টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ যখন ২০০৭ সালে শুরু হয়, আফগান ক্রিকেট তখন কোথায় ছিল মনে করতে পারেন? আইসিসি ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট লিগের পঞ্চম ডিভিশনে। ১৪ বছর পরে আজ ক্রিকেটের রূপকথার আরেক নাম হলো আফগানিস্তান। সরাসরি এই বিশ্বকাপে তারা সুযোগ পায় শ্রীলঙ্কা, এমনকি বাংলাদেশেরও আগে সুপার টুয়েলভে।
দেশের রাজনৈতিক সংকটের টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যেও আফগানিস্তান এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে চোখ টানার মত দলগুলোর মধ্যে একটা। আমিরশাহীর কন্ডিশন ও পিচ আফগানদের হাতের তালুর মত চেনা পাকিস্তানের মতোই। সেই কন্ডিশনে আবারও আলো ছড়ানোর অপেক্ষাতেই রশিদ, মুজিব, নবিরা। টি-টোয়েন্টি র্যাংকিংয়ে শ্রীলঙ্কা বা ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ও আগে থাকা দলটার শেষ চার বছরের পারফরমেন্স যদি দেখা যায় সত্যিই চোখ কপালে তোলার মত।
শেষ ৩৫টা ম্যাচে নবিরা জয় ছিনিয়ে এনেছেন ২৮ ম্যাচে, এরমধ্যে একবার টানা ১১ ম্যাচে ও একবার টানা ১২ ম্যাচে জয়ের রেকর্ড তাদের পকেটে। দল নির্বাচন নিয়ে ও শেষ মুহূর্তের অধিনায়ক বদল নিয়ে যতই বিতর্ক থাকুক, এই বিশ্বকাপে সব ঝড় ঝঞ্ঝা কাটিয়ে নিজেদের সেরাটা দিতে পারলে আফগানিস্তান কিন্তু এই বিশ্বকাপের ‘ডার্ক হর্স’।
- শক্তিমত্তা
আফগান দের আসল শক্তি যে তাদের বিশ্ব বিখ্যাত স্পিন অ্যাটাকে এখন যে নতুন খেলা দেখা শুরু করছে সে ও জানে। এমন দুর্ধর্ষ বিশ্বমানের স্পিন অ্যাটাক থাকলে যেকোনো দলই গর্ব হবে। রশিদ, মুজিব ও নবি এই তিন প্রধান স্পিনারের বর্তমানে বোলার দের রাঙ্কিং এ আছেন যথাক্রমে ৩, ৫ ও ২১ নম্বরে।
আর অধিনায়ক মোহাম্মদ নবী শুধু বল হাতে নয়, ব্যাট হাতেও ফিনিশার হিসেবে দলের প্রধান ভরসা, অলরাউন্ডার রাঙ্কিং এ নবির স্থান বিশ্বে ২ নম্বরে। আর এই কয়েক বছরে লেগ স্পিনার হিসেবে বিশ্ব ক্রিকেটে নিজেকে একটা অনন্য জায়গায় নিয়ে গিয়েছেন রশিদ খান, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের এই ভয়ঙ্কর আফগান স্পিনার যেকোনো দলের ব্যাটসম্যানদের কাছেই এক বড় ত্রাস।
লেগস্পিন, গুগলি, টপ স্পিন, ফ্লিপার সবরকমের অস্ত্রই মজুত থাকা রশিদের জন্যই কিছুটা আফগানিস্তান ক্রিকেট বিশ্বের দরবারে আরো পরিচিতি পেয়েছে। বিশ্বজোড়া সমস্ত টি-টোয়েন্টি লিগে রশিদের চাহিদাও হটকেকের মতোই। এছাড়াও দলে রয়েছে আরেক মিস্ট্রি স্পিনার কাইস আহমেদ, কিছুটা অপরিচিত এই কাইস কিন্তু ভবিষ্যতে দলের সম্পদ হতে পারেন। ব্যাটিংয়ে রহমানুল্লা গুরবাজ ও হাজরাতুল্লা জাজাই এর ঝোড়ো ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি নবী ও নাজিবুল্লা জাদরানের দিকে অনেকটা তাকিয়ে থাকবে আফগানরা।
