বাংলাদেশের ক্রিকেটে একজন নয়া তারকার উত্থান হলো। ভাবা হচ্ছে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ব্যটিং লাইন আপের সবচেয়ে বড় তারকা হতে পারেন মাহমুদুল হাসান জয়। ইতোমধ্যেই জয় সেই আশার পালে বাতাস দিয়েছেন। বলা যেতে পারে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আরো সময় কাটালেই জয় আসল চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন। কিন্তু ক্যারিয়ারের শুরুতেই কঠিন পরীক্ষায় ফেলে দেয়া জয়কে আপনি বিচার করবেন কোন মাপ কাঠিতে?
চিরকাল ব্যাটিং করেছেন মিডল অর্ডারে। এমনকি জাতীয় দলে আসার আগে খুব বেশি প্রথম শ্রেণির ম্যাচও খেলেননি। প্রথমত সাদা পোশাকের ক্রিকেট সর্বোচ্চ পর্যায়ে খুব বেশি খেলেননি, দ্বিতীয়ত ক্যারিয়ারে কখনোই ওপেন করেননি জয়। অথচ জয় তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারটা শুরুই করেছেন এই দুটি কাজ দিয়ে।
গতবছর পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট দলে ডাক পেলেন। ভাবা হচ্ছিল বাংলাদেশের হয়েও মিডল অর্ডারের ব্যাটিং করবেন জয়। তবে পরে শোনা গেল বাংলাদেশ দল আসলে তাঁকে পরিকল্লনা করছে ওপেনার হিসেবে। একুশ বছরের সদ্য কৈশর পেরেনো এক তরুণ। তখনো সেভাবে সর্বোচ্চ পর্যায়ের ঘরোয়া ক্রিকেটও খেলননি। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলের অন্যতম সদস্য হিসেবে অবশ্য আগে থেকেই নজর ছিল তাঁর উপর। ফলে জাতীয় দলে আসতে খুব বেশি সময় লাগেনি।
তবে প্রশ্ন ছিল তাঁর পজিশন নিয়ে। এমন তরুণ একজন ক্রিকেটারকে তাঁর ক্যারিয়ারের শুরুতেই এত বড় চ্যালেঞ্জ দেয়া কী ঠিক হবে? টেস্ট ক্রিকেট, নতুন ওই লাল বলটা মোকাবেলা করার চ্যালেঞ্জ। সদ্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা দেয়া একটা ব্যাটসম্যানের জন্য বিশাল বড় চ্যালেঞ্জ। তাও আবার যার কিনা সেভাবে নতুন বল মোকাবেলা অভিজ্ঞতাই ছিল না।
তবুও জয় চ্যালেঞ্জটা নিলেন, নিজের টেকনিকের উপর পুরো ভরসা রাখলেন। যদিও নিজের অভিষেক টেস্টটা একেবারেই হয়তো ভুলে যেতে চাইবেন জয়। পাকিস্তানের বিপক্ষে সেই ম্যাচে দুই ইনিংসে করেছিলেন মাত্র ০ ও ৬ রান। তবে বাংলাদেশ দল তাঁর উপর ভরসা রেখেছিল, জয় নিজেও বিশ্বাসটা রেখেছিলেন হয়তো।
পরের টেস্টেই বাংলাদেশের ইতিহাস গড়ার অন্যতম কারিগর ছিলেন এই ব্যাটসম্যান। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের কঠিনতম কন্ডিশন। নতুন বলে টিম সাউদি, ট্রেন্ট বোল্ট কিংবা কাইল জেমিসনের মত ভয়ংকর বোলারদের সামনে দাঁড়ানোর সাহসটা কীভাবে যেন জয় করে ফেলেছিলেন।
ওপেন করতে নেমে তাঁর ব্যাট থেকে আসলো ৭৮ রানের ইনিংস। তবে সেই ইনিংসের গভীরতা ছিল অনেক। কেননা জয় সেই ইনিংসে খেলেছিলেন ২২৮ টি বল। এই একটা ইনিংস ড্রেসিং রুমের আবহাওয়া বদলে দিয়েছিল। অন্য ব্যাটসম্যানদের মধ্যেও বিশ্বাসটা ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন জয়। এরপর শান্ত, মুমিনুল, লিটনরা মিলে বাংলাদেশকে এনে দিয়েছিলেন ৪৫৮ রানের বিশাল সংগ্রহ।
এরপর এবার দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে তো রীতিমত অবিশ্বাস্য এক ইনিংস খেলে ফেললেন। ডারবানে জয়ের স্বভাবজাত ব্যাটিংই দেখা গেল। শুরুতে মাটি কামরে উইকেটে পড়ে থাকলেন। ২৬৯ তম বলে গিয়ে পেলেন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির দেখা। অসাধারণ এক ইনিংস। তবে অসাধারণ একটা ইনিংসে কীভাবে ইতিহাসের অন্যতম সেরা ইনিংসে পরিণত করতে হয় সেটাই দেখালেন জয়।
বাংলাদেশের নবম উইকেট পড়ে যাওয়ার পর দেখা গেল তাঁর হাতে আসলে কতরকমের শট। পুরোটা ইনিংস তিনি নিজেকে দমিয়ে রেখেছিলেন শুধু উইকেটে পড়ে থাকবেন বলে। কিন্তু যখন দেখলেন তাঁর পরে আর কেউ রান করার মত নেই তখনই হাত খুললেন। সেঞ্চুরির পর যেই ৩৭ টা রান করেছেন তাতেই আসলে প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে জয় কত বড় মাপের ব্যাটসম্যান।
জয় সবেমাত্র টেস্ট ক্রিকেট খেলা শুরু করেছেন। একসময় হয়তো রঙিন পোশাকের ক্রিকেটেও বাংলাদেশের অন্যতম বড় ভরসার নাম হয়ে উঠবেন তিনি। যদিও জয় সবসময় ওপেনই করবেন নাকি মিডল অর্ডারে ফিরবেন সেই আলোচনা একেবারে থেমে যায়নি। তবে যেখানেই খেলুক না কেন জয়ের এই জয়যাত্রা চলে থাকুক।