপ্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার দুঃসাহসও বোধহয় কেউ দেখাতে চাইবেন না। ক’দিন আগে গুজরাট অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া তো বলেই ফেললেন, ‘ধোনিকে ঘৃণা করতে হলে আপনাকে শয়তান হতে হবে।’

কিন্তু প্রশ্নটা হলো আর কতদিন খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে দেখা যাবে সবার প্রিয় ধোনিকে। চেন্নাই দলে ধোনির ভূমিকাটা একজন খেলোয়াড় কিংবা একজন অধিনায়কের চেয়ে ঢের বেশি। একজন খেলোয়াড় যিনি কিনা বয়সের ভারে ব্যাট হাতে খুব বেশি ঝলক দেখাতে পারছেন না, যিনি কিনা ২২ গজে আগের মত দৌড়াতে পারছেন না, যাকে কিনা ব্যাটার হিসেবে খেলেও ব্যাট করতে হচ্ছে আট নম্বরে; ধোনি ব্যাতিত অন্য কারো ক্ষেত্রে এটা হয়তো ভাবাও যায় না। কিন্তু ধোনির ক্ষেত্রে ভাবা যায়। কারণ ব্যাট হাতে নিজের সেরা সময় বহু আগে পেছনে ফেলে এলেও এখনো মাঠে জাদু দেখান ধোনি।

অধিনায়ক ধোনির মধ্যকার সেই ‘এক্স’ ফ্যাক্টরটা যে আর কারো মধ্যেই নেই। সেই কারণেই কাগজে কলমে শক্তিশালী দল না গড়েও সবার আগেই ফাইনালে পৌঁছেছে চেন্নাই। নিলামের টেবিলে ঝড় না তুলেও মাঠের খেলায় ঠিকই সবাইকে টেক্কা দিচ্ছে দশমবারের মত আইপিএল ফাইনাল খেলতে যাওয়া সিএসকে।

তবে বয়সটা তো আর থামিয়ে রাখা যায় না। ধোনির ক্ষুরদার ক্রিকেটীয় মস্তিষ্ক পুরোদমে সচল থাকলেও তাঁর শরীরটা কতদিন সায় দেবে সেটিই ভাবনার জায়গা। আর মাস খানেক পরেই যে ৪২-এ পা দেবেন ধোনি। ব্যাট হাতে এখনো নিজের ঝলক কিছুটা দেখিয়ে চললেও ধোনির শরীরটা যে সায় দিতে চাচ্ছে সেটি স্পষ্ট।

তাই সব ভালো কিছুরই শেষ আছে মেনে নিয়ে হয়তো খেলোয়াড়ি জীবনের ইতি টানতে হবে ধোনিকে। তবে ধোনির বিদায়ের জন্য কি চেন্নাই প্রস্তুত? একজন অধিনায়ক ধোনির ওপর চেন্নাই খুব বেশি করে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। তাই খেলা ছাড়ার আগে চেন্নাইয়ের পরবর্তী অধিনায়ককে গড়ে তোলার কাজটা নিশ্চিতভাবেই করে রেখে যেতে চাইবেন ধোনি।

গত মৌসুমেই সেই কাজটা করতে চেয়েছিলেন ধোনি। জাদেজার হাতে অধিনায়কত্ব তুলে দিয়ে শুধুমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে খেলতে চেয়েছিলেন। এক মৌসুম অধিনায়ক জাদেজাকে মাঠ থেকে সমর্থন জুগিয়ে ভবিষ্যতের জন্য হয়তো নিশ্চিন্ত হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেটি আর হয়নি। মাত্র আট ম্যাচ পরেই জাদেজা নিজেই আবার অধিনায়কত্ব ফিরিয়ে দেন ধোনিকে। নিজের এবং দলের বাজে ফর্মের কারণেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন জাদেজা।

সেই ধোনি এবারের মৌসুমে শুরু থেকেই করছেন অধিনায়কত্ব। গত মৌসুমে নয় নম্বরে থেকে শেষ করা চেন্নাই এবার সবার আগে নিশ্চিত করেছে ফাইনাল। ১০ম আইপিএল ফাইনালে নিজের পঞ্চম শিরোপা জেতার জন্য ২৯ মে মাঠে নামবেন ধোনি। শিরোপা জিতে শেষ করতে পারলে এর চেয়ে দারুণ কিছু তো ধোনির জন্য হতেই পারে না।

তবে এখানেও কিন্তু আছে। ধোনিকে বিদায় দেবার মত সময় কি চেন্নাইয়ের হয়েছে কিনা। চেন্নাই ফ্রাঞ্চাইজি নিশ্চিতভাবেই চাইবে আরেকটা মৌসুম খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে থাকুন ধোনি। সেই মৌসুমে অন্য কেউ অধিনায়কত্ব করে গড়ে উঠুক ভবিষ্যতের জন্য। ধোনির ছায়ায় বেড়ে উঠে দীর্ঘ সময়ের জন্য নেতৃত্ব দিক চেন্নাইকে। ধোনি অবশ্য এখনো কিছু ঠিক করেননি বলেই জানিয়েছেন। তবে ধোনি আরেকটা মৌসুম খেলে গেলে সেটা চেন্নাই তো বটেই পুরো আইপিএলের ব্র্যান্ড ইমেজের জন্য হবে অসাধারণ এক বিষয়।

একদিন না একদিন তো মাঠ ছাড়তেই হবে। প্রকৃতি যে বড্ড নিষ্ঠুর। প্রকৃতিতে যা কিছু ভালো তার সবই যেন দ্রুতই ফুরিয়ে যায়। ধোনিকেও একদিন শেষ করতে হবে। ধোনি নিজেও জানেন সেটা। হয়তো শেষ বেলায় ধোনি তাঁর পছন্দের গান ‘ম্যা পাল দো পাল কা শায়ার হু’ গেয়ে উঠবেন। তবে  তখনও দর্শকরাও হয়তো প্রিয় মাহিকে আর কিছুদিন, কয়েকটা দিন মাঠে দেখার আকুতি জানিয়েই যাবেন।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...