ওয়ানডে ক্রিকেটের কি তবে সমাপ্তি ঘটতে চলেছে? মারকাটারি টি-টোয়েন্টি, ইংল্যান্ডের আবিষ্কৃত একশো বলের ক্রিকেট কিংবা নবীনতম দলগুলোর টি-টেন লিগ সেই ভয়ের রেশ জাগায়। ওয়ানডে ক্রিকেটের কফিনে ঠুকে দেয়ার জন্য শেষ পেড়েক হিসেবে হাজির হয়েছে, পিএসএল কিংবা আইপিএল এর ছোট বাউন্ডারি, ব্যাটিং উইকেট এবং অজস্র রান।
লাল বল এবং সাদা বলের ক্রিকেটকে খুব সহজে আলাদা করা যায়। বল, জার্সি কিংবা সময়ের ভিন্নতার সাথে, ভিন্নতার দেখা মেলে মানসিকতায়। তবে সাদা বলের দুই ফরম্যাট, ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি এর মধ্যে ভিন্নতা নির্ধারণ বেশ কঠিন। ২০১৫ বিশ্বকাপের পরে ইংল্যান্ডের কল্যানে ওয়ানডে ক্রিকেটে যেই পরিবর্তন এসেছে, সে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে আলাদা কিছু নয়। দর্শকও মাঠে রান দেখতে চান। বোলারদের বলির পাঠা বানিয়ে একেকটা টুর্নামেন্ট হয়ে উঠছে রান করার মহোৎসব।
গত কয়েক বছরে সে কারণেই ওয়ানডে ক্রিকেটের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন জেগেছে। ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের গুনগত পার্থক্য কি? কোন পরিচয়ে পরিচিত হবে ওয়ানডে ক্রিকেট? তিন ঘন্টার টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের বড় সংস্করণ কেন দর্শক সাত ঘন্টা খরচ করে দেখবে? ২০২৩ বিশ্বকাপও সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়েছে। বরং আয়োজক দেশের ‘মিসম্যানেজমেন্ট’ কিংবা টুর্নামেট জুড়ে দর্শক খরা সেই আগুনে কেবল ঘি-ই ঢেলেছে।
বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক প্যাট কামিন্সকেও ওয়ানডে ক্রিকেটের অস্তিত্বের প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে। সদুত্তর মেলেনি। ওয়ানডে ক্রিকেটকে কেবলমাত্র বিশ্বকাপে বন্দী করে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের প্রসারের মতামতও এসেছে সাবেক ক্রিকেটার কিংবা ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের থেকে। সামনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, তার আগে পিএসএল এবং আইপিএলে রান উৎসব, কি অপেক্ষা করছে ওয়ানডে ক্রিকেটের ভাগ্যে ?
অভিষেক শর্মা, ফ্রেজার ম্যাকগার্ক কিংবা ট্রাভিস হেডরা ব্যাটিং করতে নামছেন প্রতি বলে বাউন্ডারি হাঁকানোর উদ্দেশ্যে। ‘কে কত রান করতে পারেন’ পরিবর্তিত হয়েছে ‘কে কত দ্রুত রান করতে পারেন’ টার্ম দিয়ে। ধারাবাহিকভাবে রান করতে পারা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের প্রাথমিক চাহিদার আসন থেকে সরে গিয়েছে। বিলীন হচ্ছে ব্যাটিংয়ে ‘অ্যাঙ্কর’ নামক দায়িত্ব, প্রশ্ন উঠছে বিরাট-বাবরদের ব্যাটিংয়ের ধরণ নিয়েও। প্রশ্নের যাতাকল থেকে বাদ পড়ছেন না ওয়ার্নার কিংবা বাটলারের মত প্রতিষ্ঠিত তারকারাও। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ব্যাটিং এখন একপাক্ষিক, কেবলমাত্রই আগ্রাসী।
টি-টোয়েন্টি এর আগ্রাসনের মাঝেই সম্ভবত লুকিয়ে আছে ওয়ানডে ক্রিকেটের অস্তিত্ব রক্ষার রসদ। ম্যাকগার্ক-অভিষেকরা প্রথম বল থেকে ছক্কা হাঁকানোতে পারদর্শী কিন্তু পিছিয়ে যান স্ট্রাইক রোটেশন করার দরকার হলে। বিরাট-বাবররা স্ট্রাইক রোটেশনে পারদর্শী, পিছিয়ে যাবেন ‘ষষ্ঠ গিয়ার’-এ ব্যাটিংয়ের প্রয়োজনে।
অতি আগ্রাসন এবং স্ট্রাইক রোটেশনের মিশেল বেশ দুরূহ ব্যাপার। টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ানডে ক্রিকেটের পার্থক্যও তৈরি হতে পারে এখানেই। একশো বিশ বলের ক্রিকেটে নিজের উইকেটের যতটা অবমূল্যায়ন করা সম্ভব, তিনশো বলের ক্রিকেটে সেটি সম্ভব হওয়া বেশ অসম্ভব। ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রতিটা পাওয়ার প্লে-র আলাদা মেজাজ রয়েছে, সেই মেজাজ অনুযায়ী ব্যাটিংয়ের জন্য ভিন্ন ধরনের ব্যাটারের প্রয়োজন। এবি ডি ভিলিয়ার্সরা প্রতিদিন আসেন না।
টি-টোয়েন্টির আগ্রাসন ওয়ানডে ক্রিকেটের অস্তিত্বের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। টি-টোয়েন্টি যত আগ্রাসী হবে, ওয়ানডে ক্রিকেটের পরিচয় তত স্পষ্ট হয়ে উঠবে। উত্তর মিলবে ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের গুনগত পার্থক্যের। সম্ভবত অস্তিত্বও রক্ষা পাবে।