- দুর্বলতা
শাহজাদ, জাজাই, গুরবাজ, নবী, আসগার, নাজিবুল্লাদের নিয়ে আফগান ব্যাটিং নিজেদের দিনে যথেষ্ট ভয়ঙ্কর হলেও ধারাবাহিকতার অভাব আফগানি ব্যাটিংয়ের মূল সমস্যা। প্রতিটা ম্যাচে নিয়মিত কতোটা বড় স্কোর আফগানরা করতে পারবে সে নিয়ে কিছুটা সন্দেহ অবশ্যই থেকে যাচ্ছে। চাপের মুখে বা বড় রান তাড়া করার ক্ষেত্রে শাহজাদদের ব্যাটিং ভেঙ্গে পড়ার নমুনা প্রকাশ করলে কপালে দুর্ভোগ আছে তাঁদের।
এছাড়া শাপুর, দৌলত জাদরান বা হামিদ হাসানের মত বেশ কিছু নামি খেলোয়াড় যতই বিশ্বকাপের দলে থাকুন, বয়সের ভারে ও দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক ম্যাচ না খেলার জন্য কতোটা বিশ্বকাপে সার্ভিস দিতে পারবেন সে বিষয়েও যথেষ্ট সন্দেহ। হামিদ, দৌলতদের দলে নেওয়ার জন্য বিশ্বকাপের মাঝে ভুগতে হতে পারে আফগানিস্তানকে।
- আফগানিস্তান দল ও তাঁদের সম্ভাবনা
বিশ্বকাপের দল ঘোষণার ২১ মিনিটের মাথাতেই অধিনায়ক রশিদ ইস্তফা দেন, বয়স্ক খেলোয়াড়দের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে, অবশ্যই যুক্তিসঙ্গত রশিদের এই স্টান্স। মোহাম্মদ নবিকে অধিনায়ক করে বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া আফগানিস্তান ব্রিগেড কিন্তু আন্তর্জাতিক ম্যাচের অভিজ্ঞতায় অনেক বড় দলের থেকেও অনেক অনেক বেশি এগিয়ে। বহু পুরোনো মুখ এবারেও আফগান দলে।
পুরোনো মুখের পাশাপাশি নতুন তারকারাও কিন্তু নিয়মিত বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়ার দাবিদার। এর মধ্যে পেসার নবীন উল হক এর দিকে অবশ্যই চোখ থাকবে। বিভিন্ন ফ্রাঞ্চাইজি লিগে পরিচিতি মুখ নাভিন ডেথ ওভার বোলিংয়ে ভেরিয়েশন আনতে পারেন, আমিরশাহীর স্লো উইকেটে তাঁর ডেথ ওভার বোলিং খুব কার্যকরী হতে চলেছে।
আফগানিস্তানের ব্যাটিংয়ে মিডল অর্ডার নিয়ে খানিকটা চিন্তা থাকলেও অনেক সমস্যাকে ঢেকে দিতে পারে তাঁদের বোলিং। সব বাঁধা বিঘ্ন কাটিয়ে মরুর দেশে আবারও কী কোনো নতুন রূপকথা লিখবে বারুদের স্তুপ থেকে উঠে আসা আফঘানরা, অপেক্ষা আর কয়েকদিনের।
- আফগানিস্তান স্কোয়াড
মোহাম্মদ নবী (অধিনায়ক), হজরাতুল্লাহ জাজাই, রহমানুল্লাহ গুরবাজ, মোহাম্মদ শাহজাদ, আসগর আফগান, নাজিবুল্লাহ জাদরান, রশিদ খান, গুলবদিন নাইব, হাসমত শাহিদী, সারাফুদ্দিন আশরাফ, মুজিব উর রহমান, নাভিন উল হক, করিম জান্নাত, কেইস আহমেদ, হামিদ হাসান, শাপুর জাদরান, দৌলত জাদরান, উসমান গনি।