বিশ্বকাপ-হতাশা থেকে এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে সরাসরি

বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছিল প্লে অফে খেলার মাধ্যমে। লাওসের বিপক্ষে তাদের মাটিতে ১-০ গোলে জয়লাভের পর দেশের মাটিতে গোলশুন্য ড্র করে সরাসরি বাছাইপর্বে নাম লেখায় লাল সবুজ প্রতিনিধিরা। করোনা ভাইরাসের কারণে এরপর নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে কাতার বিশ্বকাপ ২০২২ বাছাইপর্বের খেলা শেষ করেছে জামাল ভূঁইয়ার দল।

৮ ম্যাচ খেলে ২ ড্রয়ের মাধ্যমে ২ পয়েন্টই অর্জন বাংলাদেশের। বাছাইপর্বের খেলাগুলো আবার চীন এশিয়ান কাপ ২০২৩ আসরেরও বাছাইপর্ব ছিল। মোটে ২ পয়েন্ট পাওয়া বাংলাদেশের জন্য এশিয়ান কাপের সরাসরি খেলার স্বপ্ন দেখাটাও ছিল বাড়াবাড়ি। কিন্তু সেখান থেকে জেমি ডে’র শীষ্যদের অনেকটা টেনে তুলেছে এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (এএফসি)। বলা যায় করোনায় কপাল খুলে যায় বাংলাদেশের।

মূলত উত্তর কোরিয়ার নাম প্রত্যাহার করে নেওয়া, কাতার বিশ্বকাপ স্বাগতিক, এশিয়ান কাপ স্বাগতিক চীনের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে সরাসরি সুযোগ পাওয়া, এসকল বিষয়গুলো বাংলাদেশের সরাসরি এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে খেলতে সহায়তা করেছে। আর সে কারণেই ওমানের বিপক্ষে পরাজয়ের পর যে কষ্ট ছিল ফুটবলারদের মনে তার সবই কেটে গেছে।

চার দশকেরও বেশি সময় পর আবারো এশিয়ান কাপের কাপের বাছাইপর্বে খেলার সুযোগ এসেছে বাংলাদেশের সামনে। এর আগে ১৯৮০ সালে কুয়েতে প্রথম ও একবারের মতো এশিয়ান কাপের মূল পর্ব খেলেছিল বাংলাদেশ দল। এরপর আর মূল পর্বে খেলা হয়ে ওঠেনি। মাঝে বাছাইতেও অংশ নেওয়ার সুযোগ পায়নি। এখন পূনরায় আবার বাছাইপর্বে ফিরছে বাংলাদেশ দল। যা হতাশার মাঝে এক ফোটা বৃষ্টির মতোই।

বিশ্বকাপ বাছাইয়ের গ্রুপে পঞ্চম হয়েও বাংলাদেশকে খেলতে হবে না প্লে অফ। সরাসরি বাছাই পর্বে খেলার সুযোগ পেয়েছে সব গ্রুপের পঞ্চম হওয়া দলগুলোর মধ্যে সেরা তিনে থাকার কারনে। এশিয়ান কাপে ৩৫ নম্বর দল হিসেবে বাছাইপর্ব খেলবে বাংলাদেশ দল। এর মাধ্যমে দিয়ে বাংলাদেশের আরও ৬টি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেতে যাচ্ছে। বিশ্বকাপ ও এএফসি কাপ বাছাইপর্বে ১ থেকে ১৩ নাম্বার অবস্থানে থাকা দলগুলো খেলবে বিশ্বকাপের বাছাই ও এশিয়ান কাপের মূলপর্বে।

এরপরের ১৪ থেকে ৩৫ নম্বর দল সরাসরি অংশ নেবে এশিয়ান কাপের বাছাইয়ের খেলায়। ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, চাইনিজ তাইপে ও গুয়াম এই চারটি দেশকে খেলবে হবে প্লে অফের ম্যাচে। চারটি দলের মধ্যে দুইটি দল যোগ দেবে মূল বাছাইয়ে।

এরপর ২৪টি দল নিয়ে হবে এশিয়ান কাপের বাছাই পর্বের খেলা অনুষ্ঠিত হবে। ৬টি গ্রুপে ভাগ হয়ে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিতে অংশ নেবে দলগুলো। সে হিসেবে প্রতিটি দল ৬টি করে ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবে। সে হিসাবে বাংলাদেশের প্রাপ্তির খাতাটা একেবারে শুন্য নয়। তবে আশা জাগিয়ে শুরু করেও শেষটা হয়েছে হতাশা দিয়েছে। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে আট ম্যাচের মধ্যে খুব একটা সাফল্য বলার মতো নয়।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১-০ গোলের পরাজয় দিয়ে শুরু। এই ম্যাচে গোল হজম করা ছাড়া সবই করতে পেরেছে বাংলাদেশ। এরপর কাতারের বিপক্ষে ২-০ গোলে হারলেও লড়াইটা করেছিল বুক চিতিয়ে। তবে প্রথম দুই ম্যাচের পারফরম্যান্সে আত্মবিশ্বাসী দলের ছাপটা পড়েছিল কলকাতার সল্ট লেক স্টেডিয়ামে। ভারতের বিপক্ষে বাছাইয়ের তৃতীয় ম্যাচে সাদ উদ্দিনের হেড থেকে করা অসাধারণ গোল নিস্তব্ধ করে দিয়েছিল স্বাগতিক দর্শকদের। প্রথমার্ধের এই গোলের পর যখন জয়ের খুব কাছাকাছি বাংলাদেশ তখনি ভারতের আদিল খানের গোলে জয়বঞ্চিত হয় লাল সবুজ জার্সিধারীরা। এই ম্যাচটিকে তাই মনের মতো না বলে কোন উপায় নেই।

চতুর্থ ম্যাচে ওমানের মাসকটে স্বাগতিক দলের কাছে ৪-১ গোলে হারটাকে বড় পরাজয় হিসেবেই দেখা হয়। পঞ্চম ম্যাচে স্বাগতিক কাতারের কাছে ৫-০ গোলের সবচেয়ে বড় পরাজয়ের সঙ্গী হতে হয় বাংলাদেশকে। এরপরের ম্যাচগুলো নিজেদের মাটিতে খেলতে না পেরে কাতারেই খেলতে হয়েছিল। দেশের বাইরে খেলার অভ্যস্ততাও তৈরি হয়েছে এবার। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ফলাফলের পর এবার এশিয়ান কাপে কেমন করবে বাংলাদেশ সেটাই এখন দেখার বিষয়।

  • সরাসরি সুযোগ পাওয়া ১৩টি দেশ

সিরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ইরান, সৌদি আরব, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, চীন, ইরাক, ভিয়েতনাম, লেবানন ও কাতার।

  • সরাসরি এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে সুযোগ পাওয়া ২২ দেশ

তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, কুয়েত, বাহরাইন, তুর্কমিনিস্তান, জর্ডান, প্যালেস্টাইন, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, কিরগিজস্তান, ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মঙ্গোলিয়া, আফগানিস্তান, হংকং, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মিয়ানমার, ইয়েমেন ও বাংলাদেশ।

  • প্লে অফ খেলা ৪টি দেশ

ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, চীনা তাইপে ও গুয়াম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link