টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের হাল হকিকত

আইপিএল জ্বরে ক্রিকেট জনতার এখন এমন অবস্থা যে অন্য দিকে তাকানোর সময়ই নেই। একই খেলার একটি রকমফের যে সাদা পোশাকে এবং লাল বলে (সময় বিশেষে গোলাপি বলে) খেলা হয়, তা এক রকম ভুলতে বসেছি আমরা। তা যাক। গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসানোয় আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু কাল থেকেই যে আবার বিলেতে টেস্ট ম্যাচের আসর বসছে। কাজেই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের হাল হদিশ নিয়ে একটু সময় ব্যয় করাই যায়।

এই মুহূর্তে টেবিলের টঙে যে তিনটি দল রয়েছে তারা হলো, যথাক্রমে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারত। অস্ট্রেলিয়া সবে দুটি সিরিজ খেলেছে। একটি ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। অপরটি পাকিস্তানে। দুটি সিরিজেই জয় পেয়েছে কামিন্সের দল। ৭৫% পয়েন্ট নিয়ে এখন টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের মগডালে তারা। এ মাসের শেষে শ্রীলঙ্কায় যাচ্ছে কামিন্সের দল। দুটি টেস্ট খেলতে।

ঘরোয়া মৌসুমে তারা দুটি টেস্ট খেলবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। দুটি সিরিজই অপেক্ষাকৃত সহজ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। আশা করা যায় ৭৫% পয়েন্ট অন্তত অস্ট্রেলিয়া ঘরে তুলবে। কামিন্সের ছেলেদের প্রধান পরীক্ষা ভারতের মাটিতে চার টেস্টের সিরিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে তিনটি টেস্ট ।

হিসেব বলছে, ভারত এহেন কঠোর অবস্থায় বিদেশী দলকে ধুলো মাখা, ঘূর্ণি পিচ উপহার দিয়ে থাকে। বিশেষত যেখানে এই সিরিজ ফাইনালিস্ট ঠিক করতে বড়ো ভূমিকা নিতে পারে। আর এলগারের দক্ষিণ আফ্রিকা এখন পুনরুত্থানের পথে। তাঁদের দেখে কে বলবে, এস.যে.এন শুনানি, বর্ণবিদ্বেষ, স্পন্সরহীনতায় দলটি এখনও জর্জরিত? কামিন্সের ছেলেদের কাছে তাদের শেষ দুটো সিরিজই ভাগ্য নির্ণায়ক হয়ে দেখা দেবে।

এলগারের দক্ষিণ আফ্রিকা এখনও অবধি তিনটি সিরিজ খেলে ফেলেছে। দুটি ঘরের মাঠে, একটি বাইরে। নিউজিল্যান্ডে গিয়ে সিরিজ পিছিয়ে থেকেও ১-১ রাখা, এবং কোহলির ভারতকে দেওয়া ধোবি পাটকান, খানিক অপ্রত্যাশিত ভাবেই দক্ষিণ আফ্রিকাকে এতো ওপরে পৌঁছে দিয়েছে। পিটারসেন, জেনসেন, অলিভিয়ার, এলগারদের এখন ৭১% পয়েন্ট। তাদের বাকি তিনটি সিরিজ ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে।

ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বিদেশের মাঠে। একই মরসুমে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় ৬টি টেস্ট ম্যাচ মোটেই সহজ নয়। বিশেষত যেখানে ইংল্যান্ড এখন ম্যাকালাম ও স্টোকস বলে বলিয়ান। দুই সফরের মাঝখানে হিসেব মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজের দক্ষিণ আফ্রিকা আসার কথা। যদি ধরেও নি যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ উড়ে যাবে, তবুও দক্ষিণ আফ্রিকার আসল পরীক্ষা অস্ট্রেলিয়াতেই। বিশেষত, একেবারে শেষ সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ব্যাপারটা না কার্যত নকআউট হয়ে যায়।

এবার আসি ভারত এর কথায়। চার সিরিজে ৫৮% পয়েন্ট নিয়ে ভারত এই মুহূর্তে তিনে। কিন্তু আনন্দের কথা এই যে ইংল্যান্ডের মাটিতে একটি টেস্ট বাদ দিয়ে, বাকি দুটি সিরিজের একটিতে তারা খেলবে বাংলাদেশে, অপরটি দেশের মাটিতে। আশা করা যায়, বেগতিক বুঝলে ডাক্তার ডেকে পিচ বানিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে কাবু করা হবে দেশের মাটিতে। কাজেই যদি খুব অপ্রত্যাশিত কিছু না হয়ে যায়, তবে আগামী বছর এই রকম সময় ষ্টার টিভিতে আবারও কাপ জয়ের স্বপ্নে বোনা বিজ্ঞাপন দেখা যেতে পারে।

বাকি টেবিলের মাঝামাঝি ও শেষের দিকে থাকা দলগুলির সম্ভাবনা ক্ষীণ। কানার মধ্যে ঝাপসা পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড। পাকিস্তানকে করতে হবে শ্রীলঙ্কা সফর। বাকি দুটি সিরিজ অবশ্য ঘরের মাঠে। ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড আসবে।

তবে, প্রথম তিন সিরিজের দুটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও বাংলাদেশকে পেয়েও যারা এতো পিছিয়ে, এতো তাড়াতাড়ি তারা প্রথম তিনের কপালে ভাঁজ ফেলতে পারবে বলে মনে হয় না। আর নিউজিল্যান্ড শেষ তিন সিরিজের দুটিই খেলবে বাইরে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভালো ফল করতে না পারলে, দেশের মাটিতে শ্রীলংকাকে হারিয়েও কেনের ছেলেদের ফাইনালে যাবার আশা কিঞ্চিত ক্ষীণ। চ্যাম্পিয়নশিপ টেবিলের এখন যা অবস্থা, ইংল্যান্ড কিন্তু আদর্শ ‘পার্টি স্পয়লার্স’ হয়ে দেখা দিতে পারে।

মোদ্দা কথা, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের টেবিলই এই মুহূর্তে চাপা উত্তেজনা তৈরি করছে। এরপর আগামী মাস দশেক ঢিমে আঁচে উত্তেজনা কষা হবে। তারপর ব্যাপারটা ক্রিকেট জনতার কাছে সুস্বাদু হবে কি হবে না, সেটা সময়ই বলবে। অবশ্য, আজকাল তো ফাস্ট ফুডেরই রমরমা!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link